পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\, প্রবাসী SN○●ー。 স্বপ্নও মাঝে মাঝে সত্য হইয় ওঠে, কিন্তু পূর্ণরূপে সত্য হয় না, ইহাই জীবনের ট্র্যাজেডি। ছুটির দিন। আতপ্ত দিনের শেষে দক্ষিণ-সমীর-স্নিগ্ধ সন্ধ্য রঙীন হইয়া উঠিয়াছে। পূৰ্ব্বাকাশ পিছর-রঙের মেঘে ভরা । বাড়িটি নিস্তব্ধ। উমার ঘরের সম্মুখের বারান্দায় অরুণ চুপ করিয়া দাড়াইল। উমা ঘরের ভিতর হইতে স্নিগ্ধস্বরে ডাকিল—অরুণ ! –এই যে আমি, বারান্দায় । —এস, ঘরে এস । —যাব ? —ই, এস ঘরের ভেতর । খয়ের-রঙের পর্দ:র দিকে অরুণ চাহিয়া রহিল । ওই পর্দার আড়ালে উমার ছোট ঘরটি দেখা, যেন তাহার স্বপ্ন । আজ উমার আহবান শুনিয়া সে কম্পিত পদে অগ্রসর হইল । —কই এস । ধীরে পদ তুলিয়া অরুণ ছোট ঘরটিতে প্রবেশ করিল। —অমুখ করেছে নাকি ? --অম্লখ করতে যাবে কেন ? ব’স চেয়ারটায়। ঘরে খুব বেশী স্থান নেই, দেখতেই পাচ্ছ । —ব, কি মুন্দর ঘর। —বল, স্বপ্নের মত, ওইটি ত তোমার ফেবারিটু উপমা । —সত্যি, এই রকম বেশ ছোট সাজান ঘর আমার বড় ভাল লাগে । —ব, দাড়িয়ে রইলে যে, ব’ল । মিলের ছবিখানা তুমিই ত দিয়েছিলে । এর কাচটা ফেটে গেছে। —কাল লিণ্ড, সারিয়ে দেব। —কি এভ ই ক'রে দেখছ। লক্ষ্মীটি, আমার বইগুলি ঘেটে না, খুলো না খাতা। ওই জন্যেই ত তোমায় ঘরে জাস্তে দিই না। বই-খাটা তোমার রোগ। —আচ্ছ, এই চুপ করে বসলুম ! —চুপ ক'রে বসতে কে বলছে । জীবনের গভীর কাতরতা তৃষ্ণায় ভরা অরুণের কালে চোখ দুইটির দিকে চাহিয়া উমার কেমন ভয় হইল। স্নিগ্ধকণ্ঠে সে বলিল, তোমার কি হয়েছে বল ত অরশ, কি একটা তোমার হয়েছে। রক্তিম মুখে অরুণ বলিল, কি হবে, কিছুই না, শরীরটা তেমন ভাল নাই । ব্যগ্ৰকণ্ঠে উমা বলিল, ন, আরও কিছু, আমি বুঝতে পারছি। অরুণ ধীরে বলিল, যদি বুঝতে পেরে থাক, তবে বলার আর দরকার কি ? —কি যে কবিত্ব করো ? —কবির কাছে কবিত্ব তার সত্যিকার জীবন নয় কি ? অরুণের রক্তহীন মুখের দিকে উমা ছলছল চোখে চাহিয় রহিল। মুখে কোন কথা আসিল না। - দুই জনে স্তন্ধ বসিয়া রহিল। অরুণ ভাবিতে লাগিল, উমা কি শুনিতে চায় ? উমা কি শুনিতে চায়, অরুণ বলিবে, উমা তোমাকে আমি ভালবাসি, আমার সমস্ত আত্মা দিয়া তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু এ কথাত উম জানে, এ কথা ত উমা বুঝিতে পারিতেছে। অরুণ কিছু বলিতে পারিল না। এ তাহার ভীরুত, তাহার লজ্জা নয়। অরুণ ভাবিতেছিল, "তোমাকে ভালবাসি’ এই দুইটি কথায় জীবনের গভীরতম হৃদয়াবেগকে কতটুকু প্রকাশ করা যায় ? যাহাকে ভালবাসি, সে-কথা নিজ অস্তরে সে যদি না অনুভব করিয়া থাকে তবে কথা দিয়া তাহাকে কি বুঝাইব ! কথা ত অস্তরের বেদনাকে প্রকাশ করে না, না-বোঝার আড়াল স্বষ্টি করে। আর উমা কি ভাবিতেছিল তাহা সে নিজেই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। শুধু বুকে একটা অজানা বেদন অমুভব করিতেছিল, হৃৎপিণ্ডের রক্তচলাচলের ছন্দ যেন বারবার কাটিয়া যাইতেছে। বিহবলমুখে অরুণের দিকে চাহিয়৷ উমা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া দাড়াইয়া উঠিল। —চল ছাদে, ঘরে বড় গরম। —তোমার ঘরটি বড় ভাল লাগল। মাঝে মাঝে আসতে ডেকো । স্বসময় বহিয়া গেল। আমগাছের আড়ালে চতুর্দশীর চন্দ্র উঠিল। বাতাসে কালো পদ কঁপিতে লাগিল । অরুণ চুপ করিয়া রহিল। কোন কথা বলা হইল না। ( ቐቐቑ )