পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૧ઇ প্রবাসী SNరీ8& ধানচালের. ভারে ত্রিলোচনের র্কাধ বাকিয়া যায়। অনেক দিনের পরে মুখ ভরিয়া সকলের হাসি ফুটিল । বাড়ির এক রশি তফাতে থাকিতেই পটম্বরী কেমন করিয়া জানিতে পারে, বাবা-বাবা করিয়া ছ-হাত বাড়াইয়া ছুটিয়া আগাইয়া আসে। ত্রিলোচনের রৌদ্র-কাতর মুখ পলকের মধ্যে হাসিতে উজ্জল হইয়া উঠে। তাড়াতাড়ি দাওয়ার উপর বোঝা নামাইয়া বলে—আয় খুকী, কোলে আয় —আসবি ? খুকীর আপত্তি নাই ; কিন্তু রান্নাঘর হইতে ফুলকুমারী বাহির হইয়া সব মাটি করিয়া দেয়। মেয়েকে তাড়া দিয়া বলে—সোহাগ থাকু এখন । থতমত খাইয়া মেয়ে থামিয়া যায় । ত্রিলোচন ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠে—ঐ রে, গন্ধ বেরুচ্ছে কেমন বউ, তোমার লাউয়ের ঘণ্ট ধরে গেল বুঝি। ‘শিগগির ধাও— ফুলকুমারী ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলে। যাচ্ছি। এখন— ত্রিলোচন বলে--আমি নাওয়াবো । হঠাৎ সে গম্ভীর হইয়া যায়। বলে—তোমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে বউ, এক জনের উপর সমস্ত...দুখানা হাতের এক তিল জিরোন নেই। বা পারি, দেও না আমায় কিছু কিছু করতে। তাতে ক্ষয়ে যাব না--- ফুলকুমারী কহিল—এক জন কেন ? মোক্ষদ-দিদি ত আছেন। আর একা হই, যা-ই হই তোমার কাছে ত কোন দিন নাকে কাদতে যাই নি কৰ্ত্তামশাই ? আমার সংসারে কেন তুমি কথা বলতে আসবে ? কেন ? ভয়ানক ঝগড়া হয়ে যাবে একদিন— খাল আর বিল একটালা হইয়া আছে আজকাল । কাছারীর চাল ঝড়ে উড়াইয়া লইয়া গিয়ছে, নায়েব বরকন্দাজ কেহই সেখানে নাই, থাকিবার প্রয়োজনও নাই। জোয়রের বেলা খালের জল ধাওয়া করিয়া ডিষ্ট্রক্ট বোর্ডের রাস্ত অবধি আসে, কোটালের মুখে কখনও কখনও রাস্ত ছাপাইয়া যায়, রৌদ্রালোকে অবাধ নোনাজল ঝক ঝক করিতে থাকে, রাস্তীয় দাড়াইয়। এখানে-সেখানে জাল ফেলিয়া পাড়ার লোক মাছ ধৰি থাকে। জিলোচন এসব দিকে তাকাইয়াও বলে --তা কিন্তু মেয়েকেও নিয়ে যাচ্ছি, নাওয়াতে হবে দেখে না। সদর রাস্ত দিয়া গতায়াত ইদানীং সে এক রকম ছাড়িয়াই দিয়াছে।-- পুকুর ধারে গাবগাছের তলায় কালীঘর, পাড়ার ছেলেমেয়ের জুটিয়াছে, মহা সমারোহে কালীপূজার আয়োজন চলিয়াছে। পটম্বরী হইয়াছে স্বয়ং কালী-ঠাকরুণ, জিভ মেলিয়৷ চুপচাপ দাড়াইয়া আছে। দাসের বাড়ির সোনা কামার হইয়া তালপাতার খাড়া লইয়া হাড়িকাঠের সামনে প্রস্তুত, এখন একটা কোন পাঠা পাইলে হয় । সমস্ত দুপুর পাঁচ-ছয় জনে মিলিয়া মাঠে ছুটাছুটি করিয়াও সত্যকার পাশ ধরিতে পারে নাই ৷ হারাণ এমনি সময়ে থপথপ করিতে করিতে আসিল । --দিদি, দিদি গো-- কামার চঞ্চল হইয়া উঠিল—ঐ, ঐ...হারাণ হবে পাঠা— হারাণ খুব খুশী, ঘাড় নাড়িয় রাজী হইল। পটগরীর প্রস্তাব ভাল লাগে না। অমন সোনার মত ভাই—পৈতা পরিয়া পুরুত হইলে বরঞ্চ মানাইত তাকে, পাঠ হইতে সে যাইবে কেন ? ডেডাং করিয়া গলায় কোপ মারিবে, জোরে যদি মারে তার কত ব্যথা লাগিবে...কিন্তু মুস্কিল হইয়াছে, কালী হইয়া এখন সে কথা বলে কি করিয়া ? তার পর সিছরের অভাবে কাদার ফোট দিয়া পুরুত যখন সত্য সত্যই পাঠা উৎসর্গের আয়োজন করিতে লাগিল, কালীর পক্ষে আর জিভ মেলিয়া দাড়াইয়া থাকা চলিল না । ভাইকে লইয়া একছুটে চলিয়া গেল। আর সবাই হতভম্ব ; খেলা ঐ পর্য্যন্ত । সেইদিন শেষ রাত্রে আকাশ ভরিয়া তারা ঝিলমিল করিতেছে। হঠাৎ থোকা মা মা করিয়া কাদিয়া উঠিল। সারাদিনের শ্রমক্লাস্ত ফুলকুমারী সৰ্ব্বঙ্গ এলাইয়া অঘোর ঘুম ঘুমাইতেছে, সে জাগিল না, খোকা রহিয়া রহিয়া কাদিতেছে। ও ঘরে মোক্ষদা জাগিয়া উঠিয়া ডাকিতে লাগিল—ও বউ, বউ ! দেখ ত ত্ৰিলোচন, থোকা কাদছে কেন এত ? সকালবেলা ছেলে নীলবর্ণ হইয়া গিয়ছে, চক্ষু হইয়াছে আগুনের ভাটা ; ক্রমশঃ সে ঝিমাইয়া আসিতে লাগিল, ক্ষীণ জড়িত কণ্ঠে এক-একবার বলে—জল ! মোক্ষদা হাউ হাউ করিয়া কাদিয়া উঠিল—কি সৰ্ব্বনাশ হ’ল রে, বউ গোকাকে “কি খাইয়েছিলে ? কি বিষ হাতে তুলে দিয়েছিলে কালকে ?