পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাত্তম ১ টাকা ব্যয় হয়। ভাল প্রায় খায়ই না, মাসে চার দিন বা আট বেলায় আট ছটাক মাত্র ডাল খায়। আর যাহা খায়, লবণ তেল গুড় লঙ্কা হলুদ তরকারী ইত্যাদিতে সৰ্ব্বসাকল্যে মাসে আর এক টাকা লাগে । খাদ্য-হিসাবে ইহার সহিত যথেষ্ট প্রোটিন বা ছানা-জাতীয় পদার্থ প্রয়োজন। মাছ হইতে ইহারা তাহা পায় । মাছ কিনিতে হয় না। প্রত্যেকেরই বাড়ির সংলগ্ন ডোবা আছে। বর্ষার প্রারম্ভেই মাঠ ভাসিয়া যায়, তখন হইতে ক্ষেতের আলে আলে ইহারা নানা যন্ত্র পাতিয়া প্রত্যেক পরিবারেই মাছ ধরে । মাছ নিত্য দুই বেলার খাদ্য। জল একটু কমিলে মাছগুলি আকারে বড় হয়, ধরাও পড়ে খুব। তখন কতক শুকাইয়া কতক জিয়াইয়া রাখা হয়। অগ্রহায়ণ মাস পর্য্যস্ত যেখানে-সেখানে মাছ ধরা চলে। তাহার পর পৌষ হইতে বৈশাখ এই কয় মাস ডোবার উপর নির্ভর করিতে হয়। মাঠের জল যখন নামিয়া যায় তখন মাছগুলি জলাশয়ে, ডোবায় আশ্রয় লয় । প্রতিবৎসরই ডোবাগুলি ভাসিয়া যায়, আবার মাছে পূর্ণ হয়। অনেকের ডোবা এত গভীর যে বৈশাখের শেষ পৰ্য্যস্ত জল থাকে। উহাতে যে মাছ থাকে তাহাতেই শুষ্ক ঋতুর মাস কয়টা কাটিয়া যায়। যাহাঁদের ডোবা তত গভীর নহে তাহার এই সময়ে মাছ উঠাইয়া আঙ্গিনায় গৰ্ত্ত করিয়া জল দিয়া জিয়াইয় রাথে । দুই-এক দিন অন্তর জল বদলায়। কিন্তু মাছগুলিকে গরুর মতই অনাহারে রাখে বলিয়া উহারা জীবন্ত থাকে মাত্র, কিন্তু শরীরে মাংসপদার্থ বড় থাকে না। যাহাই হউক খুব যে দরিদ্র তাহারও মাছের ব্যবস্থা আছে, যদি মাছধরার লোক থাকে বা কাহাকেও দিয়া ধরাইয়া লইতে পারে । মাছ ছাড়া কিছু সবজী চাই, নচেৎ নীরোগ থাকা যায় না। ভাত মাছ ও তেল হইতে ইহারা খাদ্যের প্রয়োজনীয় ইন্ধন, ছান-জাতীয় পদার্থ ও ধাতব পদার্থ পায়। ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ পায় কিন্তু ভিটামিন ‘সি’র অভাব থাকিয়া যায়। যাহারা গুটকী মাছ খায় তাহাদের রীতিমত সবজী-বুভূক্ষ উপস্থিত হয়। কিছু শাকপাত যেমন করিয়া হউক সংগ্রহ করে। এখানে তরকারী ማዓሉ–: গ্রামসেৰগর পথে శ్రీe& অধিক মূল্যে বিক্রয় হয়। যাহারা বাড়িতে সব জী সংগ্ৰহ করিতে পারে না তাহারা কিনিয়া থাকে । ইহাদের জালানী-খরচা লাগে না, ঘুটে বিচালী ও নাড়া, ডালপাতা জালাইয়াই কাজ চালাইয়া লয়। মাসিক দুই টাকায় যে ধান ও অন্য সামগ্রী পায় তাহার সহিত প্রচুর মাছ সংগ্ৰহ করিয়া ইহার কোন ক্রমে আহার জেটাইতে পারে। কিন্তু বৎসরে অন্ততঃ চার টাকার বস্ত্র লাগে। ইহার জন্ত কোন সংস্থান দেখা যায় না । ঋণ করিতে হয় অথবা কম থাইয়া কাপড় কিনিতে হয়। দুই টাকায় অল্পবস্ত্র কুলায় না, এই সিদ্ধাস্তে আসিতে হয় । বাষিক আয়ের ভিতর বিচালীর আয় ধরা হয় নাই । গরুর খোরাকও ধরা হয় নাই । যে বিচালী হয় তাহা গরুর পক্ষে পৰ্য্যাপ্ত নহে। আবার জালাইবার জন্য ইহারা সেই বিচালীতেই ভাগ বসায় । অভাবে পড়িয়া বেচিয়া ফেলে, অন্য অঞ্চলে রপ্তানি হইয়া যায়। এক শত গাভীর মধ্যে এখানে তিন বৎসরের কমবয়স্ক বাছুর মাত্র চল্লিশটি । ইহাতে দেখা যায় যে গাভীগুলির প্রজননশক্তি অৰ্দ্ধেক বা তাহারও কম হইয়া গিয়াছে। বলিতে হয়, এখানে মানুষ কোন প্রকারে বাঁচিয়া আছে, কিন্তু গরু মরিয়া যাইতেছে। ভবিষ্যতে মাতুষের অবস্থা আরও হীন হইবে, আয়ও কমিবে । তুল উৎপাদন করিয়া, নিজের জন্য স্থত কাটিয়া ইহারা বস্ত্রে স্বাবলম্বী হইতে পারে, কোন-কোন পরিবার হইয়াছে । জমিতে রবিশস্ত উৎপাদন করিয়া ইহারা আয় বাড়াইতে পারে, গরুও বঁাচাইতে পারে। ধান ভানিয়া কিছু উপার্জন করিতে হইলে টেকৗছাট চাউলের প্রতি শহরবাসীর আগ্রহ জন্মাইতে হয়। বস্ত্রে স্বাবলম্বী করিতে হইলেও ইহাদের একটি পরিবারের কাটা স্থতার উদ্বর্ত কিনিতে পারে এমন ছুইটি করিয়া ক্রেতা পরিবার দরকার । মৃতপ্রায় গ্রামগুলিকে সজীব করিবার কতকগুলি অবলম্বনস্বত্র পাওয়া গিয়াছে। কৰ্ম্মীদের নিষ্ঠ, কুশলতা ও শহরবাসীর সহৃদয়তার উপর সাফল্য অনেকখানি নির্ভর করিতেছে। ভবিষ্যৎ ঈশ্বরের হাতে ।