পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Uరిu* প্রবাসী ১৩৪ই, তার পর নীরবে দুইজনে আরও খানিকটা পথ অতিক্রম করিয়া গোসাই বলিল—ত হ’লে আমি এখন আসি— তুমি যাও। নায়েব চিন্তিত মুখেই চলিয়া গেল। গোসাইও ফিরিল। পথেই পোষ্টাপিস—তখন ডাকবিলি স্বরু হইয়াছে, লোকজনের ভিড় জমিয়া আছে। উত্তরপাড়ার ধ্বংসাবশিষ্ট কায়স্থ জমিদার-বংশের বড়কৰ্ত্ত একখানা চিঠি বার-বার খুরাইয়া ঘুরাইয়া পড়িতে পড়িতে ধীর পদক্ষেপে ঈষৎ ফুজভাবে ঝুকিয়া পথ অতিক্রম করিয়া চলিয়াছিলেন। গায়ে পুরাতন সার্জের চায়ন-কোট, গলায় কল্ফার্টার, হাতে লাঠি । গোঁসাই একটু আশ্চৰ্য্য হইয় গেল। চৌধুরী-বাড়ির বাবু নিজে পোষ্ট আপিলে ! সে একটু অগ্রসর হইয়া বলিল—চৌধুরীমশায় না কি ? চৌধুরী-মহাশয় চিঠি হইতে মুখ তুলিয়া চিন্তব্যাপৃত মুখেই ঈষৎ নত হইয়া নমস্কার করিয়া বলিলেন—প্ৰণাম । আপনাদের কুশল সব ?—ম-ঠাকরুণরা ভাল আছেন ? গোসাই বলিল—নমস্কার, নমস্কার । হঁ্য, সব ভাল। এগন আপনাদের কুশল সব ? কেমন যেন—সংবাদ সব ভাল ত? আপনি নিজে ডাকঘরে ?— চিস্তার ঘোর চৌধুরীমহাশয়ের কাটিল না, তাহারই মধ্যে মৃদ্ধ হাসিয়া উত্তর দিলেন—আপনাদের আশীৰ্ব্বাদে সবই মঙ্গল । আর নিজে আসার কথা বলছেন—চাকরবাকর ত আর রাখতে পারি নে, কাজেই— গোসাই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল-গোবিন্দজীকে তাই আমি নিত্য বলি ঠাকুর করলে কি—এই কি তোমার বিচার ? বিনা অপরাধে চৌধুরী-বংশের— সবিনয়ে বাধা দিয়া স্নান হাসি হাসিয়া চৌধুরী-কর্তা বলিলেন—অপরাধ কিছু হয়েছিল বই কি গোসাইজী, নইলে বিচার তার অতি স্বল্প ! আচ্ছ তা হলে এখন যাই— প্ৰণাম । • দীর্ঘাকৃতি প্রৌঢ় ঈষৎ কুজভাবে লাঠিগাছটির উপর ভর দিয়া ধীর পদক্ষেপে অগ্রসর হইলেন। গোসাই পোষ্ট আপিসের দিকে ফিরিল। আপিসের বারানায় উঠিয় বলিল—নমস্কার মাষ্টার-মশায় । দেবলোকের ডাক কিছু আছে না কি আজ ? একটা বৈদূর্ঘ্য মণি ইনশিওর হয়ে আসবার কথা কুবেরের কাছ থেকে—আর বৈকুণ্ঠ থেকে একটা রিপোর্ট আসবে রেজেষ্টারি হয়ে— । - পোষ্টমাষ্টার হা হা করিয়া হাসিয়া বলিল—আমুন আক্ষন, দেবতা আস্বন। কিন্তু দেবলোকের ডাক ত আজ নয়। তার পর মর্লিংওয়াকে না কি ? গোসাই বলিল—ই্য, পুষ্পকরথ আজ ফিরিয়ে দিলাম। পৃথিবী আজ ভয়ানক ধরেছিল পায়ের ধূলোর জন্তে । পাপীতাপীর পদম্পর্শে তার বক্ষদেশে ভয়ানক দাহ উপস্থিত হয়েছে। দেখছেন না ভূমিকম্পের বহর । তাই আজ একটু পদব্রজেই বুঝলেন কি না— তার পর আপনার এখানেও যে মহা মহা ব্যক্তিদের আগমন দেখছি। ব্যাপার কি মশায় ! মৃদু হাসিয়া পোষ্টমাষ্টার বলিল -একটু পরিষ্কার করে বলুন দেবতা—নরলোকের সামান্য ব্যক্তি আমরা ! গোসাই হাসিয়া বলিল—খোদ চৌধুরী-মশায় আপনার দরবারে এই সকালবেলায় ! বলি এই বৃদ্ধ বয়সে আবার প্রেমপত্র-টত্র আসছে নাকি, অ্যা! পোষ্টমাষ্টারের মুখখানি সকরুণ ভাবে গম্ভীর হইয়া উঠিল, ব্যথিত কণ্ঠস্বরে সে বলিল—আহা-হা, মশায় ভদ্রলোক আজ ক-দিন থেকেই আসছেন একখানা চিঠির জন্তে । কন্যার বিবাহ নিয়ে ভদ্রলোকের আহার-নিদ্রাও ঘুচে গেছে । কয়েক মুহূৰ্ত্ত নীরব থাকিয়া একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া পোষ্টমাষ্টার আবার বলিল—এত বড় বংশের সস্তান—যারতার ঘরেও ত আর কন্যাটিকেও দিতে পারেন না। গোসাই বলিল—হঁ্যা, তাই ত বটে, রাণীর বয়স ত অনেক হ’লই বটে। তা বছর ষোল-সতের ত হবেই। আজকাল ত আর দেখতেই পাই না--বেরোয় না ত ঘর থেকে । পোষ্টমাষ্টার কহিল—মেয়েটিও পরমাসুন্দরী—লক্ষ্মীপ্রতিমার মত ! সেদিন চৌধুরী-কর্তা আমাকে নেমস্তর করেছিলেন। দেখা হ'লেই ত ওঁর খাওয়াবার ঝোক চাপে । তা মেয়েটিই আমাদের পরিবেশন করলে, রাধুনী ত আজকাল নেই।--ও কি বাড়ি ! কত কায়দা-করণ ! এখন সব ভো-ভো করছে ! --দেখে শুনে সংসারে ঘেন্না ধরে যায়ু মশায়। কিছুই থাকে না। এই আছে, এই নেটএই বসে আছি—এখুনি হয়ত মরে যেতে পারি। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া পোষ্টমাষ্টার নীরব হইল