পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

JSR প্রবাসী ડે૭a૨ বিড়িটা ধরিয়ে নি। যে দেশলাইয়ের দর, বিড়ি খাওয়া ছোটকৰ্ত্তা এখানেই আছেন, তিনিও আজ বড়-তরফের আর চলে না ! চাঞ্চল্যের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। জলন্ত বিড়িটা তাহার হাতে দিয়া গোসাই বিন-ভূমিকায় উঠিয়া পড়িল। ঘনশ্যাম প্রশ্ন করিল—উঠছেন যে ? অন্তমনস্ক ভাবে গোঁসাই উত্তর দিল—হু ! সে ভাবিতেছিল —হঁ্যা—তা—অবিশুি-ভাল লোক । 碌 * 袖 এখানকার চৌধুরীবংশের খ্যাতি বহুদিনের। বিনয়ে দানে সম্পদে চৌধুরী-বংশের প্রতিষ্ঠা বহুবিস্তৃত এবং বিপুলই ছিল। চৌধুরীবাবুদিগকে কেহ না কি আগে অভিবাদন করিতে পারে নাই—আজও পারে নাই। মানুষের সহিত চোখোচোখি হইবামাত্র চৌধুরী-কৰ্ত্তাদের দেহ ঈষৎ নত হইয়া পড়ে, হাত দুইটি ললাট স্পর্শ করে, তার পর তাহারা সম্ভাষণ করেন। জমিদারী তাহদের খুব বড় ছিল না, মধ্যবিত্ত জমিদার ছিলেন চৌধুরীবাবুরা। ভোগে বিলাসে অমিতব্যয়িতাও তাহাদের ছিল না। বৈষ্ণবমন্ত্র-উপাসক চৌধুরীদের কেহ কোনদিন মদ্যমাংস স্পর্শ করেন নাই। চরিত্রগত দৃঢ়তাও তাহাদের প্রসিদ্ধ। অমিতব্যয়ী ছিলেন তাহারা দানে দেবসেবায়। আজ এখানে ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণব কেহ বসতবাটির খাজনা দিয়া বাস করে না। তাঁহাদের যাবতীয় বাস্তবাটী চৌধুরীবাবুদের প্রদত্ত সনন্দবলে লাখেরাজ । কেহ দেবতা প্রতিষ্ঠা করিলে সঙ্গে সঙ্গে পাচ বিঘা নিষ্কর ভূমি চৌধুরীবাবুদের দরবারে দীনের ব্যবস্থা ছিল । যাক, সে-সব পুরাতন কথা। আজ ধূলিমলিন নিবন্ধপুরী চৌধুরী-বাড়ি ঈষৎ উজ্জল ও চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে। প্রকাও বড় বাড়িটার বড়-তরফের প্রবেশপথের সন্মুখ ভাগটা ঝাড়া মোছা হইয়াছে। বহুকালের শেওলার মালিন্ত উঠে নাই, তবু ধূলার মালিন্ত দূর হইয়াছে। যেন কোন উদাসী বৈরাগী তৈলহীন স্নান সমাপন করিল। ও-পাশে পরিত্যক্ত মধ্যম-তরফের বাড়িটার কিছু কিছু ভাঙিয়া পড়িয়াছে। মধ্যম-তরফ দেশত্যাগ করিয়াছেন। তার পাশে সেজ-তরফের অংশও জনহীন—সেজ-তরফ নিৰ্ব্বংশ লেজগিনী কাশীবাসিনী। তার পর ন’ তরফ—ন’-কৰ্ত্ত জীবিত নাই, উহার ছেলে দুইটি মাতুলালয়ে থাকিরা পড়াশুনা করে। বড়কৰ্ত্তার একমাত্র সস্তান রাধারাণীর আজ পাক-দেখা। বাড়ির ভিতরে দুইখানা বড় ঘর ঝাড়িয়া মুছিয় সাজান হইতেছে। গালিচা ও কাপে ট পাড়িয়া বাছ। হইতেছিল । সমস্তগুলিই জরাজীর্ণ, উপরের পশমের কারুকার্য্য নিঃশেষে উঠিয়া গিয়াছে—মধ্যে মধ্যে প্রায় ছিড়িয় ব্যবহারের অযোগ্য হইয়া পড়িয়াছে। ছোটকৰ্ত্ত একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিলেম । বড়কর্তা রন্ধনের পরিচর্য্যার তদ্বিরে ব্যস্ত হইয়া ফিরিতেছিলেন, ছোটকৰ্ত্ত সেখানে আসিয়া বলিলেন—হঁ্যা দাদা, গালচে-কাপে ট ত সমস্ত নষ্ট হয়ে গিয়েছে—একখানাও ত বার করা যায় না। একবার মুখ তুলিয়া বড়কর্তা আবার মুখ নত করিলেন, তার পর ধীরে ধীরে বলিলেন--একথান সতরঞ্চি ভাল দেখে তা হ’লে পেতে দাও । নেই যখন— তথন-- আর র্তাদের কাছে ত আমরা অনুগ্রহপ্রার্থী আজ ! ছোটকৰ্ত্তার কিন্তু কথাটা মনঃপূত হইল না, তিনি বলিলেন-সেজদা খান-দুই নতুন গালচে কিনেছিলেন। বড়কর্তা বলিলেন—সেজ বেীমা ত নাই, বের করে দিচ্ছে কে? কয়েক মুহূৰ্ত্ত নীরব থাকিয় ছোটকৰ্ত্ত বলিলেন— তালাটা ভেঙে ফেলি । বড়কৰ্ত্তা বলিলেন—না । ছোটকৰ্ত্তা স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া রছিলেন। বড়কৰ্ত্তা বলিলেন—একটা কথা বলছিলাম তোমাকে, শুভকৰ্ম্ম যখন হবে তখন দ্বাদশটি ব্রাহ্মণ ভোজন করালে হ’ত না ! ছোটকৰ্ত্ত নতমুখে পায়ের আঙুল দিয়া মাটি খুঁড়িতেছিলেন । তিনি বলিলেন—বল কা'কে কা'কে বলতে হবে। ফর্ণ হইয়া গেল। ছোটকৰ্ত্ত ফৰ্দ্দখান হাতে লইয়াওঁ দাড়াইয়া রহিলেন । - বড়কর্তা বলিলেন—যাও তা হলে।...ই্য-পোষ্টমাষ্টার মশায়কেও বলতে হবে। কিন্তু তোমার পিওন দু-জনকে বাদ দেওয়া কি ভাল হবে ? অ্যা- ? ছোটকৰ্ত্ত মুখ তুলিয়া বলিলেন—ওদেরও বলা হোক। তার পর সহসা যেন এতক্ষণের সঞ্চিত সংকল্প নিঃশেষে