পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ দুর্গ সম্মুখে আসিল না, মোট শক্ত এক টুকরা কাপড়ের পাড়ের ফালি মমতার কোলের কাছে টুপ করিয়া পড়িল । সেই , ফালি দিয়া মমতা কবিয়া স্কটকেলটাকে বধিতে লাগিল । এমন সময় গাডু-হাতে হরিশ আসিয়া ছয়ারে দাড়াইল । বলিল,—ওকি মায়, ওটাকে আমন ক'রে বাধছিল কেন ? মমতা মুখে হাসি টানিয়া আনিয়া বলিল, একটা জিনিষ ভুলে এসেছি, কাক, আমায় আজই যেতে হবে। হরিশ বলিল,—চিঠি লিখে না-হয় আনিয়ে নে। এই জলে যাবি কোথায় ? মমতা ঘাড় নাড়িল,—না কাক, আজই যেতে হবে, নইলে অনেক লোকসান হবে। ক'টায় ট্রেন ? আপনি বরঞ্চ কষ্ট ক'রে একখানা গরুর গাড়ী ডেকে দিন । বিশেষ পীড়াপীড়ি না করিয়া হরিশ বাহির হইয় গেল । কাল রান্ত্রিতে ছৰ্গার মুখে ষে সঙ্কল্পের কথা সে গুনিয়াছে, কোন মতে মমতাকে সরাইতে পারিলে সে বঁাচে ৷ 彎 翻 鲁 দুর্গ স্নান সারিয়া আসিয়া দেখিল, হরিশ মাথায় হাত দিয়া দাওয়ায় বসিয়া আছে। ছেলেরা ঘরের মধ্যে হুড়াহুড়ি করিতেছে, মমতাকে কোথাও দেখা গেল না । ছোট ঘরে সে নাই, দাওয়ায় নাই, বড় ঘরেও নাই। মমতা চলিয়া গিয়াছে—এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহই নাই। যাক, মমতা চলিয়া গিয়াছে। পুকুরঘাটে দুর্গ অনেকখানি দেরি করিয়াছে। এ-দেরি তার ইচ্ছাকৃত নহে। বহুদিন পরে সাবান দিয়া ঘষিয়া ঘষিয়া সে গা মজিয়াছে, মুখখানাও লাল হইয়া উঠিয়াছে । ( অবশু দুর্গার বিশ্বাস আজও তার মুখে যত্ন করিলে গোলাপের বর্ণ ফুটিয়া উঠে !) বেশ সাবান, ভুরকুরে করবীর গন্ধ। হাতখানা কতবার নাকের কাছে তুলিয়া দুর্গ পরমপুলকে সে-গন্ধ আগ্রীণ করিয়াছে। স্বানান্তে যেমন শরীর হালকা হইয়াছে, তেমনি নামিয় গিয়াছে মনের বোঝা । বহুদিনকার বিস্তুত একটা গানের কলি দুর্গার মনে পড়িতেছে। সাল্পনাসিক স্বরে দুর্গ বুঝি গুণ শুন করিতেছে । ঘরে জাসিয়া জুর্গ কাপড় ছাড়িল। জরিপাড় শাড়ী তৃষ্ণ। . NO$ê হেনার গন্ধে ভরা। আঃ—আঃ—নাসিকা আজ পঞ্চেজিয়ের কাজ করিতেছে। ছৰ্গার বুকে চঞ্চল রক্তস্রোত অকারণে ঢেউ তুলিয়া জাছাড় খাইতেছে, পা ছুখান ষেন দেহের ভার বহিতে পারিতেছে না। দুর্গ কি করিবে ? রূঢ় কথা সে জীবনে বলিবে না। খাওয়া, শোওয়া বা তুচ্ছ কথা লইয়া সে অনর্থক কাহারও সহিত কলহু করিবে না। ওই সহিষ্ণু মেয়েটির মত অতিবড় ক্ষতিতেও সে নিঃশৰ রহিবে, লাঞ্ছিত হইলেও হাসির আবরণে সে লাঞ্ছনাকে জয় করিবে। সে যে আজ পরিপূর্ণ। ওই মেয়েটির মত সৰ্ব্বদিক দিয়াই পরিপূর্ণ। সম্পদে ঐতে ক্ষমায় স্নেহে সৌন্দর্ঘ্যে ও ভালবাসায় দুর্গার মহিমা ওই মেয়েটির চেয়ে কম কিলে । পুরাতন চালে নূতন খড় উঠবে, উঠানের সীমা নির্দেশ করিয়া শক্ত বেড়ার বেষ্টনী পড়িবে, নূতন গোলায় নূতন ধান, টেকিশালে টেকি, গোয়ালে দুগ্ধবতী গাভী, নবপরিচ্ছদে ভূষিত ছেলেদের হাসি হাসি মুখ—আর দাওয়ায় বসিয়া সে আর হরিশ এই অবিশ্রাস্ত বর্ষণকে সম্মুখে রাখিয়া কত কি বলিবে—প্রথম দিনের প্রথম পরিচয় যে-ভাবে স্বরু হইয়াছে— অতীতের সেই অলকাবাঞ্ছিত আনন্দ অকারণ উচ্চহাসির তরঙ্গে নির্বাধে তর তর করিয়া বহিবে । বাহুতে বাছ— रुं कंठै--यथ८ब्र হরিশ ডাকিল,—গুনছ ? আজ রান্না হবে না ? দুর্গ ভাঙা আরসীট হাতে লইয়া ঘরের মধ্য হইতে উত্তর দিল,—এই চট্‌ ক’রে খিচুড়ি চাপিয়ে দিই, তুমি ইলিস মাছের চেষ্টা দেখ । হরিশের মেজাজ ভাল ছিল না। রুক্ষ কণ্ঠে বলিল,—ঠাট্টা পরে করে, মেয়েটাকে তাড়িয়ে তোমার যেন রঙ্গ লেগেছে, আমার ত তা নয় । দুর্গ কোমল কণ্ঠে বলিল,—সত্যি বলছি—ঠাট্টা নয়। দুঃখু তোমারই আছে—আমার বুঝি নেই। হরিশ অতিমাত্রায় বিস্থিত হইয়া বলিল,—ব্যাপার কি ? তোমার গলার স্বর পর্য্যস্ত বদলে গেল নাকি ? তুমি কি নতুন হয়ে এলে ? দুর্গ মিষ্ট হাসিন্ধা বলিল,—নতুন মনে করত নতুন। এই নাও টাকা—লক্ষ্মীটি—শীগগির এস।