পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক অহেতুক మ সবিতাকে বাধ্য হইয়া উঠিতে হইল। কিন্তু চলিতে চলিতে হঠাৎ থামিয়া বলিল-না ছিঃ, মা কি মনে করবেন বল ত ? অত বেহায়াপনা কি ভাল ? তপোনাথ কথাটাকে আমলই দিল না। তাহাকে টানিতে টানিতে বলিল—এর আর বেহায়াপনা কি ? তুমিও যেমন ! মা দেখতেই পাবেন না। তার কি ফুরসং আছে ? রান্না নিয়েই ব্যস্ত । সবিতা আর একবার বলিল,—ন, না ছিঃ ! কিন্তু তপোনাথ তাহাকে ছাড়িল না । বাগানের দিকে এক প্রকার টানিয়াই লইয়া চলিল । তাহদের ঠিক সম্মুখেই একটা ছোট পাহাড় আশ্চৰ্য্য মায়া বিস্তার করিয়া দাড়াইয়া আছে । ধোয়াটে সবুজ পাহাড়ে কি যে রহস্য আছে, মানুষ একবার চাহিলে আর চোখ ফিরাইতে পারে না । পাহাড় যেন মানুষকে ডাকে, ডাকে, কেবলই ডাকে । সবিতার দৃষ্টি অনুসরণ করিয়া তপোনাথ বলিল-দূর থেকে পাহাড় দেখতে বেশ লাগে, না ? সবিতা ঘাড় নাড়িয়া সায় দিল। একটু পরে বলিল – আজ বিকালে যাবে ওখানে বেড়াতে ? তাহার ভ্রম বুঝিতে পারিয়া তপোনাথ হাসিয়া ফেলিল । বলিল –ও কি কাছে ভেবেছ ? খুব কম হ’লেও মাইলচারেক দূরে। সবিতা বিস্মিত ভাবে কহিল—ও মা ! ওই ত পাহাড় । –তাই মনে হচ্ছে বটে ! গাছগুলো পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। মনে হচ্ছে পা বাড়ালেই পৌছে যাব । পাহাড়ের ওই মজা । পাহাড়ের আর মেয়েদের । মনে |স হাত বাড়ালেই ধরা যাবে, কিন্তু যায় না। পাহাড় আর মেয়ে শুধু দূর থেকে ভূলোয়,—ধরা দেয় না । কথাটা সবিতাকে বাজিল। দুঃখিত স্বরে জিজ্ঞাসা পরিল--আচ্ছ, তুমি যখন-তখন ও খোটা আমাকে দাও কিম ? কি তুমি আমার কাছে পাণ্ড নি ? দূর পাহাড়ের দিকে চাহিয়া তপোনাথ বলিল—কি যে পটনি সে আমিও জানি না। কি যে চাই তাও বলতে পারব না। শুধু এইটুকু বুঝতে পারি তোমাকে পেয়েও আমার দুঃখ ঘোচে নি। ধরা তুমি আজও আমাকে দাও নি। বিস্মিত ভাবে সবিতা বলিল –ধর দিই নি ? --না । তোমাকে পেয়েও আমি পাই নি । কয়টি শুকৃনে পাতা সবিতার কোলের উপর ঝরিয়া পড়িল । সে-কয়টি তুলিয়া লইয়া নখে করিয়া ছিড়িতে ছিড়িতে গাঢ় কণ্ঠে তপোনাথ বলিল-কাল রাত্রে কথা কষ্টতে কইতে হঠাৎ কখন তুমি ঘুমিয়ে পড়লে। ঘরে কাচের জানাল দিয়ে অজস্ৰ চাদের আলো এসে পড়েছিল। আমার চোখে কিছুতে আর ঘুম আসছিল না। শেষে বাইরে এসে বসলাম। সামনের বনে, দূর পাহাড়ের গায়ে চাদের আলো পড়ে মনে হচ্ছিল, কিছুই যেন এই বস্তুজগতের নয়। সবই যেন শুধু চোথ মেলে দেখাই যায়,—ধরাও যায় না, ছোয়াও যায় না। কতক্ষণ তাই দেখলাম। সমস্ত শির। উপশিরা পৰ্য্যস্ত যেন ঝিম্ ঝিম্ করছিল। যা বস্তু নয়, মামুষের স্বায়ু বোধ হয় তা বেশী ক্ষণ সহ্য করতে পারে না । বেদনায় সবিতার মন ভরিয়া উঠিল। স্বামীর দুটি আঞ্জল লইয়া খেলা করিতে করিতে অমৃতপ্ত স্বরে কহিল --আমি কিছুই জানি না। —না, তুমি তখন ঘুমুচ্ছিলে। আমি আবার ফিরে এসে তোমার শিয়রের কাছে বসলাম। তোমার ফুলগুলি নিয়ে কতক্ষণ খেল করলাম । —আমায় ডাকলে না কেন ? তপোনাথ সংক্ষিপ্ত ভাবে বলিল-—ন । বিবাহের পরে সবিতার মধ্যে একটা আশ্চৰ্য্য পরিবর্তন আসিয়াছে। পাড়াগায়ের লাজুক মেয়ের মত সে নয়। প্রাণ খুলিয়া হাসিতে, জোরে জোরে ছুটিতে, উচ্চকণ্ঠে কথা কহিতে এবং বড় বড় ছেলেদের সঙ্গে সমানে তর্ক করিতে শহরেও তাহার জুড়ি মেলে না। শ্বশুরালয় তাহার নিকট অপরিচিত নয়। বিবাহের পূর্ব পর্য্যন্ত সে শাশুড়ীকে খুড়িম বলিয়া ডাকিয়াছে এবং নিজের মায়ের মত র্তাহার কাছে আবদার করিয়াছে । সেই মেয়ে কি করিয়া এখন র্তাহারই পায়ে পায়ে অবাঙ মুখে ঘুরিয়া বেড়ায় সে একটা রহস্য । এ যেন সে মেয়েই নয়। তপোনাথ ভাবে, মেয়েরা অদ্ভূত। যখন যেখানে থাকে তার সঙ্গে আশ্চৰ্য্য রকম মিশিয়া যায়।