পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૨ চতুর্থ দিনে জর ছাড়িয়া গেল, বেদনারও উপশম হইল । সপ্তম দিনে অরুণ রুটি ও মুরগীর স্বপ খাইল। দেহ অত্যন্ত দুর্বল। ডাক্তার বলিলেন, হার্ট একটু খারাপ হয়েছে, কোনরূপ নড়াচড়া করলে চলবে না, কিছুদিন বিছানাতে চুপচাপ গুয়ে থাকতে হবে। ক্ষীণদেহে কৰ্ম্মীন রোগশয্যায় গুইয়া থাকিয়া অরুণ এক নব জীবনানুভূতি লাভ করিল। অতি ক্ষীণদেহ হইতে তাহার তীক্ষ কল্পনাপ্রবণ মন যেমন বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে, তেমনি তাহার সত্তা চারিদিকে প্রবহমান জীবনস্রোতের তীরে স্থির, একাকী, অচঞ্চল ভ্ৰষ্টার মত বলিয়া । ঠাকুম ঔষধ খাওয়ান, ছকু খানসামা স্নপ লইয়া আসে, প্রতিমা গান গায়, অজয় আসিয়া গল্প করে, পলাশ গাছে একটি পার্থী ডাকে, একটি বোলতা ঘরে ভন ভন্‌ করিয়া ঘোরে, তালগাছের ওপর চাদ ওঠে, এ সকল ঘটনা যেন কোন বৃহৎ রঙ্গমঞ্চে পুতুলনাচের মত ঘটিয়া যায়, সে শুধু স্তন্ধ দর্শক। এই বিজনতা, বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবজীবনধারা হইতে বিচ্ছিন্নতা একাকিত্বের অনুভূতি অরুণের চিত্তে অমৃস্থতার পর হইতে গভীরভাবে জড়াইয়া গেল । সন্ধ্যার সময় অনেক বন্ধুবান্ধব দেখিতে আসে, ঘরে আডিড বসিয়া যায়। জয়ন্ত, অজয়, বাণেশ্বর, হরিসাধন, দিদি, মামীম, চন্দ্র',—ীতিমত ভীড় হয়। উমাও মাঝে মাঝে আসে। ইহাদের মধ্যে বাণেশ্বর ও চন্দ্র নিয়মিত ভিজিটার । চন্দ্র ঘরে প্রবেশ করিলেই অরুণ জিজ্ঞাসা করে, মামী এলেন না ? চন্দ্র গম্ভীর ভাবে বলে, মা বলেছেন আজ আর আসতে পারবেন না, অনেক কাজ, বাবার শরীর ভাল নেই কি না। অরুণ তখনও খোলা দরজার দিকে চাহিয়া থাকে। মামীমার সহিত উমা আসে । আজ সে আসিল না। চন্দ্র অরুণের মুখের দিকে চাহিয়া বলে, দিদির ত কলেজ থেকে এসেই মাথা ধরেছে, তার ঘরে ওয়ে আছে। কেমন अझ् आँछ अङ्गु ल ? অরুণ আনমনা হইয়া যায়। উমার ঘরের দরজার খয়ের রঙের পর্দাটি তাহার চোখের সম্মুখে দুলিতে থাকে। ওই পর্দার আড়ালে ছোট ঘরটিতে সে কখনও প্রবেশ করে নাই। প্রবাসী ১৩৪২ ইচ্ছা করে, একবার সেই ঘরে প্রবেশ করিয়া চুপ করিয়া একটু বসিয়া থাকিবার অধিকার পায়। চন্দ্র বলে, অরুণ-দ, তুমি আরব্যোপম্বাস আনতে বলেছিলে, এই নাও । রোগশয্যয় গুইয়া অরুণের কোন আধুনিক উপন্যাস পড়িতে ভাল লাগে না । ছেলেবেলায়-পড়া রূপকথা উপকথা অসম্ভব উপাথ্যান সব পড়িতে ভাল লাগে । রাতে অরুণের ঘু ভঙিয়া যায়। অন্ধকার স্তন্ধ গৃহ। চাদের আলো শাণীর কাচে শকুমকু করে। মাকড়সার জালের মত অতি স্বল্প তত্ত্ব দিয়া কল্পনা কি মায়াজাল বুলিতে চায়! অরুণ ভাবে, প্রেম কি ? কেন এক যুবক এক তরুণীকে ভালবাসে ? কেন ভালবাসি ? এ যেন কোন অন্ধ নিৰ্ম্মম শক্তি, হৃদয় ভাঙিয়া পড়ে, জীবন চুর্ণবিচূর্ণ হইয়া যায়, তবু ভালবাসি। প্রেমের রহস্ত যে জানিতে পারিবে সে জীবনের রহস্য জানিতে পারিবে। ভাবিতে ভাবিতে সে শ্রাস্ত হইয়া ঘুমাইয় পড়ে। একদিন অরুণ বলিল, বাণেশ্বর বলতে পার প্রেম কি ? বাণেশ্বর হাসিয়া উঠিল, কার মত জানতে চাও? — আমি তোমার মত জানতে চাই । —Love is a divine mystery. —বল কি তুমি, এ যে জয়স্তের কথা, কবির কথা। আচ্ছা তুমি কখনও প্রেমে পড়েছ ? — কেন, আমি তর্ক করি বলে কি কাউকে ভালবাসতে পারি না ? —প্রেমে যে বিচার, তর্ক চলে না। এ এক বিচারহীন হদয়-আবেগ। ঠিক বলেছ, প্রেম মহারহস্ত, মৃত্যুর মত । —এ সব কথা না ভেবে, তোমার বোনকে ডাক, গান শোন । --না, আজ গান নয়। গান মনকে বড় উদাস ক’রে তোলে | —কিন্তু আমাকে ভাবতে সাহায্য করে। বাণেশ্বর খোলা দরজার দিকে বার-বার চাহিতে লাগিল ।