পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ বিবিধ প্রসঙ্গ—অরাজনৈতিক প্রচেষ্টার আবরণে রাজনৈতিক উদেশ্যসাধন ৫৭৯ উদ্দেশু সিদ্ধির উপায়রপে ব্যবহৃত হইয়াছে ( “ostensibly non-political movements have been exploited for political ends" ) । কোন কোন স্থানের কোন কোন অরাজনৈতিক প্রচেষ্টা কোন কোন সময়ে কাহার কাহার দ্বারা রাজনৈতিক উদেশ্বসাধনের উপায়রূপে ব্যবহৃত হইয়াছে, গবন্মেন্টের তাহা বলা উচিত। নতুবা এইরূপ একটা সরকারী অভিযোগের ফলে সমুদয় অরাজনৈতিক প্রচেষ্টাই সন্দেহভাজন হইবে। অবশ্য বেসরকারী প্রত্যেক রাজনৈতিক ব। অরাজনৈতিক প্রচেষ্ট গবন্মেণ্টের সন্দেহভাজন। ভারতবর্ষে যত দিন বৈদেশিক শাসন থাকিবে, এই সন্দেহও তত দিন থাকিবে । বৈদেশিক শাসনের আমলে তাহার প্রতীকার নাই। কিন্তু গবন্মেন্টের এই অভিযোগে অন্তেরও সন্দেহের উদ্রেকের উদয় হইলে তাহ সব প্রচেষ্টার পক্ষেই অসুবিধাজনক ও ক্ষতির কারণ হইবে। কোন প্রচেষ্টাকে বাহিরে অরাজনৈতিক বলিয়া প্রচার করিয়া গোপনে তাহার দ্বার রাজনৈতিক কোন উদ্দেশু। সিদ্ধ করিবার চেষ্টা করা গহিত । বস্তুত:, কোন প্রকার প্রচেষ্টার উদ্দেশু এক রকম বলিয় তাহার দ্বারা অন্য উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিবার চেষ্টা মাত্রই নিন্দনীয়—প্রচেষ্টা রাজনৈতিক ইউক বা না হউক। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশু মাত্রই যে পারাপ, বা তাহ সিদ্ধ করিবার চেষ্টা করা খারাপ, ইহা সত্য নহে । ইহাও মনে রাখিতে হইবে, যে, সাক্ষাৎভাবে যে প্রচেষ্টা অরাজনৈতিক তাহ সফল হইলে পরোক্ষভাবে তাহ রাজনৈতিক ফলপ্রদও হইতে পারে। পাইয়োনীয়ার কাগজ :ধর্থন ইংরেজদের ছিল এবং যখন উহা এলাহাবাদ হইতে প্রকাশিত হইত, তখন তাহাতে একবার এই মৰ্ম্মের কথা লেখা হইয়াছিল, যে, গ্রীসের ও রোম সাম্রাজ্যের পতন অংশত: শ্যালেরিয়া প্রযুক্ত হইয়াছিল, এবং হয়ত অনেক বাঙালী বাৰু ধপ্ন দেখেন, যে, বাংলা দেশ ম্যালেরিয়াশূন্ত হইলে স্বাধীন ইষ্টতে পারবে। বঙ্গে ম্যালেরিয়ানাশার্থ অনেক সমিতি ছে, বাংলা-গবন্মেণ্টও বলেন, যে, ম্যালেরিয়ার উচ্ছেদের at:-3া করিতেছেন। তাহা হইলে এই ম্যালেরিয়া-নাশক মতিগুলি ও বাংল-গবন্মেণ্ট কি অরাজনৈতিক প্রচেষ্টার ম আবরণে রাজনৈতিক কাজ করিতেছেন? কৃষির উন্নতির সরকারী ও বেসরকারী চেষ্টা বঙ্গে ও ভারতবর্ষের অন্তত হইতেছে। যদি জমীতে বেশী শস্ত উৎপন্ন হয় এবং দেশের সর্বসাধারণ পেট ভরিয়া খাইতে পায়, তাহা হইলে তাহদের দেহ পুষ্ট হইবে এবং মানসিক মূৰ্ত্তি ও শক্তি বাড়িবে। সে অবস্থায় তাহদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অধিকার প্রাপ্তির অর্থাৎ স্বরাজলাভের ইচ্ছা জন্মিতে পারে এবং স্বরাজলাভের চেষ্টাও তাহারা করিতে পারে। তাহা হইলে কৃষির উন্নতির সরকারী ও বেসরকারী সমুদয় চেষ্টাই গুপ্ত রাজনৈতিক উদ্দেশুপ্রস্থত ! বস্তুত, মানুষ মাত্রেই- এবং ভারতীয় মাত্রেই, যে পেট ভরিয়া খাইতে পাইবার চেষ্টা করে, ইহা ভয়ানক বৈপ্লবিক উদ্দেশু হইতে উদ্ভূত। অনশনে বা অৰ্দ্ধাশনে যে ভারতবর্ষের লক্ষ লক্ষ লোক থাকে, তাহা আরও ভয়ঙ্কর বৈপ্লবিক । কেন-না, অনেক ইউরোপীয় ঐতিহাসিক বলেন, ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটিয়াছিল ফ্রান্স দেশের জনসাধারণ যথেষ্ট খাইতে পাইত না বলিয়া । অবশ্য গবন্মেন্টের সপক্ষেও কিছু বলা উচিত এবং বলা যাইতে পারে। শুধু গবন্মে ষ্টই যে বেসরকারী অরাজনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি প্রচ্ছন্ন দেখিতে পান, তাহা নহে; বেসরকারী লোকেরাও গবন্মেন্টের অরাজনৈতিক কাজের মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধির অস্তিত্ব কল্পনা করে। সুতরাং সন্দেহ করা সম্বন্ধে উভয় পক্ষ সমান ! গোটা দুই দৃষ্টান্ত দি। মহাত্মা গান্ধী যখন রাজনীতিক্ষেত্র হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া গ্রামসমূহের উন্নতিসাধনের জন্য নিখিল ভারত গ্রাম্যশিল্পসমিতি স্থাপন করেন, তখন ভারত-গবন্মেণ্ট গান্ধী মহাশয়ের এই চেষ্টার মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্বের অস্তিত্ব অকুমান করিয়া যে গোপনীয় সাকুলার সব প্রদেশের সরকারীমহলে পাঠান, তাহ প্রকাশ হইয়া পড়ে। ইহা বেসরকারী প্রচেষ্টার প্রতি সরকারী সন্দেহের একটি দৃষ্টান্ত । তার পর, ভারত-গবন্মেণ্ট যখন ব্রিটিশ ভারতের গ্রামগুলির উন্নতির জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্ধ করিলেন, তখন আবার বেসরকারী লোকেরা সন্দেহ করিল, যে, গবন্মেন্টের এই বরাদটি গান্ধীজীর চেষ্টার জবাব—গান্ধীজী বা কংগ্রেস যাহাঁতে গ্রাম্য লোকদের