পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

rN93 স্বগের পথ নয়। জীবনের অনাস্বাদিত আনন্দরস পান করিতে হইবে । উমা কি ভাবে ? উমার কথা ভাবিতে গিয়া অরুণের চিস্তার সুত্র বারবার ছিন্ন হইয়া যাইতে লাগিল । আপন মনে সে হাসিয়া উঠিল। আকাশভরা অন্ধকারের দিকে চাহিয়া রহিল। অরশ চমকিয়া উঠিল । এক কালো ছায় তাহার সম্মুখে জাড়াইয়া, অবগুষ্ঠিত নারীর মত। বলিল-অরুণ তোমাকে আমি করুণা করি । অরশ তীক্ষ স্বরে বলিল—করুণ ? তোমার করুণা কে চায়, কে তুমি ? —আমি তোমার হৃদয়শতদলবাসিনী, জীবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। —তুমি মায়াবিনী, মানি না তোমাকে । আমি মানি আমার আত্মাকে ও মানবাত্মাকে । —তোমার ভাগ্যে অশেষ দুঃখ দেখছি। —দুঃথকে আমি ভয় করি না। আমার আত্মা বীর পথিক । —তুমি আমার পূজা কর। —তুমি অলীক মাম্বা, দুৰ্ব্বল ভীরুতা, কালো ছায়া আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না । জীবনকে আমি বরণ করেছি, জীবনের সকল আনন্দ সকল বেদনাকে গ্রহণ করলুম। তোমার সঙ্গে মুখোমুখি দাড়িয়ে লড়াই করব। আবেগের সহিত অরশ দাড়াইয়া উঠিল। সে ছায়ামূৰ্ত্তিও দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর হইতে লাগিল। দেবদারু বৃক্ষগুলির শীর্ষ ছাড়াইয়া অনস্ত আকাশের অন্ধকারে তাহার বিরাট দেহ ক্রমশঃ বিলীন হইয়া গেল । এ-কি অপরূপ বিশ্বব্যাপিনী নারীমুক্তি 1 নিবিড় তিমির প্রসারিণী ঘনকৃষ্ণকুন্তলরাশি অনন্তগগনে পরিব্যাপ্ত ; কেশদামে অগ্নিস্ফুলিজের মত তারকার মালা ; দীপ্ত নয়নে বিদ্যুদাম ঝলসিয়া নৃত্য করিতেছে ; বজ্রগর্জনে রুদ্র-ঝঞ্চায় তাহার অট্টহাস্ত ; সে হান্তে স্বটি বুঝি চূৰ্ণবিচূর্ণ হইয়া যাইবে। জীবধাত্রী পৃথিবী তাহার পদতল ; সপ্তলোক তাহার বিরাট দেহ; ভূলোক ফুৰলোকে পরিব্যাপ্ত শক্তিরূপিণী। প্রবাসী $NC@足 অগ্নি তাহার চক্ষু, অন্ধকার তাহার ছায়, তাহার দক্ষিণু করের স্পর্শে জীবন, বামহস্তের স্পর্শে মৃত্যু, এই মায়সৌন্দর্য্য তাহার হাস্ত, মহাকাল তাহার গতি। অরুণের মাথা নত হইয়া আসিল । নিস্তরঙ্গ শাস্ত সমুদ্রের মত হৃদয় স্থির হইল। বৃষ্টি থামিয়া গিয়াছে। ধীর স্নিগ্ধ বাতাস। পূৰ্ব্বপ্রান্তে বৃক্ষরাজির পুঞ্জীভূত অন্ধকারের উপর চন্দ্রোদয় হইল। অতিস্নিগ্ধ তাহার আভা, অশ্রুসজল হাস্তের মত। নিস্তন্ধ গম্ভীর প্রকৃতির কি অপরূপ লাবণ্যমূৰ্ত্তি ! এমন শোভা অরুণ জীবনে কখনও দেখে নাই। রহস্যঘন দুঃখসস্কুল অন্ধকার পথ, তোমাকে আমি ভয় করি না। স্থকল্যাণী সৌন্দৰ্য্য-লক্ষ্মীর আনন্দ-হাস্ত আমার জীবনের পাথেয়। ( २> ) প্রথম যৌবনের প্রেম জীবনের মৰ্ম্মস্থলে নাড়া দেয়। সে প্রেম যদি সহজভাবে বিকশিত হইয়া উঠিতে পারে তাহা হইলে জীবন সরল মুখে ভরিয়া যায়। কিন্তু সে প্রেম যদি বাধা পায়, ঘূর্ণবৰ্ত্ত রচনা করে, তবে তাহার অস্তঃশীলা দুর্নিবার স্রোতে অভাবনীয় ভাঙাগড়ার লীলা আরম্ভ হয়, পদ্মার স্রোত যেমন এক ফুল ভাঙিয়া নূতন তীর গড়িয়া তোলে। প্রেমিকের চির-আন্দোলিত অস্তরে শাস্তি নাই। অপূৰ্ব্ব পুলক, অসহনীয় বেদনা। বিশেষতঃ প্রেমিক যখন কল্পনাবিলাসী আদর্শবাদী যুবক হয়, সে প্রেমাম্পদকে লাভ করিতে চায় না, সে চায় গভীর আত্মোপলব্ধি, আত্মোৎসর্গ করিতে। কখনও প্রেমের কেন্দ্রাভিগ শক্তিতে সে আত্মস্থ হয়, বিজন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিতা দেবীমূৰ্ত্তির সম্মুখে একাকী সাধকের মত সে গভীর আনন্দে মগ্ন হয়। কখনও প্রেমের কেন্দ্রাতিগ শক্তি তাহাকে ব্যথিত উদাসী করিয়া তোলে, পৃথিবীর সকল দুঃখীর সহিত সমবেদনায় অন্তর ভরিয়া ওঠে, সকল অবিচারঅত্যাচারের বিরুদ্ধে দাড়াইয়া সংগ্রাম করিতে ইচ্ছা করে । অন্ধভক্ত যেমন দেবীমূৰ্ত্তির পিছনে দেবীকে ভুলিয়া বিগ্ৰহ লইয়া.মাতিয় ওঠে তেমনই প্রেমিক প্রেমাম্পদকে লাভ করিবার কথা জুলিয়া যায়, প্রেমাম্পদ তাহার নিকট প্রতীক भोंख । ( ক্রমশঃ }