পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ মহাকাল RoA নাম, আর আজ তুমি পথে হেঁটে যাবে? আমার ঘাড়ে কাটা নাথা মা ?” - চন্দ্রজ্যোতি বলিল, “তোর ভয় কি লক্ষ্মীছাড়া ? তুই ত বাবি আমার সঙ্গে। অার পথে আমি বেরোই না সে ত ভালই, পথের লোক আমাকে চিনবে না। যাবি ত চল, নইলে আমি অন্ত উপায় দেখব । নেহাৎ পথ চিনি না, তাই তোকে সাধছি।” দাসী কাদিতে লাগিল। “এ জন্মে যে আর এমুখে হতে পারব না মা। এখনই ত দিন ফুরোয় নি।" চন্দ্রজ্যোতি গলার হারটা খুলিয়া তাহার কোলে ফেলিয়৷ দিল, “এই নে, বিলাসপুরে গিয়ে আমি নিজেই তোকে বেচে দেব এখন, অনেক কাল আর ভাত-কাপড়ের ভাবনা ভাবতে হবে না।” দাসী তৰু কাদিয়া কাদিয়াই বলিল, “বলতে নেই মা, কিন্তু আমন ক’রে যে বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইছ, যদি শ্বশুর তোমায় আর না নেয় ?” দপিতা চন্দ্রজ্যোতি ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “ন নেয় না নেবে। তোকে ত আর খাওয়া-পরার জন্য দায়ী করব না ? আমার ভাবনা আমি ভাবতে জানি, তোর তা নিয়ে মাথ৷ ঘামাতে হবে না।” অন্ধকারে কালে কাপড় পরিয়া এক গল ঘোমটা দিয়া চন্দজ্যোতি সাহস করিয়া দাসীর সঙ্গে বাহির হইয়া গেল । ছেলেটাকে কি করিয়া ফেলিয়া যায় ? তাহাকেও দাসীর কোলে চড়াইয়া লইল । শঙ্করের জানিতে দেরি হইল না । যখনই ঘরে আসিয়া S*জ্যোতিকে দেখিতে পাইল না, তখনই তাহার সন্দেহ হইল, নিশ্চয় সে বিলাসপুর চলিয়া গিয়াছে। এঘর ওঘর সাত দর খুজিল কিন্তু মুখ ফুটিয়া কাহাকেও কিছু জিজ্ঞাসা করিতে পরিল না, পাছে লোক-জানাজানি হইয়া যায়। শেষে নিজেই সিডি ছুটাইয়া বিদ্যুৎবেগে ষ্টেশনের দিকে দৌড়াইল, যদি পেঁপানে চন্দ্রজ্যোতিকে ধরিয়া ফেলিতে পারে। ষ্টেশনে তখন ট্রেন ছাড়িয়া দিয়াছে। প্ল্যাটফর্শ্বে জনপ্রাণী নাই। পঙ্কর ষ্টেশন-ঘরে উকি মারিতেষ্ট যাহারা ছিল, শশব্যস্তে বাহির হইয়া আসিল, “কি চাই কুমার বাহাদুরের ?” শঙ্করের মুখে কথা বাধিয়া গেল, সে বলিতে পারিল না, “আমার স্ত্রীকে দেখেছ?” বলিল, “কিছু না, এদিকে ঘোড়া চ'ড়ে এসেছিলাম, তোমাদের দেখে গেলাম।” তাহারা কৃতার্থের হাসি হাসিয়া বলিল, “রাজা বাহাদুরের রাজ্যে আমাদের আর দুঃখ কি ?" শঙ্কর বেশীক্ষণ দাড়াইতে পারিল না। অন্ধকার রাত্রেই ধীরে ধীরে ঘোড়া চালাইতে লাগিল। মাথায় ঠাগু হাওয়৷ লাগিয়া তাহার চিস্তাশক্তি ফিরিয়া আসিতেছিল। ভাবিল, এখন যদি বাড়ি ফিরিয়া যাই, সব কথা বাহির হইয়া পড়িবে, হয়ত চন্দ্রজ্যোতিকে আর দর্পনারায়ণ ঘরে লইবেন না। তার চেয়ে আমি যদি না ফিরি, লোকে জানিবে আমারই সঙ্গে সে গিয়াছে, বাবা আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করিবার ভয় দেখাইলেণ্ড বউকে ছাড়িতে হইবে না। কিন্তু রাত্রে ষ্টেশনে থাকিলে লোকে যে নানা প্রশ্ন করিবে ? শঙ্কর মাঠের ভিতর দিয়া অনেক মাইল চলিয়া যখন পরের ষ্টেশনে আসিল, তখন রাত্রি প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে। বাবলা কাটা, চোরকাটায় ঘোড়ার পা ক্ষত-বিক্ষত, শঙ্করের কাপড়ও ছিন্ন ভিন্ন। ভোরের ট্রেন যাইতে আর এক ঘণ্টা দেরি আছে । শঙ্কর ঘোড়াটাকে মাঠের মধ্যে ছাড়িয়া দিয়া ট্রেনের আশায় দূরে দূরে ঘুরিতে লাগিল। ঠিক সময়ে টিকিট কাটিয়া গাড়ীতে উঠিয়া বসিল, লোকে বিম্বিত হইয়া তাকাইলেও তাহাকে ঠিক চিনিতে পারিল না। অকস্মাৎ চন্দ্ৰজ্যোতিকে এমন ভাবে ছেলে কোলে করিয়া দাসীর সহিত আসিতে দেখিয় তাহার পিতামাতা আকাশ হইতে পড়িলেন। শত প্রশ্নের উত্তরে সে শুধু বলিল, “আমি আর সে বাড়ি যাব না।” মা বলিলেন, “ঝি পোড়ারমুখীকে এখুনি হেঁটেকাট উপরে কাটা দিয়ে পুতে ফেলব, কোন আক্কেলে তুই রাজার বাড়ির বউকে পথে বার ক’রে নিয়ে এলি ?” চন্দ্রজ্যোতি বলিল, “ওকে যদি কিছু বল ত তোমার সামনে গলায় দড়ি দিয়ে মরব। ও ছিল তাই মেয়ে পেয়েছ, না হলে আমার মুখ আর এজন্মে দেখতে হত না।” বাবা বলিলেন, “তেতে-পুড়ে এসেছে, কিছু একটা দুঃখ পেয়েছে, এখন মেয়েটাৰুে জালিও না ; চুপচাপ জামাইয়ের