পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R$$ লাগল, কালই চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে দেবে, তার পর এখানকার দেনাপাওনা চুকিয়ে রূপনারাণপুর চলে যাবে, সেখানকার যেমন স্বাস্থ্য তেমনি সস্তাগণ্ডার দেশ, সেখানে চাষবাস ক'রে স্বখে-স্বচ্ছন্দে ক'টা দিন এক রকম 'ক'রে কাটিয়ে দেবে। কমলা ত প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইলে না। সাড়ে বারে হাজার টাকা । যখন সমস্ত ব্যাপারটা সত্যি ব’লে বুঝলে তখন কেঁদে ফেললে। স্বপ্নেও সে এসৌভাগ্যের সম্ভাবনা দেখে নি, কল্পনাও করে নি যে তার এই বর্তমান জীবনযাত্রার কখনও কোন পরিবর্তন হ’তে পারে । তখন ধীরে ধীরে তার জীবনের সমস্ত অতীত, বর্তমান জার ভবিষ্যৎ তার চোখের সামূনে ভেসে উঠতে লাগল। তার বাপ-ম-ভাই-বোনের সংসারে আনন্দে খেলাধুলো করে দিন কাটান, তার বিয়ের জন্তে বাপমার চিস্তা, তার পর সেই প্রথম বিয়ের রাত্রি, কত লজ্জা কত আনন্দ কত আশা-আকাঙ্ক্ষা, তার পর নিজের সংসার, স্বামীপুত্ৰকস্তা নিয়ে কত কষ্টের সংসার করা ; ছেলেমেয়েদের নিয়ে কখনও প্রাণ খুলে আমোদ করতে পারে নি, স্বামীর মুখে কখনও ভালমন্দ কিছু দিতে পারে নি, নিজের গয়নাটা পৰ্য্যন্ত বাঁধা। কিন্তু এত টাক, একি সত্যি ? সে-রত্রে আর তারা ঘুমতে পারলে না। শিশির যে কমলাকে কিছু না ব'লে হলধরবাবুর কাছ থেকে টিকিট কিনেছিল এই গল্প আবার একবার শুনে কমলা বলতে লাগল, এত দিনে ছেলেমেয়েগুলোকে সাজিয়ে-গুজিয়ে তৃপ্তি পাব, পাঁচ জনের সাম্নে বের করতে পারব। কি কষ্টেষ্ট এত দিন গেছে । মনে মনে ঠাকুরদেবতাকে কত ডেকেছি, এত দিনে তার মুখ তুলে চাইলেন। আর তারা কত কষ্ট দেবেন আমদের ? ই্য, ভাল কথা। আমার সেই হারছড়াটা ছাড়িয়ে এনে এবার। হাতের চুড়িগুলো ত ক্ষত্রে ক্ষয়ে আর কিছুই নেই বললেই হয়। এবার কিন্তু আমার আর মেয়েটার জন্তে পাচগাছি ক'রে চুড়ি গড়িয়ে দিতে হবে। পাশের বাড়ির দিদির হাতে সেদিন নতুন প্যাটার্ণের চুড়ি দেখছিলুম, ভারী স্বন্দর দেখতে, তোমায় এনে দেখাব'খন। এ-সব ত এক রকম হবে, এতে আর খরচ কি প্রবণসী ৷ SN9RS్న বল ? হ্যাগ, সত্যি কি সাড়ে বারে হাজার টাকা পেয়েছ ? ভগবান, আমাদের দুঃখ কি এত দিনে বুঝেছ ? (কমল একটু কালে) দেখ তোমার মনে কি সাধ আছে আমি জানি না কিন্তু একটি ছোট দেখে বাড়ি এবার করতেই হবে। সবস্থদ্ধ পাঁচ-ছ হাজার খরচ করলে জায়গা নিয়ে ছোট একটা একতলা বাড়ি বেশ হবে'খন। পাশের বাড়ির দিদির জামাই বালিগঞ্জে সেদিন বাড়ি করলে, খরচ ঐ রকমই পড়েছে। তৰুত নিজেদের একটা আস্তান হবে, মাথা গোঁজবার একটু জায়গা হবে। ছেলেদের কি আর দিয়ে যাবে বল ? তবু বাড়িটা থাকৃলে এর পর পথে বসতে হবে না। তার পর ধর মেয়েও বড় হয়ে উঠেছে। আসছে ফাঙ্কনে চোদয় পড়বে, দেখতে দেখতে কত বড়ই হয়ে উঠল । ওর জন্তে আমার ভাবনার অস্ত ছিল না, কি ক’রে মেয়েটাকে পার করি, কি ক'রে যে ওর একটা গতি করি, তার ওপর ওর ঐ গায়ের রং আর ঐ উচু দাত। দিদি বলছিলেন তার এক বোনের বিয়েতে বাপকে মেয়ের উচু দাতের জন্যে আলাদ সাত-শ টাকা ধরে দিতে হয়েছিল। তাহলেই ধর তত্ত্বতাবাস সমস্ত নিয়ে পাঁচ হাজারের ধাক্কা, ওর কমে আজকালকার দিনে ভাল ছেলে পাওয়া যায় না। যাই বল, যার-তার হাতে ওকে সপে দিতে পারি নে, ভগবান যখন মুখ তুলে চেয়েছেন, একটি ভাল পাস্কর কিছু উপায় করছে এমন ছেলে দেখে বিয়ে দেব --- শিশির স্তন্ধ হয়ে শুনতে লাগল ! এসব কথা কিছুই সে ভাবে নি অথচ এর একটাও উড়িয়ে দেবার জো নেই। তাই ত, সে মনে মনে এত ক্ষণ কি পাগলামি করেছে ! কোথায় রূপনারাণপুর, কোথায় কমলার জন্তে ফুলের গাছ, কোথায় তার অলস সময় যাপন ! মেয়ের বিয়ে, সে ত না হ’লে নয় ; একটা ছোটখাট বাড়ি যে এই সময় করা উচিত তাতে কোন সন্দেহ নেই । ক্রমে শিশিরের মনে পড়তে লাগল, ছেলেটাও যখন বড় হবে তার পিছনে খরচ কম নেই। তার পড়াশুনে আছে ত 1 রূপনারাণপুরে গিয়ে চাষবাস ক’রে ছেলেটাকে চাষ বানানো চলে না । তা ছাড়া নিজেদের স্বর্থ-অস্বখ আছে : কখনও কারুর যদি কিছু হয়, তখন আবার কোথায় কা’র কাছে হাত পাততে যাব ? - এইবেল কিছু টাকা জমিয়ে রাখ ভাল । -