পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণক্ষণ তমসা-জাহন্তৰী ՏՊՊ পূৰ্ব্বপুরুষের ভিটা ; গিরিনদী গৈরিক বন্যায় সহসা ফুলিয়া উঠে, কৈশোরে ছাপিয়া যায় কুল ! এলোমেলে কতগান, জয়দেব, রবীন্দ্রনাথের, অদূরে নামুর গ্রামে রচে পদ বড়ু চণ্ডীদাস– মেদূর মেঘের মায়া আবার ঘনায়ে এল নভে ! গুচ্ছে গুচ্ছে থরে থরে নদীচরে ফোটে কাশফল, শীর্ণ হ’ল জলধারা, বালুরাশি নিশ্চিন্তে ঘূমায়। বালুচরে পদচিহ্ন মুছে গেছে, সে কিশোর কবি দেখা দিল, কুড়ি ছুয়ে যেথা ধীরে বহে গন্ধেশ্বরী, পৌষসংক্রাস্তির উম, মেশে আসি দ্বারকা-ঈশ্বরে । দরে আকাশের গায় কালোছায়া বৃদ্ধ শুশুনিয়— কিশোর কবির মনে ঘনাইল পাহাড়ের মায়া, শাল ও পলাশবন, ধুধু মাঠ দিগন্তপ্রসারী। iনশা ন কাটিতে তার, বসন্তের সায়াঙ্গে একদ বিশাল পদ্মার তীরে এল যেথা কাপে ঝাউবন ; সুপক্ক কুলের লোভে গুটি গুটি খরগোস দল চমকিয়া পদ শব্দে ছোটে দীর্ঘ কান খাড়া করি । সেথানে পাড়ের গায়ে, ক্ষণে ধ্বসে-পড়া খাড়া পাড় গৰ্ত্তে গৰ্ত্তে উকি মারে লাল ঠোঁট পার্থীদের ছান ; ইলিশ ধরার নৌক সার বাধি চলে জাল ফেলে, বহুদূরগামী যত ষ্টীমারেরা যায় ধোয়া ছেড়ে, পাশে পাশে উড়ে চলে জলচর পার্থী সারি সারি । মাঝ গাঙে বালুচর, দুই পাশে কলকল জল তার ছন্দ সেইদিন শুনেছিল যে মুগ্ধ বালক, পদ্মার আবর্তে পড়ি সেই জন হ’ল দিশাহারা, বহু বৎসরের পরে, মেঘনা করিয়া অতিক্রম— কালো আর রাঙা জল যেথা কষ্টে এক হয়ে মেশে । মিলালো পদ্মার ছায়, স্বচ্ছজল চপল কাঞ্চন কিশোরীর বেণী যেন, হাটুজল শহরের ধারে ; ভুলে-ধাওয়া কবিতার অকস্মাৎ আবৃত্তির মত— গান গেয়ে ওঠে প্রাণ, কৈশোর যৌবনে আসি মেলে ; রেললাইনের সাকো, পোড়ো বাড়ি আমের বাগান, নির্জন সন্ধ্যায় যেথা মেঘে মেঘে রঙের বিলাস, গানে গানে উন্মাদনা ; স্নান করি শাস্ত নদীজলে দেবতা-মন্দিরে যেন দেখা দিল তরুণ পূজারী। সে পূজা হয়নি শেষ, মলিন এ ভাগীরথী তীরে যৌবনের যত বাঞ্ছ, যত ক্লাস্তি, রাখি যত গ্লানি ; শুচিস্নান করি আজো পূজা সারি যাচিমু প্রসাদ । কালে কলঙ্কের স্পশে জেগে ওঠে আবৰ্ত্ত পঙ্কিল, কল ও মিলের ধোয়, জোট-নৌকা-ষ্টীমার বন্ধন, এরই মাঝে কুলুকুলু কলকল বহে জলধারা । সাবধানী মানুষের হাতে রচ। ফুলের বাগান--- বয়া ভাসে সারি সারি আলো তাতে জলে আর লেবে । সহজ গানের ধারা বাধা পায় তবু গান জাগে, মিনারের চুড়ে চড়ে তবু স্বর ভাসিয়া বেড়ায় । সে স্বরের আধখান তোমারে শুনায়েছিছ, সখি, . পঙ্কিল আবর্তে যেথা জাহ্নবীর বিষদুষ্ট জল ঘুরিয়া ঘুরিয়া মরে। শুনেছিন্ত সে জাহ্নবীতীরে আধখানি গান তল, সে অৰ্দ্ধেক আজি অন্ধকারে উঠুক সম্পূর্ণ হয়ে। কৃষ্ণধার তমসার তীরে লীরবে বসিয়া দোঙ্গে একমনে করি অনুভব— যেন মোরা চলে গেছি, পার হয়ে লক্ষ জন্মাস্তর, সেথ হতে শুনিতেছি, সাঙ্গ যত অসম্পূর্ণ গানপূর্ণ অসম্পূর্ণ প্রেম ; আলোরে আড়াল করি দিয় আড়াল করিয়া দিল্প জীবনের আশা ও আশ্বাস । হে সখি, মোদের ময় আলোক-উজ্জল ভাগীরথী ; দুজনে বসিয়া আছি, বহে ধীরে তমস-জাহ্নবী— আবৰ্ত্ত রচিছে কি না আঁখি মেলি দেখিতে না পাই, অনুভব করি শুধু অবিরাম চলে জলধারা— সম্মুখ পিছন নাই, উদ্ধ অধঃ ন হয় ঠাহর, আলো হবে একদিন এ আঁধার এইটুকু জানি, আর জানি মোর দোহে বাচিয়া রব না ততদিন । মোদের অগীত গান, না বলা মোদের কথাগুলি, তমসা-জাহ্নবী তীরে চিরদিন বেড়াবে ভাসিয়া, অন্ধকার কভু আসি উদিবে না আলোকের তীরে ;