পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্তমান সভ্যতা ও ক্ষয়রোগ শ্ৰীধীরেন্দ্রচন্দ্র লাহিড়ী সভ্যতার সত্য রূপ যে কি তাহ বর্ণনা করা অসম্ভব । পূৰ্ব্বে যাহা সভ্যতা ছিল, তাহা বৰ্ত্তমানে অসভ্যতা ; এখন যাহা সভ্যতা ভবিষ্যতে হয়ত তাহাই আবার অসভ্যতা হইবে। 'সভ্যতা’ কথাটিতে আমাদের মস্তিক্ষে কতকগুলি ভাবের উদয় হয় । কিন্তু সে ভাবগুলি দেশবিশেষে এবং মনুষ্যবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন আকার ধারণ করে । শ্ৰীকৃষ্ণ ংসের সভায় প্রবেশ করিলে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির লোক তাহাকে ভিন্ন ভিন্ন আকারে দেখিয়াছিল । কিন্তু সত্যই শ্ৰীকৃষ্ণের আরুতি একরূপই ছিল । দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, সমাজ-সংস্কারক-প্রত্যেকের নিকট সভ্যতার রূপ, কিযুৎপরিমাণে ভিন্ন হইলেও প্রকৃতি প্রায় এক ।

প্রথমতঃ, যেদেশে যক্ষশক্তি যত বেশী সে-দেশ তত সভ্য। দ্বিতীয়তঃ, যেদেশে জীবিক-অর্জন যত কষ্ট সাধ্য এবং জীবিকা-নিৰ্ব্বাহ যত ব্যয়সাপেক্ষ, সে-দেশ তত সভ্য। তৃতীয়তঃ, যেদেশে মাতৃঞ্জাতি প্রকৃতির বিরুদ্ধে যত বেশী যুদ্ধ করিতেছেন এবং জয়লাভ করিতেছেন বলিয়া ভাবিতেছেন, সেদেশ তত বেশী সভ্য। প্রকৃত সভ্যতার রূপ এমনই কিনা কে জানে। একমাত্র কালের বিবৰ্ত্তন তাহ প্রমাণ করিতে পারে । তথাকথিত সভ্যতার বর্তমানকালীন রূপ ইহাই কল্পনা করিলে বেশী ভুল করা হয় না, এবং আমাদের দেশের পূৰ্ব্ব সভ্যতারও কোন গ্লানি করা হয় না। এই তথাকথিত সভ্যতার সহিত ক্ষয়রোগের অতি নিকট-সম্পর্ক । নিউ ইয়র্কের পোষ্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্থলের ক্ষয়রোগতত্ত্বের অধ্যাপক প্রফেসার এডলফাস ক্লফ-মার্কিন ভিষগ মণ্ডলীর দ্বিচারিংশ বার্ষিক অধিবেশনে, সভ্যতার সহিত ক্ষয়রোগে যন্ত্রণাভোগ এবং মৃত্যুর সম্পর্ক সম্বন্ধে আলোচনা-কালে মন্তব্য করেন, "ক্রাফট-এবিং এক সময়ে বলিয়াছিলেন যে সভ্যতা ও উপদংশ উভয়েই একত্র অবস্থান করে। ক্ষয়রোগ সম্বন্ধেও আমার তাঁহাই বলিতে আকাঙ্ক্ষ, কারণ ক্ষয়ুরোগেরও প্রকৃতই সভ্যতার সহিত অভিন্ন স্থিতি "* কি কারণে সভ্যতার সহিত ক্ষয়ুরোগের এত প্রীতি ? সভ্যতার আগমনের সহিত তাহার কতকগুলি প্রিয় অঙ্গচরও আগমন করে। যথা, কলকারখানা। অর্থাং ইওষ্ট্রি এবং তাহার চিরসহচরবৃন্দ--ধূসরধূম্ৰধূলিমলিন দরিদ্র শ্রমিক, ধরমস্তিষ্ক কূটবুদ্ধি অর্থশালী প্রভূ, ধিক্কার, হাহাকার, ক্ৰন্দন প্রভৃতি। খনিতে কাজ করিতে দুর্ঘটনা হইতে পারে, তাই বলিয়৷ খনির কাজ বন্ধ হইতে পারে না। অথবা ধূম, ধূলি ও দূষিত বাপ নিশ্বাসের সহিত গ্রহণ করিয়া লোকে ক্ষয়ুরোগের গ্রাসে সহজেই পড়িতে পারে, সেজন্য কারখানা বন্ধ হইতে পারে না। আমাদের যে সভ্যতা তাহার আনুষঙ্গিক উপকরণ চাই ! যন্ত্রদানবের আগমনের সঙ্গে দেশে আরও কয়েকটি পরিবর্তন হয়। যন্ত্রচালনার জন্য কিছু মানবশক্তিরও প্রয়োজন। এই শক্তি সরবরাহ করে দরিদ্র শ্রমিক । তাহারা পূৰ্ব্বে হয়ত গ্রামে বাস করিত, চাষ-আবাদ করিয়া অপেক্ষাকৃত স্বথে-স্বচ্ছন্দে থাকিত, প্রকৃতির উন্মুক্ত বায়ু হইতে জীবনীশক্তি গ্রহণ করিত । হঠাৎ শহরের আবহাওয়া, জনসমাকীর্ণ অস্বাস্থ্যকর বস্তি, অতিরিক্ত পরিশ্রম ও নিকৃষ্ট পল্লীর অন্যান্য অসংযমের মধ্যে আসিয়া, তাহার স্বদূঢ় শরীর ভাঙিয়া যায়,রোগের সহজ লীলাক্ষেত্র হইয় পড়ে । ইহার প্রমাণ, আমেরিকায় যে-সমস্ত শ্রমিক ইতালী অৰ্থ । আয়ালাগু হইতে আগমন করে, তাহদের মধ্যেই ক্ষয়রোগে ।

  • “Krafft-Ebing once said that civilization a syphilization go hand in hand. I am tempted to say to same of tuberculosis, for civilization and tuberculizat' do seehm indeed to go also hand in hand” (The Esse - of Civilization on the Morbidity and Mortality of Tuh". - culosis—By S. Adolphus Knopf M.D. Read before f : American Academy of Medicine at its 42nd annu meeting in New York City, June 4, 1917. Medi" Records. New York, 1917, vol. xcii, pp. 94-97).