পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাভিক কোন বেদনাকাতর চিত্তের হতাশার ছায়া বহিয়া মৌন অপেক্ষায় দাড়াইয়া আছে। তাহার ব্যথাপাণ্ডুর মুখে যেন মা-থিনের সেই করুণ হাসি ! মং-ব। ভাবিতে লাগিল—কি দুৰ্ব্বার আকর্ষণে এই ব্যথিত নারী-চিত্ত তাহাকে টানিতেছে! এ কি বিধাতার ইঙ্গিত ? না, এ তাহার নিয়তি ? মা-থিন করিয়াছে কি—শেষে তাহার জন্য জীবনের অবলম্বন সে ছাড়িয়া দিয়াছে ! এত বড় আত্মত্যাগ, এত ভালবাসা ? প্রতিদানে সে কি পাইয়াছে—শুধু নিষ্ঠুর বেদন, নিৰ্ম্মম আঘাত ! মং-ব ভাবিতে পারে না—কি করিবে সে– হৃদয়ের আহবান মানিবে, না, কৰ্ত্তব্যের আদেশে চলিবে । পরদিন অপরাহে মং-ব বাস্তবিকই ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু কাহার হস্তস্পশে হঠাৎ জাগিয়া গেল। চোপ না মেলিয়াই অভ্যাস-মত প্রশ্ন করিল, “কে, ম-গিন ?” যে আসিয়াছিল, সে হঠাৎ অপরিচিত নাম শুনিয়া আশ্চৰ্য্য হইল ; ভাবিল, “কে এ ?” কিন্তু বাহিরে কিছু প্রকাশ না করিয়া মৃদু হাসিয়া বলিল, “আমি মা-পিন নই ; কে বল ত ?" চোখ মেলিয়া সেদিকে চাহিয়া মং-ব সাকিনাকে দেখিয়া অপ্রতিভ হইয় গেল। “কি, সাকী, তুমি এসেছ ?” বলিয়া মং-বা লজ্জিত ভাব দমন করিয়া বলিল, "কখন এলে তুমি ? তুমি যে আসবে আজ, আমি ত ভাবতেই পারি নি? আমি ভেবেছিলাম, এখানকার “নাস” বুঝি কোন কাজে এসেছে ?” “তারই নাম বুঝি মা-খিন ?” সংক্ষেপে মং-বা উত্তর দিল, “ই ।” "বাঃ, সে বেশ মেয়ে ত ? কেমন তোমার সেবা করছে—এ রকম শুনলে কিন্তু আমার ভারী হিংসে হয়।” সাকিনা হঠাৎ গম্ভীর হইয়া গেল; বলিল, "আমিও ত বেশ–তোমার কোন কথাই জিজ্ঞাসা করছি না ? তোমার শরীর এখন কেমন ?” —“বেশ ভালই ।” সাকিনা তাহার কপালে হাত বুলাইতে বুলাইতে আবার শৈশবের মতই প্ৰগল্‌ভ হইয়া উঠিল। বলিল, “জান, তোমার খবর পেয়ে আমি কি বিপদেই পড়েছিলাম! আমার তখনি

বলিয়৷ বঞ্চিত 8వి আসবার ইচ্ছে -কিন্তু বাবার পড়েছে ভারী কাজ-কার সঙ্গেই বা আসি-বাবা বললেন, দাড়, একটু বন্দোবস্ত ক'রে নিই-কিন্তু আমি খালি ছট্‌ফট্‌ করছি ; মন ত এখানেই পড়ে আছে কি না ?” একটু ঠাট্টার স্বরে মং-বা বলিল, “সত্যি নাকি ?” “যাও, তুমি ভারী দুষ্টু” বলিয়া সাকিনা উদ্বেগভর দৃষ্টিতে পুনরায় কহিল, ”উ:, কি সৰ্ব্বনেশে ব্যাপার! দু-দিন তোমার জ্ঞানই ছিল না ? গুনে আমার যা ভয় হয়েছিল, ভেবেছিলাম, এখানে এসে তোমায় কেমন দেখব ।” বাধা দিয়া মংবে বলিল, “এখন বেশ ভাল দেগছ ত, ভয় তাহলে গেছে বল ?” “ন, ভয় গেছে কি ক'রে বলি-যতক্ষণ তুমি মুস্থ হয়ে এথান থেকে ঘরে না এস ! কথন কি হয়, কে জানে ?” বাস্তবিকই মং-বার বিপদ সম্পূর্ণ কাটে নাই-সে এখনও দুৰ্ব্বল। সবল না হওয়া পৰ্য্যস্ত অবসন্ন দেহযন্ত্র যে-কোন মুহূৰ্ত্তে বিকল হইয় পড়িতে পারে। সাকিনা ঘন ঘন যায় আসে ; আজকাল সেই-ই অধিকাংশ সময় তাহার কাছে থাকে। মাখিনও আসে কিন্তু কদাচিৎ ; তাও শুধু যেন একটা কৰ্ত্তব্য হিসাবে কাজ করিয়া যায়—হৃদয়ের কোন ধার ধারে না । মং-বারও কেমন একটা আড়ষ্ট, অপরাধীর ভাব। ম-খিনকে দেখিলে সে কেমন সঙ্কুচিত হইয় পড়ে। কখনও কখনও দূর হইতে ম-খিন সাকিনাকে দেখিতে পায় ; সে আর অগ্রসর হয় না ; অন্তরাল হইতে সরিয়া যায়। মং-ব! এখন সবল হইয়া উঠিয়াছে। মা-খিনও আজ কয়েক দিন একেবারে আসে নাই। মং-বার মন তাহাকে দেখিবার জন্য ছট্‌ফট্‌ করিতেছে। কিন্তু সম্মুখে সে দেখিতেছে শুধু সাকিনাকে। অপরাধের ভারে তাহার চিত্ত যেন কুইয়া পড়িতে চায়। একদিন সে সাকিনার হাত দুখানি ধরিয়া বলিল,--“সাকী, বোন, আমার কথা ভুলে যাও।” সাকিনা বিস্থিত হইল ; বলিল—”এ আবার কি কথা ?” দুই ফোটা অশ্রু মং-বার গও বাহিয়া ঝরিয়া পড়িল ; বলিল—“সাকী, সত্যই আমি তোমার যোগ্য নই। তুমি জান না, আমি কি গভীর অপরাধে অপরাধী ।”