পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ মহাকাল ఫ్చిevరీ গওয়া যে আসে না তাহা নয়, বড় বৌরাণী সমস্ত দক্ষিণ বেদখল না করিলে চন্দ্ৰজ্যোতি হয়ত এখানে থাকিতে কিছুই আপত্তি করিত না । কিন্তু বড়র কাছে হার মানিবে না বলিয়াই সে দুই দিন বাদেই বাজুবন্ধ দোলাইয়া বলিল, “এ চোর-কুঠরীর মত অন্ধকার সব ঘরে আকাশের আলো গাছের পাতা কিছু দেখা যায় না, আমার এমন ঘরে থাকা অভ্যাস নেই, মাথা ধরে ম'রে ধাচ্ছি। তুমি এর একটা যা হয় ব্যবস্থা কর।” শঙ্করনারায়ণ রূপবর্তী পত্নীর অন্তগত স্বামী, অত্যন্ত বিড়ম্বিত মুখ করিয়া বলিল, “কি ব্যবস্ত করব, বৌদিদির সঙ্গে লাঠালাঠি করব ?” ছোট বৌরাণী বলিলেন, “লাঠালাঠি কেন করবে ? তুমিও ও রাজার ছেলে, বাগানের মধ্যে আমার জন্যে দুখান ঘর তুলে দিতে পার না ?” শঙ্কর কি আর করে ? পিতার কাছে দূত পঠাইল, উত্তরের ঘরে বধূর স্বাস্থ্য নষ্ট হইয়া যাইতেছে, বাগানে ঘর তুলিতে হইবে। দর্পনারায়ণ বাগানে ঘর তুলিতে খুব যে উৎসাহী ছিলেন তা নয়, কিন্তু এ বউকে তিনি অনেক খুজিয়া সাধ করিয়া ঘরে আনিয়াছেন, তাহার প্রথম অনুরোধই উপেক্ষা করিতে পারেন না। অগত্যা ঘর উঠিতে লাগিল । গুরেশ্বরীকে কেহ কোনও কথা জিজ্ঞাসা করে নাই। অকস্মাৎ একদিন ঘুম হইতে উঠিয়া বাগানের মাঝখানে চূণ স্বরকির পাহাড় দেখিয়া তিনি কালনাগিনীর মত গৰ্জিয়া উঠিলেন ; তখনই ছোট দেওয়ানকে তলব হইল, “কার এত বড় আম্পৰ্দ্ধা যে বলা নেই, কওয়া নেই, রাণীমার বাগানের মাঝখানে ঘর তুলতে বসেছে ? এখনই সমস্ত জিনিষ এখান থেকে সরাবার ওকুম হোক ৷” ছোট দেওয়ান তটস্থ হইয়া বলিলেন, “আঞ্জে, রাজা বাহাদুর স্বয়ং হুকুম দিয়েছেন, ছোট বৌরাণীর জন্তু বাগানে ঘর মলে দিতে। আমার সাধ্য কি যে আমি জিনিষ সরাই ।” স্বরেশ্বরী মনে মনে বলিলেন, “বুঝেছি, ঘরের শত্রু বিভীষণ ঘরে পা দিয়েই ঘর ভাঙাতে স্বরু করেছেন।” দেওয়ানকে কিছুই বলা হইল না, রাগিয়া ক্রুদ্ধ সপিণীর মত তিনি নিজের গায়েই নিজে ছোবল মারিতে লাগিলেন। ঈশনারায়ণ কলিকাতা হষ্টতে ছোট বৌরাণীর মত রতন-চুড় গড়াইয়া গৃহিণীকে উপহার দিতে আনিয়াছিলেন ; গৃহিণী হাতে করিয়াই সরোষে পাথরের মেঝেতে গহনা আছড়াইয়া দিলেন, শুভ্র মন্থণ শ্বেতপাথরের উপর মণিমুক্ত গড়াইয়া ঘরের দিকে দিকে চলিয়া গেল। স্বরেশ্বরী বলিলেন, “বাগানের মাঝখানে ইমারত তুলে যে ছোট মহারাণী সমস্ত বাড়িখানা কানা ক'রে দিলেন তা তোমাদের চোখে পড়ল না, এখন গয়না গড়াবে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলে।” ইন্দ্রনারায়ণ খানিকটা ক্রুদ্ধ ও খানিকট অপ্রস্তুত হইয়া বলিলেন, “গয়নার কথাই বড় মঙ্গরাণী বলেছিলেন, ইমারত ভাঙবার হুকুম ত হয় নি।” দর্পনারায়ণের হুকুম—বাড়ি যেমনকে তেমনই বাড়িতে লাগিল, মুরেশ্বরীর কিছু বলিবার মুখ নাই। কাহার উপর তিনি শোধ তুলিবেন ? রাগে অভিমানে স্বামীর সঙ্গেই দুই-তিন দিন মুখ-দেখাদেপি বন্ধ হইয়া গেল। মুরেশ্বরী দিন গুণিতে লাগিলেন, ইহার শোধ তিনি একদিন লইবেনই। স্থযোগ খুজিয়া বেড়াইলে মিলিতে বেশী দেরি হয় না। চন্দ্রজ্যোতির কোলে ছেলে হইতেই নূতন এক সমস্ত উঠিল পাড়াগায়ের ঝি-চাকর ছেলে মানুষ করিতে জানে না, বাড়িতে শাশুড়ী-ননদও নাই যে একটু সাহায্য করে। চন্দ্ৰজ্যোতির নাওয়া-খাওয়া ঘুচিয়া গেল, ছেলের যত্ন করিতে গিয়া। শঙ্কর বিরক্ত হইয়া কলিকাত৷ হইতে সুশিক্ষিতা নাস লইয়া আসিল, মাসে চল্লিশ টাকা বেতন দিয়া। অন্দরের লোকজনের মাহিনা দিবার ভার বড় বৌরাণীর। মাহিনী দিবার দিনে দেখা গেল, খোকার নাসের নামে বেতন আসিয়াছে দশ টাকা। সে ত চটিয়া একেবারে শঙ্করনারায়ণের সম্মুখেই গিয়া হাজির । শঙ্কর তখন আবলুস কাঠের খাটে বসিয়া চন্দ্ৰজ্যোতির সহিত তাস থেলিতেছেন। স্বামী-স্ত্রীর নিভৃত আলাপের মাঝখানে ছেলের ধাত্রীকে দেখিয়া ছু-জনেই ভ্রভঙ্গী করিয়া উঠলেন । সে তাহাতে গ্রাহ না করিয়া বলিল, “আপনারা কি মনিব হয়ে আমার সঙ্গে তামাসা করছেন ? চল্লিশ টাকা মাহিনায় আমার কাজ ঠিক হ’ল, আর আজ মাস-বাবারে মাহিনী পেলেম দশ টাকা ?” চন্দ্রজ্যোতি ফোস করিয়া উঠিল, “কি, যত বড় মুখ নয়