পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাছৰ खुछ * ৫৭১ --তাই তরে টুলু! তোর তলোয়ারটা থাকলে তৰু কোথাও কেউ নেই, মাঝে মাঝে শুধু ইটের শুপ অনেকট। ভরসা থাকত । টুলুর কল্পনাশক্তি প্রবল হয়ে উঠল। কি রকম করে সে তরোয়াল দিয়ে একবার একটা বককে খুচিয়ে মেরেছিল— সেই মিথ্যে গল্পের বর্ণনা এমন নিখুঁতভাবে এবং অঙ্গভঙ্গী সহকারে করতে লাগল যে স্পষ্টই বোঝা গেল, ওর এই স্বরচিত উপন্যাসে ওর নিজের অন্ততঃ পুরো বিশ্বাস আছে। ইতিমধ্যে আমার মনের সেই গুমোট ভাবটা কখন স্বচ্ছ হয়ে এসেছে জানতেও পারি নি। টাঙ্গার এক পাশ দিয়ে গায়ে রোদুর লাগছে, মাঝে মাঝে দমূকা হাওয়ায় পথের দু-ধারের শুামলতায় দোলা লাগছে—আমার মনেও । কলকল ক’রে টুলু বকে চলেছে। রয়টারের সংবাদদাতার মত কান শুধু তার সারাংশটুকু নিয়ে মনের কাছে পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে কখন যেন ঐ টুলুর মতই বানানো কথার মোহ লেগে গেল। অতি লজ্জাজনক ভাবে ইচ্ছা করতে লাগল, টুলুর মতন অমূনি চেচাই, বাজে কথা বলি। হতে দাও বলে কেন শুধু বসে থাকা! হ’তে দিয়েও কিছু করা যায় না কি ? আর কিছুই না পারা যাকৃ, অন্ততঃ আমার সবে বাধী ঐ কুকুর সম্বন্ধে ছড়াটা দু-একবার স্বর করে বলতে ক্ষতি কি ? হঠাৎ টাঙ্গা থামল। এতক্ষণ লক্ষ্যই করি নি। এখন চেয়ে দেখি সাম্নেই সারনাথ। লজ্জিত হলুম নিজের লঘুfostā ol Geo ‘Motley is thy only wear' নিজেকে শাসিয়ে বললাম। পৃথিবীর ঘটনাসমাবেশকে যদি হেসে উড়িয়ে দেওয়া যেত তাহলে ক্লাউনই হ’ত পৃথিবীর শ্ৰেষ্ঠ ফিলজফার। গম্ভীর হয়ে গেলুম। মনকে প্রস্তুত করবার চেষ্টা করলাম যাতে ঐ সূপের সঙ্কেত অনুভব করতে পারি। টুলুকে বললাম, টুলু, এইব্রার মুখটি বুজোতে হবে। ঐ দেখ, সারনাথ। এখানে কথাবার্তা কয়বার উপায় নেই। শুধু আমি যা করব তাই করবি, আমি যা বলে দোৰ তাই শিখে রাখবি । ● নেমে নির্জন মাঠের মধ্যে চলতে লাগলাম–টুলুর হাত আমার মুঠোর মধ্যে। সেও ঠিক আমার অনুকরণ করে মাথা হেঁট ক'রে যেন দুনিয়ার ভাবনা ভাবতে ভাবতে চলেছে। গুলো পুরনো বিহারের লুপ্ত অস্তিত্ব জ্ঞাপন করছে। সামনেই বিরাটকায় সারনাথ শুপ। ঠিক তার পিছনে একটি স্বন্দর মন্দির, একেবারে আধুনিক কালের তৈরি। ডান দিকেও একটি মন্দির, তার মধ্যে বুদ্ধমূৰ্ত্তি আছে। সেখান থেকে পূজার স্তবগান শোনা যাচ্ছে। সারনাথের কাছে গিয়ে টুলুকে বললাম, এখানে মাখা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে হয়, নে প্ৰণাম কর। আমার সঙ্গে সঙ্গে টুলুও সূপে মাথা ঠেকালে। তার পর সসঙ্কোচে জিজ্ঞাসা করলে—এর ভেতর ঢুকবে না ? স্তুপের চার পাশে ঘুরিয়া সেটা যে অসম্ভব তা প্রমাণ করে দিলাম। টুলু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলে যে মন্দিরের মত নয় যখন তখন লোকে এখানে কি করে ? বললাম, ধ্যান করে। ধ্যান কাকে বলে জানিস্ ত ? বসে ব'সে ভগবানের কথা ভাবাকে ধ্যান বলে । তোর বাবা চুপচাপ বসে কি সব করে দেখেছিস ত ? ঐ দেখ, ঐ যে দেয়ালঘেরা গাছটা দেখছিল, ঐটে আগে খুব বড় ছিল। ওর তলায় বসে বুদ্ধদেব ধ্যান করেছিলেন। দেখছি না, ঐ নীচু দেয়ালটার ওপর কত লোক ফুল দিয়ে পূজো করে গিয়েছে ? অায় আমরাও ফুল দিই । মনে মনে টুলুর প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করলাম। একলা এলে নিজের অস্তরের শ্রদ্ধাটুকু একটু নতি, একটু নিবেদনের মধ্যে প্রকাশ করবার কোন ছলই মিলত না । সেইখানে ঘাসের ওপর ৰসে পড়লাম। টুলুর মুখটা একটু শুকুনো শুকুনো। বোধ হয় থিদে পেয়েছে, কিন্তু পৌরুষের অহঙ্কারে কিছু বলতে পারছে না। বিস্কুটগুলো বার করে দিতে একখানা পকেটে পুরে বাকিগুলো খেতে লাগল। পকেটেরটা বোধ হয় ফেরবার সময় টাঙ্গায় বসে খাবার ইচ্ছে। বিষ্ণুট খেতে খেতে হঠাৎ—আচ্ছ সেজমাম বুদ্ধদেব কে ? —কেন, তুই পণ্ডিস নি ? —না, কই এখনও পড়ি নি ত । আচ্ছা, বাড়ি গিয়ে একবার কথামালাটা খুজে দেখব । হাসি চেপে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ক’রে জানলি, কথামালায় বুদ্ধদেবের কথা আছে ?