পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NVHo প্রবৃত্তি হয় না। হোটেলেও অবশ্য একই বাথ সকলেই ব্যবহার করে, তবুও সেখানে দেখেছি তারা পরিষ্কার রাখে খুব, ও বাথরুমসমেত ঘর নিলে যে ক'দিন সেখানে থাকৃছি কেবলমাত্র নিজেরাই ব্যবহার করতে পারি, এবং এ-রকম বাথরুম আমরা নিজের ভাল ক'রে ফিনাইল দিয়ে ধুয়ে ব্যবহারও করেছি। আমাদের কিছুদিন থাকৃবার পর, অস্থবিধা বোধ হওয়াতে আবার হোটেলে ফিরে এলুম। প্রত্যেক সপ্তাহেই টমাস কুকের অফিসে দেশের চিঠিপত্র আনতে যেতম। সেখানে বসে বাড়িতে চিঠিপত্র লেখাও যায়। টেবিল, চেয়ার, কালি, কলম, খাম, কাগজ সব সাজানে আছে, খালি টিকিটের দামটি দিতে হয় । লণ্ডন শহরে বাঙালী ছাত্র অনেক আছে, মাঝে মাঝে রাস্তায় দু-এক জনের সঙ্গে দেখা হয়। এখানে শহর অপেক্ষা শহরের বাহিরের দৃশ্য দেখতে অনেক স্বন্দর। ছোট ছোট পল্লীগ্রামের বাড়িঘর ও ফুলের বাগানগুলি খুব পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন। এখানে থাকৃতে থাকৃতে বেশ গরম পড়ে গেল। আমাদের দেশের ফাল্গুন-চৈত্রের মত। এখানকার লোকের কাছে খবর পেলুম, অনেক কাল পরে এবার এ-রকম গরম পড়েছে। সঙ্গে যা গরম কাপড়চোপড় এনেছিলুম, বিশেষ কিছু দরকার হ’ল না। রাস্তাঘাটে, ট্রামে, বাসে ঘোরাঘুরির সময় লক্ষ্য করতুম পুরুষ অপেক্ষ স্ত্রীলোকের ভীড়ই বেশী, বাসে ত্ৰিশ জন লোক থাকলে তার মধ্যে পচিশ-স্থাব্বিশ জন স্ত্রীলোক হবেই। এখানকার লোকদের মুখে শুনেছি গত মহাযুদ্ধের সময় অনেক পুরুষের জীবন নষ্ট হওয়াতে লণ্ডনের মেয়ের সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গেছে। কন্টিনেণ্টেও এটা দেখতে পেয়েছিলুম। ভারত-প্রত্যাগত সাহেব-মেম অপেক্ষ এদেশের এরা অনেক কম থায়, বিশেষ মেয়েগুলি । তারা সারাদিনে হয়ত দু-চার গেলাস বয়ার ও একটি আপেল ও দু-টুকরা রুটি থেয়ে থাকে। সকলেই যে এরকম খায় তা নয়, তবে বেশীর ভাগই । কলকাতার আমাদের পাড়ার একটি ছেলে লওনে পড়তে গিয়েছিল । সে আমার কাছে লণ্ডনের অতি সাধারণ মেয়েদের ধরণ সম্বন্ধে যে-রকম ভাষায় গল্প করেছিল, আমি ঠিক সেই রকম ভাবেই বলছি । এটা হ’ল অতি সাধারণ মেয়েদের ধরণ—"সকাল হ’ল, কোন রকমে এক বাট চা প্রবাসী SNరీg$్న খেয়েই পরনের ময়লা জামাটির উপরে একটি চকচকে কোঃ পরে ভেতরের জামাটিকে ঢেকে দিলে, তার পরে গানে রুজ লাগিয়ে, ঠোঁটে লাল রং দিয়ে, মাথায় টুপি এটে নিজে । কৰ্ম্মস্থানের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল। সারাদিন খেটে খালি মাত্র বান হজম করে সন্ধ্যাবেল ঘরে এল। তার পর তার ছেলে-বন্ধু এল। আবার সাজগোজ ক'রে বেরিয়ে গেল। বাড়িতে রান্নার পাট নেই। ছেলে-বন্ধু তাকে কোন সস্ত| হোটেলে নিয়ে গিয়ে দু-শিলিং খরচ ক’রে খাওয়াল। তার পর তার সঙ্গে সারারাত নাচল । রাত চারটায় বাড়ি এল” ইত্যাদি। . লণ্ডনের আনডার-গ্রাউণ্ড সাবওয়ে বা রাস্তার নীচে দিয়ে লোক-চলাচলের ব্যবস্থার কথা আগেই বলেছি। এবার আনডার-গ্রাউণ্ড টিউব রেলওয়ের কথা বলব। লণ্ডন শহরটি আগা-গোড়া ফাপ বললেও চলে। মাটির নীচে দিয়ে লোকচলাচল করছে। এর নাম আনডার-গ্রাউণ্ড সাব-ওয়ে। এ ছাড়া এক রকম ট্রেন-চলাচল করে মাটির নীচে দিয়ে, তার নাম মেট্রোপলিটান রেলওয়ে। এই ট্রেনের মাত্র দু-একটি কামরা ছাড়া আর সবগুলিতেই ধূমপান নিষেধ । এটি অন্ধকারেব মধ্যে দিয়ে চলে। ট্রেনের ভেতর ইলেক্‌টিক আলোর বন্দোবস্ত আছে । মাঝে মাঝে কয়েক সেকেণ্ডের জন্য দিনের আলোও দেখতে পাওয়া যায়। এর নীচে আর একটি ব্যাপার আছে, সেটি টিউব-ষ্টেশন। এটি কত হাজার ফুট নীচু তা জানি না। আগে এখানে নামবার দরকার হ'লে রাস্তার উপর থেকে লিফটে ক’রে নাম যেত, এখন বিজ্ঞানের উন্নতি হওয়ায় লিফট তুলে দিয়ে এসকেলেটার বা চলন্ত সিড়ির প্রচলন হয়েছে। তোমাকে কষ্ট ক’রে অত সিড়ি ভাঙতে হবে না। তুমি শুধু সিড়ির প্রথম ধাপে পা ঠিক ক'রে দাড়াও, তার পর সিড়ি তোমায় নামিয়ে নিয়ে চলল। সেই প্ল্যাটফরমের উপর পৌছে সিড়ির ধাপ মিলিয়ে যাবে। এই সময় শরীরে একট মৃত্যু ঝাকুনি অনুভব হয়। নীচে অন্ধকার সুড়ঙ্গ । সরীস্বপের মত একেবেঁকে শহরের সর্বত্র, এমন বি টেম্সের তলদেশ পৰ্য্যন্ত ছাড়িয়ে চলে গেছে। এরই নাম টিউব। এর ভেতর দিয়েই ট্রেন চলে। পাচ মিনিট অস্ত একটি-দুটি ট্রেন হুড়মুড় ক’রে এসে থামছে। প্রত্যের্ণ