পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sግo বলতাম না । তোমরা বড়ো হয়েছ, কলেজবিভাগে প্রবেশ করেছ, মানবজাতির দুরূহ দায়িত্বের দুর্গম পথে সদ্য তোমরা পা দিয়েছ, কিন্তু যাত্রার জন্যে এখনও মন প্রস্তুত হ’ল না কি ? মোহাবেশ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পৌরুষের সঙ্গে সমস্ত সমস্তাকে তার সকল গ্লানিসত্ত্বেও স্বীকার করে নাও । এই পণ করে তোমাদের চলতে হবে—পরাস্ত যদি হতেই হয়, তবে বিরুদ্ধতার আঘাতকে সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রত্যাখ্যান করতে করতেই মরব। অর্থাৎ কাপুরুষের মতো প্রতিকুল অবস্থার কাছে হাল ছেড়ে দিয়ে মরব না--অথবা নিৰ্ব্বোধের মতো নিৰ্ব্বিচারে আত্মহত্যার পথে ছুটব না। ভাবপ্রবণতা আছে আমাদের দেশে অতি পরিমাণে, হারাবেগ অতি সহজেই আমাদের মনকে অভিষিক্ত করে তোলে। তার উত্তেজনাকে আমরা ব্যবহার করতে চাই নিজেকে কাজে প্রবৃত্ত রাখবার জন্তে । ক্রমে উত্তেজনার মাদকতা হয় মুখ্য, কৰ্ত্তব্য হয় গৌণ। এমন ক’রে নিজেকে না ভুলিয়ে নিছক সত্যের প্রেরণায় কোনো কাজে আমাদের মন যায় না। দেশের একটা কাল্পনিক স্বরূপের অসামান্ত উৎকর্ষের অত্যুক্তি সাজিয়ে তুলে তার পশ্চাতে আমাদের দৈন্ত গোপন ক’রে কেবল লজ্জা আছে, লাভ নেই। অবাস্তবের বাম্পাচ্ছন্ন ভাবালুতার মোহাবেশ কাটিয়ে পুরুষের মতো উজ্জল বুদ্ধির আলোকে দেশের সমস্ত অভাব অসম্পূর্ণত মূঢ়তা কদৰ্যতা সব-কিছুকে স্বম্পষ্ট করে জেনে তৎসত্বেও প্রমাদহীন দৃঢ় সঙ্কল্পের সঙ্গে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করো। যেখানে বাস্তবের ক্ষেত্রে ভাগ্য আমাদের প্রতিমুহূর্ভে অবমানিত করছে সেখানে আপন ঘরগড়া অহঙ্কারে নিজেকে প্রবাসী SN98发 এবং অন্তকে ভোলানো ছেলেমানুষী, দুৰ্ব্বল চিত্তের সেইটেই সব চেয়ে বড়ো দুলক্ষণ । সত্যকার কাজ আরম্ভ করবার মুখে একথা মান চাই যে, আমাদের নিজের সমাজে আমাদের স্বভাবে আমাদের অভ্যাসে আমাদের বুদ্ধিবিকারেই গভীর ভাবে নিহিত হয়ে রয়েছে আমাদের সর্বনাশ । দুর্ভাগ্যের সেই মূলে, বহুপ্রাচীন প্রথার প্রাচীরভিত্তিতে আমাদের অধ্যবসায় নিযুক্ত করতে হবে আত্মীয়পরের সমস্ত কঠিন বাধার বিরুদ্ধে। তা না করে যখনই আমাদের দুর্গতির সকল দায়িত্ব বাহিরের অবস্থার এবং অপর পক্ষের প্রতিকূলতার প্রতি আরোপ করে বধির শূন্তের অভিমুখে তারস্বরে অভিযোগ ঘোষণা করি তখন হতাশ্বাস ধৃতরাষ্ট্রের মতে মন বলে ওঠে “তদা নাসংশে বিজয়ায় সঞ্জয়,”----আপনি যার সব চেয়ে বড় শক্র বাহিরের শত্রু বারেবারেই তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করবে। জীবনের সার্থকতার জন্তে আমি রসের প্রয়োজনকে খুবই মানি কিন্তু রসের প্লাবনকে মানি নে। তার সঙ্গে সঙ্গে কঠিন সত্যকে মানতে হবে চিন্তাশক্তির সহযোগে । তোমাদের রচনায় এবং কাজে আমি এই দেথতে চাই যে, নিৰ্ম্মল আনন্দের ক্ষেত্রে যেমন তোমরা বিশ্বের অন্তরঙ্গ মন নিয়ে সৌন্দৰ্য্য সম্ভোগ করে তেমনি মানবসমাজের বিচিত্র ব্যাপারের প্রতি ঔংস্থক্য নিয়ে তোমরা বুদ্ধিপূর্বক চিন্তা করে, অন্বেষণ করে, বিচার করে এবং আপন জীবনের লক্ষ্য অরধারণ করেi *

  • বিশ্বভারতী-সন্মিলনীর সভার সভাপতির অভিভাষণ