পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণক্ষ্মণ কুমারী অবস্থায় যাও বা দু-চার জন বাহিরের মানুষের সঙ্গে তাহার আলাপ-পরিচয় ছিল, এখন তাহাদেরও দেখিলে চিনিতে পারেন কিনা সন্দেহ। নিজের বাপের বাড়ির আত্মীয় কয়টি ছাড়া, তাহার বাড়িতেও বিশেষ কেহ যায় না । মমতা এধার-ওধার চাহিয়া আবিষ্কার করিল, কলেজের মেয়েরা কয়েক জন আসিয়াছে । তাহার ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে ছায়াকে কাছে দেখিতে পাইল । দুই জনে চোখে চোখে সংবাদের আদানপ্রদান একটু হইল বটে, কিন্তু লোকের ভীড় ঠেলিয়া কাছে যাওয়া আর ঘটিয়া উঠিল না। সভার কাজ আরম্ভ হইয়াছিল । কিন্তু গোলমাল ৭ার ক্ষণই চলিতেছিল, কাজেই বক্তাদের সব কথা ভাল করিয়া শোনা যাইতেছিল না। লাল চাদার ঝুলি হাতে এধারে-ওধারে মানুষ দাড়াইয়া আছে, কেহ কেহ স্বতঃপ্রবৃত্ত গুচয় ঝুলিতে টাকাটা-সিকিটা ফেলিয়া দিতেছে । বেশীর ভাগ অপেক্ষা করিয়া আছে, কাছে আসিয়া চাদ চাহিলে ইথন দিবে। সন্ধ্যা হইয়া আসিল । সভার উদ্যোক্তারা বুঝিতে শরিলেন ইহার পরে লোকজন চলিয়া যাইতে আরম্ভ করিবে । সতরাং এইবার চাদা-আদায়ের কাজ আরম্ভ হইল । এমত উৎসুকভাবে চারি দিকে দেখিতে লাগিল । সব মানুষই কিছু কিছু দিতেছে। মা কি আনিয়াছেন, গই। সে ঠিক জানিত না। নিশ্চয়ই ভালরকম কিছু আনিয়াছেন। কিন্তু নিজে সে খালি-হাতে আসিয়াছে বলিয়া ইঙ্গির দুঃখ হইতে লাগিল। যখন তাহার সম্মুখে আসিয়া গদার ঝুলি ধরিবে, তখন তাহাকে কেমন অপ্রস্তুত হইতে “বে ? মা ত অনেকখানি দূরে বসিয়া, এখন তাহার কাছ ংগত কিছু সংগ্রহ করাও কঠিন । ইঠাৎ তাহার বুকের ভিতরটা টিপ ঢিপ করিয়া উঠিল । অনেকগুলি মানুষ টাকা সংগ্ৰহ করিতেছিল, সকলের খণর দিকে মমতা অত চাহিয়া দেখে নাই। হঠাৎ এক জন বৈক ঝুলি হাতে করিয়া তাহাদের সম্মুখে আসিয়া পড়িল । “মন্ত চাহিয়া দেখিল সে অমরেন্দ্র । ইহাকেও কিনা রিকাতে তাহাকে ফিরাইয়া দিতে হইবে ? ছিঃ, মমতাকে কি ম মনে করিবে ? সে ত জানে মমতা ধনীর কস্তা। নিশ্চত অমর মনে করিবে, মমতা অতি অমানুষ, হৃদয়হীনা, জন্মস্বত্ব وع مواج গরিবের আর্জের দুঃখে তাহার মনে কিছুমাত্রও বেদনার সঞ্চার হয় না । বিস্ফারিত নেত্রে সে অমরেন্দ্রের দিকে চাহিয়া রহিল । কত লোকে কত কি দিতেছে। একটি মেয়ে হাত হইতে একগাছি চুড়ি খুলিয়া ঝুলির ভিতর ফেলিয়া দিল। এইবার মমতার পাল, অমর ঠিক তাহার সামনে আসিয়া দাড়াইয়াছে। মমতা চোখ তুলিয়া চাহিয়া চাহিতে পারিল না, ভাল করিয়া ভাবিবার ক্ষমতাও যেন তাহার চলিয়া গেল। কম্পিত হন্তে গলার হার ছড়া খুলিয়া ঝুলির মধ্যে ফেলিয়া দিল । হারটা ঝুলিতে দিয়াই কি একটা অদৃশু শক্তির টানে সে আবার চোখ তুলিয়া চাহিল। অমরেন্দ্র তাহারই দিকে চাহিয়া আছে । কিন্তু তখনই সে মমতার সম্মুখ হইতে সরিয়া গেল। মমতা তাহার চোখের দৃষ্টিতে কি দেখিল তাহা সে-ই জানে। কিন্তু কেবলষ্ট তাহার মনে হইতে লাগিল কি যেন একটা আশ্চৰ্য্য ব্যাপার ঘটিয়া গেল । মমতার সমস্ত অস্তিত্বের উপর দিয়া একটা অনিৰ্ব্বচনীয় পুলকের ঢেউ খেলিয়া যাইতেছে, কেন যে তাহা সে বুঝিতে পারে না । বুকের কম্পন তাহার থামিতে চাহে না কেন ? এমন ত কিছু ঘটে নাই, তবু মমতার শরীর মন এমন করিয়া থাকিয়া থাকিয়া শিহরিয়া উঠতেছে কেন ? যামিনী দূর হইতেই মমতার দান দেখিতে পাইলেন । তিনি ঝুলিতে পাচ শত টাকার নোট ফেলিয়া দিলেন, মমতার আর কিছু না দিলেও চলিত। কিন্তু দিয়াছে যে তাহার জন্য দুঃখ নাই, এখন স্বরেশ্বর জানিতে পারিয়৷ চেচামেচি না করেন তাহা হইলেই হয়। যে-ছেলেটির ঝুলিতে তিনি টাকা দিয়াছিলেন, সে একখানা খাতা বাহির করিয়া বলিল, “যদি কিছু মনে ন৷ করেন, আপনার নামটা একবার লিখে নিতে চাই ।” যামিনী বলিলেন, “নাম দিতে আমি চাই না, "জনৈক মহিলা' বলেই লিখে নিন।” যুবক অগত্যা সরিয়া গেল । সভা এইবার ভাঙিবার মুখে, লোকজন অনেকেই উঠিয় ছড়াহুড়ি করিয়া বাহির হইয়া যাইতেছে। মমতা উঠিয় পড়িয়া, লোক ঠেলিতে ঠেলিতে ষামিনীর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল । তাহার হাত ধরিয়া বলিল, “আমি কি কীৰ্ত্তি করেছি জান মা ?”