পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ বর্তমান জীবন-সমস্যার ভারতীয় মীমাংসা Oreo জগতের সর্বপ্রকার বিপৰ্য্যয়ই চিরদিন যৌবনের সাধনায় সুপৰ্য্যস্ত হইয়া আসিয়াছে। যৌবনের বংশীধ্বনিতেই যুগে যুগে বিশ্বমানবের বিপথগামী জীবন-যমুনা উজান বহিয়াছে। অনন্ত যৌবনের প্রতীক শ্ৰীকৃষ্ণের বংশীধ্বনিতেই মানুষ ভবের পথ ছাড়িয়া ব্রজের পথের পথিক হইয়াছে। আজিকার যৌবন কি বহুরাগাত্মিক এই বিষয়মত্ততাকে সঙ্গীতমুগ্ধ করিয়া সত্য ও কল্যাণের পথে আকর্ষণ করিতে পারিবে না ? হৃদয়কে বাদ দিয়া, পূর্ণ নিষ্ঠার সহিত মস্তিষ্ক ও বাহুবলের চর্চা পাশ্চাত্য জাতিগণ করিয়াছে । আজ যখন সহৃদয়তার প্রয়োজন সৰ্ব্বোপরি, তখন তাহার একেবারে নিরুপায় হইয়া পড়িয়াছে। অসংখ্যসমস্তাসস্কুল সংসার-সমুদ্রের তীরে বিমূঢ় অবস্থায় পাশ্চাত্যের স্পৰ্দ্ধিত বুদ্ধি আজ বাচিবার পথ খুজিতেছে। আজিকার একান্ত প্রয়োজনীয় সহৃদয়ত ও তেজস্বিতার একমাত্র অধিকারী যৌবন। বুদ্ধির সীমার বাহিরে বধির জগতে দিব্য চৈতন্তের গহবরেই মহামানবের মিলনভূমি। চৈতন্যের সেই উচ্চস্তরে বিশ্বাত্মার স্পর্শ লাভ করিয়াই মানবাত্মা অল্পতার অভিশাপে মুক্ত হয়। বাচিতে হইলে জগতকে আজ বুদ্ধি হইতে বোধিতে উত্তীর্ণ হইতে হইবে । এ যুগে মানবজীবনে শ্ৰীভগবানের আসন গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন। জীবনের মহাকেন্দ্রে জীবনদাতা আনন্দময়ের অনধিষ্ঠান হেতু আজ জীবন উৎসবহীন এক দুৰ্ব্বহ অভিশাপ । বর্তমানে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা আছে, কিন্তু বিসর্জন নাই। জীবনকে যজ্ঞরূপে গ্রহণ করিয়া সেই মহাযজ্ঞের শ্রেষ্ঠ অৰ্ঘ্য সৰ্ব্বষজ্ঞেশ্বর ভগবানকে এই সভ্যতা উৎসর্গ করিতে পারে নাই বলিয়া, ইহার অনুষ্ঠিত দক্ষযজ্ঞ সকল দিক দিয়াই বিশৃঙ্খল ও বিয়বহুল হইয়া উঠিয়াছে। আজ চাই উৎসর্গ, নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্ত নয়, সমাজ বা দেশের জন্যও ন, সকলের উন্ধে যার স্থান সেই মুহুতো মহীয়ান জগদীশ্বরের উদ্দেশে আত্মসমর্পণ। পশুত্বের নাশ ও মকুন্তত্বের বিকাশ জন্যই যে শ্ৰেয়ের জন্ত প্রেয় ত্যাগ। ভগবদবৈমুখাই এ যুগের একমাত্র সমস্ত এবং কল্যাণময় ভগবানের সহিত বিশ্বমানবের বিচ্ছিন্ন জীবনধারার পুনঃসংযোজনই উহার সমাধান। এই মহা সংযোজনই যৌবনের দায়িত্ব এবং উহা পালনের যোগ্যতায়ই তাহার মহত্ব। রবীন্দ্রনাথ স্বহস্তে ধৌবনকে রাজটীকা পরাইয়া বস্তুর গওঁী ভাঙিয়া ভাবজগতে প্রধাবিত হওয়ার নির্দেশ দিয়াছেন, ‘শুধু ধাও, শুধু ধাও, শুধু বেগে ধাও উদাম উধাও, ফিরে নাহি চাও, বা-কিছু তোমার সব দুই হাতে ফেলে ফেলে বাও । কুড়ায়ে লও না কিছু কর না সঞ্চয় নাই শোক নাই মৃত্যু ভয়, পথের আনন্দবেগে অবাধে পাথেয় কর ক্ষয় ; তোমার চরণস্পর্শে বিশ্বধুলি মলিনতা যায় ভুলি, পলকে পলকে মৃত্যু ওঠে প্রাণ হয়ে ঝলকে ঝলকে-- যদি তুমি মুহূর্তের তরে ক্লাস্তিভরে দাড়াও থমকি - অমনি চমকি উচ্ছি য়; উঠিবে বিশ্ব পুঞ্জ পুঞ্জ বস্তুর পর্বতে। সামাজিক ভাবে বিশ্বব্যাধির চিকিৎসা-ব্যবস্থা পাশ্চাত্যের যুবকবন্ধুগণ দিয়াছেন এবং আধ্যাত্মিক প্রতীকার-ব্যবস্থার জন্ত তাহারা প্রাচ্যের জাগ্ৰত যৌবনের নিকট আস্তরিকতার সহিত আবেদন করিয়াছেন । পশ্চিম হইতে আহবান আসিয়াছে। আজ ভারতের স্বারে,—কে আছ, মনে প্রাণে খাটি ভারতবাসী, সাড়া দাও, সাড়া দাও, বিশ্ববাসীর মূর্ছাতুর প্রাণে আজ অমৃত ঢালিতে হইবে। এই প্রাচীনতম সভ্যতার জীর্ণ বক্ষপুটে যে আনন্দরূপ অমৃত আছে, আনন্দহীন মুযুধু জগৎ আজ তাহারই প্রার্থী। এই উচ্ছম্বল গতিজালার মধ্যে সেই অচল বিমল ভূমানন্দকে সম্যকরূপে উদ্বোধিত করিতে হইবে। হে অমৃতের পুত্র ! তোমার জীবনে নূতন জীবন লাভ করিয়াই যে মরণ-ক্লান্ত জগৎ আসন্ন মৃত্যুকে জয় করিবে। হে শৰ্ম্মন, সকলকে বঁাচাইয়া বঁাচাই যে তোমার চিরন্তন আদর্শ। স্থদীর্ঘকাল বস্তুবিলাসের মধ্য দিয়া মানবজাতি মরণ-সিন্ধুর তটপ্রান্তে উপনীত ; হে অগ্রজ, সমুদ্রত হিমাত্রিশিখর হইতে প্রাণধর্শ্বের দ্রবময়ী ভাবগঙ্গার মহাপ্লাবন রূপে নামিয়া এস এই মৃত্যুর লীলানন্তনের মধ্যে। এই ভারতের তপোবনে ও রাজাসনে একদিন যে প্রাণ স্বীয় মহিমায় দেদীপ্যমান ছিল এই চতুদিকের প্রাণহীণ নির্দয়তার মধ্যে আজ তাহারই প্রয়োজন। যদিও বাছিয়ে আজ তুমি সৰ্ব্বহার চিররিক্ত, তথাপি অন্তরে তুমি সবার পূজ্য চিরগরীয়ান।