পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

క్సెరిరి స్సీలీకిక চারিদিকের বেড়া খুলিয়া হৈ হৈ করিয়া খালের পাড়ে চরের উপর জানিয়া ফেলিতেছে। ঝাড়ের বঁাশ কাটিয়া বুড়া একলাই দশ-বারোটা খুটি পুতিয়া ফেলিল। শুনিয়া হরিপদ আসিল । আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল—গ্রাম ছেড়ে এখানে এসে কুড়ে বাধছ, মতলবটা কি বল ত দাদা । —শোন, তবে তোকেই বলি—কানের কাছে মুখ আনিয়া ফিসফিস করিয়া ত্রিলোচন বলে—কাউকে বলবি নে কিন্তু । ফিরি করে বেড়িয়ে আর তেমন জুত হয় না। নতুন ব্যবসা ধরব ভাবছি। রাত্রে মাছের নৌকো খাল দিয়ে যায়, সস্তায় মাছ কিনে রাখব—-সকালের বাজারে বিক্রী হবে । তুই জানিস নে হরিপদ, বডড লাভ এতে । হরিপদ বলিল—এই শ্মশান-ঘাটের উপরে বসে রাত্তিরে তুমি মাছের নৌকোর খোজ করবে ? ভূত-পেত্নীকে কোনদিন ঘাড় ভাঙবে তোমার ! হাসিয়া হাসিয়া বুড়া বলে—ভূত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি রাম লক্ষ্মণ মাথার উপর—করবে আমার কি ? জানিস হরিপদ, আমার কত কষ্টের জমি এই সব, ধান হয় ন৷ আজকাল, চর পড়ে গেছে ; আর কিছু না হোক চরের উপর গুয়ে বসে তবু ত উগুল হবে খানিক - হাস্তোজ্জল কণ্ঠস্বর অকস্মাৎ বিষন্ন ও উদাস হইয় উঠে । চরের উপর ত্রিলোচন পাকাপাকি বসবাস স্বরু করিল। মাছের নৌকা সম্পৰ্কীয় কথাটা মিথ্যা নয়। দশানি, বৌমারির বিল প্রভৃতি অঞ্চলে মাছের আবাদ । মাছ-বোঝাই বিস্তর নৌকা রাত্রের জোয়ারে উজান বাহিয়া খাল দিয়া বাহির গাঙে পড়ে ; গঞ্জে সকালের বাজারে সেই মাছ বিক্ৰী হয়। রাত্রে ঝুড়ি হিসাবে তার কতক কিনিয়া রাখিয়া খুচরা বেচিতে পারিলে লাভের কথাই বটে। কিন্তু তাও বড় সুবিধা হইল না ; মাছের নৌকা সোরগোল করিয়া খাল দিয়া যখন চলিয়া যায়, ত্রিলোচনের সাড়াশন পাওয়া যায় না। ঠিক দুপুরে মওলপাড়ার গণশার বউ রাঙা শাড়ী পরিয়া ভাইয়ের সঙ্গে খালধার দিয়া বাপের বাড়ি চলিয়াছে। বউটি অল্পবয়সী ; স্বভাব বড় চঞ্চল ; বাপের বাড়ি চলিয়াছে, তা যেন নাচিয়া নাচিয়া চলিয়াছে। ত্রিলোচন তখন দাওয়ার খুটি ঠেস দিয়া মহানন্দে গোপীযন্ত্র বাজাইতেছে। বউ একটু থমকিয় দাড়াইল। উকি মারিয়া দেখিয়া চিনিতে পারিল, সে ইহার এক জন খরিদার। রাস্ত হইতে জিজ্ঞাসা করিলও বুড়ে, পান-স্বপারি বেচ না আজকাল ? —উই—বলিয়া ত্রিলোচন বাজনা রাখিয়া চট করিয়া রাস্তার উপর আসিয়া দাড়াইল । বউটি বলিল—তাই দেখতে পাই নে আজকাল । তা বেচ না কেন ? --আর মা, সে কি হবার জো আছে ? হাতের ইসারায় সে ঘরের দিকে দেখাইয় দিল । বলিতে লাগিল—-বলে কেন মা,~~পঙ্গপালের দল, খেয়ে-দেয়ে ফেলে-বোলে, সমস্ত একাকার । সব পুজি খোয়া গেছে-- বউটি অতশত জানে না। অতি জীর্ণ নিঃশব্দ কুঁড়েখানির দিকে চাহিয়া চাহিয়া বলিল—কই, ছেলেপিলে কাউকে দেখছি না ত ? বুড়াও এদিক-ওদিক চাহিয়া বলিল—ছিল ত সব এইখানে। কোনদিকে গেছে হয়ত। একদণ্ড স্থির হয়ে থাকবার জো আছে ? বলে কেন মা, কৰ্ম্মভোগ । হঠাৎ ফিক্‌ করিয়া হাসিয়া বলিল--একটা পান দিতে পার গে। ভালমামুষের মেয়ে ? সঙ্গে অাছেটাছে নাকি ? কদিন ঘে খাই নি- সব নিয়ে পালিয়ে চলে যায়— সধবা মানুষ, একবেলার পথ যাইতেছে, অনচলে বাধ পান-চুন-সুপারি সমস্তই ছিল । বউটর ইচ্ছা হইতেছিল, ঐখানে বসিয়া একটা পান সাজিয়া দেয়। সঙ্গের ভাই কিন্তু তাড়া দিয়া উঠিল—নে, নে, চল । যেতে হবে কদুর, হস আছে ? ত্ৰিলোচনের বিশুষ্ক মুখের দিকে চাহিয়া মণ্ডলপাড়ার বউটি বলিল—তোমার খাওয়া হয়েছে, বুড়ে ? হয় নি এখনও, না ? —আচ্ছা বোকাত ! পান চাচ্ছি কেন তবে ? পেটে ভর না থাকলে ফুপ্তি আসে এত ? বলিয়া ক্ষপ্তির চোটে ত্ৰিলোচন একেবারে অট্টহাসি হাসিতে স্বরু করিল। রাত্রে এক-এক দিন সত্য-সতাই ভারি স্ফৰ্ত্তি জমি আসে। ত্রিলোচনের ঘরের পাশে অনেকখানি জুড়িয় বালুচর। জোয়ারের বেগে জল থলবল করিয়া চরের উপর