পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- Romo প্রবাসী ડa૨ হইয় তাহার নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। পরে মূলতানে দিগ্বিজয়ীর সমাধি হয়। আমি প্রমাণ করিলাম এই বৃত্তাস্ত ভ্রান্ত। চৈতন্তের সমসাময়িক ভক্ত পণ্ডিতেরা যে দৈনন্দিন লিপি রাখিয়া গিয়াছেন, তাহাতে প্রকাশ দিগ্বিজয়ী চৈতন্তের নিকট পরাজিত হইয়াছিলেন। চৈতন্তের গুরু কেশব ভারতী ; কেশব কাশ্মীরী নহেন। কেশব ভারতীর সমাধি এখনও কাটোয়ায় বিদ্যমান। এত প্রমাণ সত্ত্বেও তারাকিশোরের মত অটল । তিনি তাহার গুরুর নিকট শুনিয়াছেন কেশব কাশ্মীরী সম্বন্ধে ঐ সমুদয় বৃত্তাস্ত সম্পূর্ণ সত্য । র্তাহার ওকালতি পরিত্যাগ সঙ্কল্প জানিয়া জজ উড্রোফ, র্তাহাকে বলিলেন, শীঘ্রই তাহার জজ হইবার সম্ভাবনা ৷ “বড়লাট হইলেও আর নয়", এই উত্তর শুনিয়া সকলে স্তম্ভিত হইলেন। এই ত্যাগী সন্ন্যাসী, গুরুর দেহত্যাগের পর যখন সন্ন্যাসীদের সর্বশ্রেষ্ঠ আসন,—বৃন্দাবনের সর্বপ্রধান মহস্তের গদি আরোহণ করিলেন, বঙ্গবাসী আপনাকে গৌরবান্বিত মনে করিল। কিন্তু সেই ত্যাগী সন্ন্যাসী গৃহী অপেক্ষাও গৃহী হইয়াছিলেন। সামান্ত গৃহীর পরিবার সাত-আট জন লইয়া । সন্তদাস বাবাজীর পরিবার বছ। পরিক্রমার সময় সাত-আট শ’ সন্ন্যাসীর আহার যোগাইতে হইত। কেবল আহারের ব্যবস্থা নয়, শাসনের ব্যবস্থারও প্রয়োজন হইত। কিন্তু তাহার সঙ্গে বড় বড় হাকিম, এমন কি ঐ প্রদেশের ছোটলাটও দেখা করিতে আসিতেন । এই জন্যও বোধ হয় দুরন্ত সন্ন্যাসীরা ভয়ে তাহার বহুতাস্বীকার করিত। এই বৃহৎ পরিবার রক্ষার জন্য তাহাঁকে প্রণামী গ্রহণ করিতে হইত। এই প্রণামীর অর্থ হইতেই এত বড় শিবপুরের প্রাসাদ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। শারীরিক অস্বস্থতাবশতই হউক বা যে কারণেই হউক কলিকাতায় ইদানীং আমার সঙ্গে দেখা হইত না । কিন্তু র্তাহার আস্তরিক প্রেম অক্ষুণ্ণ ছিল । তিনি আনন্দধামে আনন্দে আছেন। এ প্রকার ব্যক্তির মৃত্যু হয় না। তবু বন্ধুবিচ্ছেদের সাময়িক আঘাত যে অমুভব করি নাই তাহা নহে । যখন যে গ্রন্থ রচনা করিতেন, আমাকে পাঠাইয়া দিতেন। র্তাহার ‘দার্শনিক ব্রহ্মবিদ্যা’, ‘ভেদাভেদ সিদ্ধান্ত’ এবং ‘শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীত গভীর চিস্তার পরিচায়ক। র্তাহার গীতার শব্দস্বচী অতি মূল্যবান। ‘ব্রহ্মবাদী ঋষি ও ব্রহ্মবিদ্য' গ্রন্থে তিনি বলিয়াছেন “এক্ষণকার ভারতরষীয় জাতি বিভাগ অবৈজ্ঞানিক” ( ১৩০ পৃ: ) । পুরাকালে জাতি গুণগত, শ্রীতি ও মহাভারত তাহার প্রমাণ ( ১১৩ ও ১১৬ পৃষ্ঠা )। সুদূর শ্রীহট্টের এক অজ্ঞাত গওগ্রামে যাহার জন্ম, র্তাহার খ্যাতি বঙ্গ ও বিহারের নানা স্থানে স্ববিস্তৃত। বৃন্দাবনে অৰ্দ্ধলক্ষ ব্যয় করিয়া যিনি এক স্বন্দর কুঞ্জ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন ; শিবপুরে লক্ষাধিক ব্যয়ে নিৰ্ম্মিত যাহার প্রাসাদে আধুনিক স্বপ-স্বাচ্ছন্দ্য-পূর্ণ ব্যবস্থার অভাব ছিল না ; র্যাহার শিষ্যমণ্ডলীর সংখ্যা তিন হাজার ছিল ; আজ বৃন্দাবন যাত্রার পথে অল্প সংখ্যক শিষ্যের সম্মুখে তিনি দেহ রক্ষা করিয়াছেন। ঐশ্বৰ্য্যকামীদের প্রতি নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস । কিন্তু সন্তদাস ছিলেন নিলিপ্ত বৈরাগী। কুম্ভ মেলায় তাহাকে হাতীর উপর চড়াইয়া সাম্প্রদায়িক ঐশ্বৰ্য্য প্রদর্শনের চেষ্টা করা হইয়াছিল। তিনি সে সমুদয় ব্যবস্থ৷ অগ্রাহ করিয়া পদব্রজে গিয়াছিলেন । এই জড়বাদপ্রধান যুগে সস্তদাসের ন্যায় বিশ্বাসী জ্ঞানী ভক্ত দুল্লভ। আজ শাস্তিধামে অবস্থিত র্তাহার সেই শাস্ত মূৰ্ত্তি কলহপূর্ণ জগতকে অঙ্গুলি-সক্ষেতে বলিতেছে পূৰ্ণব্রহ্ম সনাতনের চরণাশ্রয় ভিন্ন স্বথ ও শান্তি লাভের আর কোন উপায় নাই । নান্যঃ পন্থা বিদ্যতে অয়নায়