পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগতানুe অরুণ নিজ চিন্তায় এত মগ্ন ছিল যে সে লক্ষ্য করিল না, প্রতিমা ঘরে প্রবেশ করিতে বাণেশ্বরের মুখ কিরূপ উজ্জল হইয়া উঠিল । ( २७ ) পুরাতন বড়ির সিমেন্ট-ওঠা বড় উঠান ঘেরিয়া তিন দিকে ঘরের সরি। দোতলায় পূৰ্ব্বণিকে কোন ঘঃ নাই, খোলা ছাদ, ছাদের দেওয়াল উচু উঠিয়া গিয়াছে। উমার ঘরটি দোতলায় পূর্ব উত্তর কোণে, ছোট্ট ঘর। পূৰ্ব্বে উহা বাক্স-পেটরা রখিবার ঘররূপে ব্যবহৃত হইত। দোতলায় আর খালি ঘর নাই। একতলার ঘরগুলি স্যাতসেতে অন্ধকার । সেজন্য এই ছোট ঘরখানিই উমাকে লঃ তে হইয়াছে। স্কুলে পড়িবার সময় তিন বোন এক বড় ঘরে গুহত । কলেজে ভৰ্ত্তি হইয়া উমা বলিল, তাহার আলাদা ঘর না হইলে পড়ার বড় অসুবিধা হয়, তাহাকে অধিক রাত্রি জাগিয়া পড়িতে হয়, ঘরে আলো জলিলে শীলার ঘুম হয় না। সরু ছোট ঘরটিতে এক ছোট তক্তাপোষ, এক ছোট টেবিল, একথ,নি চেয়ার ও একটি নীচু আলমারী ঠাসাঠাসি বরিয়া রাখা । আলমারীতে অৰ্দ্ধেক বই ও অৰ্দ্ধেক শাড়ী ভরা। পূর্বে ও উত্তরে দুষ্ট ছোট জানালায় পুরাতন সিদ্ধের শাড়ীর সোনালী পাড়-দেওয়া নীল পর্দা টাঙান। উত্তরের জানালী দিয়া পাশের বাড়ির ভাড়ার-ঘর দেখা যায়, সেজন্ত জান লাটি সারাদিন বন্ধ থাকে। পূবের জানালা দিয়া দেখা যায় খানিকট পোড়ে জমি, সরু গলির প্রান্তে ল্যাম্প-পোষ্ট, একটি অষত্ব-বৰ্দ্ধিত আমগাছ। দক্ষিণমুখী দরজায় খয়ের রঙের পর্দা সৰ্ব্ব সময়ে ঝোলে। এই পর্দা তুলিয়া ঘরে প্রবেশের অধিকার কাহারও নাই, এই পর্দা সরাইয়া প্রিয়া তরণীর আশা-ভরা খুণী-ভরা সাজানো ঘরটিতে ক্ষণিকের জন্য শাস্তভাবে বসিয়া থাকিবার আনন্দলাভ করিতে অরুণ তৃষিত । অরুণ কিন্তু ঠাট্টা করিয়া বলে, উমার ডেন' (T উমা এই ক্ষুদ্র গৃহটি অধিকার করিয়াছে কেবলমাত্র পড়াশোনা করিবার জন্য নয়। গৃহের সম্মুখে চওড়া ঢাকা বারান্দাতেই বেশী ক্ষণ পড়াশোনা করিতে হয়। এই গৃহটি উমার শাস্তির আশ্রয়, স্বাধীনতার প্রতীক, a room of Poe's own । এই গৃহে সে আপন খুলমত বলিতে, গুইতে, औषनiद्मन ఇeve ভাবিতে, পড়িতে পারে। পূবের জানালা খুলিয়া দিয়া বিছানায় এলাইয়া গুইয়া নানা আজগুবি চিস্তা করিতে পারে। এখানে সে হঠাৎ গান গাহিয়া ওঠে, মুখ গম্ভীর করিয়া বসে, অয়নায় নিজের মুখ যতক্ষণ ইচ্ছা দেখে, আপন মনে হাসিয়া ওঠে, চুলের বিমুনী খুলিয়া যেমন ইচ্ছ চুল বঁধে, হাসি পাইলে হাসে, কল্লা পাইলে মন খুলিয়া কঁদিতে পা র, কেহ প্রশ্ন করিবে না, বারণ করিবে না, অযথা সহানুভূতি দেখাইয়া বা অবাক হইয়া জিজ্ঞাসা করবে না তাহার কি হইয়াছে। যুবতী-চিত্তের নানা চঞ্চল্য প্রকাশের এখানে কোন বাধা নাই। এখানে মা আসিয়া বলিতে পারেন না, কি বসে বসে ভবছিস ; শীলা গলা জড়াইয়া বলিতে পারে না, দিদি শরীর ভাল নেই বুঝি, মাথাটা টিপে দেব ; চন্দ্র আসিয়া জালাতন করিতে পারে না, দিদি অঙ্কটা বুঝিয়ে দাও। এ ছোট ঘরে সে স্বতন্ত্র, স্বাধীন। মাঝে মাঝে উমার বড় শ্রাস্তি বোধ হয়, চারি দিকের লোকজন বিরক্তিকর মনে হয়, নিজ পরিবারের জীবনধারা হইতে সে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইতে চায়। কলেজজীবন আরম্ভ হইবার পর হইতে তাহার স্বাতন্ত্ৰবোধ উগ্র হইয়াছে। সে এই ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করে । অকারণে তাহার কান্না পায় । আবার কোনদিন তাহার মন অজানা খুশীতে ভরিয় ওঠে, হৃদয় আনন্দে উপছিয়া পড়িতে চায়। তাহার কোন চিত্তচাঞ্চল্য বাহিরে প্রকাশ করিতে চায় না, ছোট ঘরখানি সে মোছে, ঝাড়ে, গান গাহিয়া ওঠে। মিউনিসিপ্যালিটির ময়ল-গাড়ীর চাকার ঝনঝনানিতে বা গলিতে জল-দেওয়ার শব্দে উমার ঘুম ভাঙিয়া যায়। বাহিরে তখন অন্ধকার, জানালার গরাদের কাছে তারাগুলি দপদপ, করে, আমগাছে কয়েকটি কাক ডাকিয় ওঠে, পশ্চিম দেওয়ালে ঝুলান মিলের (Millet) মিনারস (Gleaners) ছবিখানির উপর ভোরের আলো ঝকৃমক করে। উমা চোখ রগড়াইয়া উঠিয়া বসে, বড় ঘড়ির কঁটাগুলির দিকে তাকায়, চুলগুলি কুণ্ডলী পাকাইয়া বধিয়া লয়, একটা চটি খুজিয় পায় না, শুধু-পায়েই বারানায় বাহির হইয়া যায়। সমস্ত বাড়ি নিদ্রিত, নিবন্ধ। পূৰ্ব্বাকাশে রাঙা আলো। কবিৰ করিবার সময় নাই। লজিকের নোট মুখস্থ করিতে