পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণরণ রামভাউয়ের মেয়ে SNరిన সকলে দাড়াইল। অশ্বারোহীরা অবতরণ করিয়া বাংলার বারান্দার ভিত্তির সঙ্গে গাথা লোহার আংটার সঙ্গে যার যার ঘোড়া বাধিল । বন্দীদের কয়েক জন মাথা হইতে ঝুরি নামাইল, তাহা হইতে অনেকগুলি কোদাল ও সাবল বাহির হইল। আশ্বারোহিগণের নির্দেশমত বন্দীর মাটি কাটিতে ও পাথর খুদিতে লাগিয়া গেল। জানিলাম ইহার জেলখানার কয়েদী, রাজার বাগান তৈরি করিতে আসিয়াছে। বাগানবাড়ির বারান্দায় বসিয়া বহু ক্ষণ পৰ্য্যস্ত আমি তাহাদের কাজ দেখিতে লাগিলাম। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাহারা অনেকটা জায়গা পরিষ্কার করিয়া সাবল দিয়া বড় বড় পাথরের ডেলা তুলিতে লাগিল। আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করিলাম, এক স্থানে চারিটি লোক গভীর অভিনিবেশের সহিত কাজ করিতেছে । তাহদের কালো, দীর্ঘাকার দেহ, স্থির গম্ভীর মুখ, দৃঢ় পদক্ষেপ ও কৰ্ম্মের ঐকাস্তিকতা দেখিলে তাহাদিগকে মোটেই কয়েদী বা অপরাধী বলিয়া মনে হয় না। এক-এক বার বোধ হইতেছিল, কেমন একটা অব্যক্ত গৰ্ব্বে যেন তাহাদের শির উন্নত হইয়া আছে । দ্বিপ্রহরের আহারের পর যখন আবার বারান্দার দিকে আসিলাম, তখনও দেখিলাম তাহদের কাজ অবিরত ভাবে চলিয়াছে। সিপাহীরা পাথরের উপর বসিয়া বিশ্রাম করিতেছে, কয়েদী দলের নেতার অপর কয়েদীদিগকে কাজ দেখাইয় দিতেছে, তাহারা দৃঢ়মুষ্টিতে সাবলের ঘা দিতে দিতে পাথর খুঁড়িয়া তুলিতেছে। বারোটা বাজিতেই তাহদের খাইবার ছুটি হইল। জেলখানা হইতে ঝুরিভরা জোয়ারীর রুটি আসিল, সিপাহীদের জন্য কাহারও ছেলে, কাহারও মেয়ে কাপড়ে বাধিয়া রুটি তরকারী লইয়া আলিল, কেহ-বা নিজের সঙ্গে আনীত পুটলি খুলিল। _. কালো দীর্ঘাকৃতি লোক-চারিটি এক জন সিপাহীর তত্ত্বাবধানে দল ছাড়িয়া আমাদের বাড়ির অপর দিকে আসিয়া একটা আমগাছের নীচে বসিয়া খাইতে লাগিল । আমি ও আমার মারাঠা বন্ধুটি তখন বারান্দায় বসিয়া খবরের কাগজ পড়িতেছিলাম। আমি কাগজ ফেলিয়া কৌতুহলের সহিত লক্ষ্য করিতেছিলাম, লোকগুলি কেমন করিয়া একটু একটু রুটির টুকরা বহু ক্ষণ ধরিয়া চিবাইতেছে। খাওয়া শেষ করিয়া তাহারা আমাদের কাছে আসিয়া জল চাহিল এবং অঞ্জলি ভরিয়া জল পান করিতে লাগিল । লোকগুলির অপরাধের বিষয় জানিবার জন্য আমার বিশেষ কৌতুহল হইল। আমার বন্ধটি সে কৌতুহল নিবৃত্তির চেষ্টায় অগ্রসর হইল। সৰ্ব্বাপেক্ষ বয়স্ক লোকটিকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার কত দিনের সাজা ?” সে শুক্ষকণ্ঠে বলিল, “পাচ বছরের। সাড়ে তিন বছর হয়ে গেছে, আর আঠার মাস বাকী আছে। আমাদের তিন জনেরই এক রকম।” “তোমাদের কেন কয়েদ হ’ল ? কি করেছিলে ?” সে সহজভাবে বলিল, “তার কারণ রামভাউয়ের মেয়ে ।” আমরা বিম্মিত হইয় তাহার দিকে চাহিলাম। তাহার পাশের একটি লোক বলিল, “রামভাউ আমাদের জাতের মোড়ল ৷” “তোমাদের কোন জা’ত?” “আমরা কৰ্ম্মকার—লোহার ” রামভাউয়ের মেয়ের জন্ত তোমাদের কেন কয়েদ হ’ল ? সে কি খারাপ মেয়েমানুষ ছিল ?” সহসা বয়স্ক লোকটির দুই চক্ষু জলিয়া উঠিল, হাতের পাঞ্জা শক্ত হইয়া পড়িল । সে কতকটা উদ্ধতভাবে বলিল, “সরকার, আপনারা সে কথা বলতে পারেন। উকীল সাহেবেরাও বারবার তা বলেছেন। কিন্তু দেখুন, আমি সাড়ে তিন বছর জেল খেটেছি, আরও আঠার মাস খাটব,--আঠার মাস কেন, আঠার বচ্ছর খাটুতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু ধড়ে প্রাণ থাকতে রামভাউয়ের মেয়ের সম্বন্ধে ওরকম কথা স্বীকার করব না। সে কথা মিথ্যে !" তাহার কথার ওজস্বিত দেখিয়া দু-জনেই অবাক হইলাম। কাহারও বাকী রহিল না। জানা গেল কয়েদীদের খাওয়া ও বিশ্রামের জন্ত দুই ঘণ্টা ছুটি। বন্ধুটি তখন সিপাহীদিগকে বারান্দায় একটা কম্বল পাতিয়া বসাইয় তাহদের জন্য পান আনিতে ভূত্যকে আদেশ করিল, এবং পাশে একটি চটাই পাতিয়া কয়েদীদিগকে বসিতে