পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাত্তন স্ত্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা ᏔNᏬᎽ মেলায় মানুষ যায়, গাড়ীতে রান্ত বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু লাটসাহেবের গাড়ী এলেই রাস্তায় জায়গা হয়, এখন পেটে জিলাপির জায়গা হবে, এতে সত্য রক্ষায় ব্যাঘাত হবে না। তিনি যে কিরূপ ভাবে সত্যরক্ষা করিতেন তাহার একটি কথা শুনিলেই লোকে বুঝিতে পারিবে। এক দিন আমি কয়েকটি বন্ধু লইয়া দক্ষিণেশ্বরে গেলাম। নানা বিষয়ে কথাবাৰ্ত্তার পর তিনি বলিলেন যে, দেখ আমি যদি বলি যে আজ থেকে দুবার শোঁচে যাব, তা হলে আমার সন্ধ্যায় বেগ না হ’লেও আমি সত্য রক্ষার জন্য শোঁচে যাই। : তিনি ছিলেন খাটি লোক, কঠোর সত্য বলিতে সঙ্কুচিত হইতেন না। ধর্মের নামে কোন আড়ম্বর করাকে স্থণা করিতেন । বাহিরে গৈরিক ধারণ, মালা পরিধান ও তিলক ফোটা প্রভৃতি আড়ম্বর দেখিলে খুব গ্রাম্য ভাষায় তাহার নিন্দা করিতেন । ধৰ্ম্মের জন্য র্তাহার নিষ্ঠা ছিল অসাধারণ। ভগবানকে পাইবার জন্ত তাহার ব্যাকুলতা এত অধিক ছিল যে, একবার মুসলমানদিগের ধৰ্ম্মসাধন করিতে লাগিলেন। অর্থাৎ পাঁচ বার উপাসনা করিতেন, মুসলমানী খাদ্য গ্রহণ করিতেন, মুসলমানী পরিধান পরিয়া ব্ৰহ্ম অন্বেষণে প্রবৃত্ত হইলেন। কিছুদিন এই রূপ সাধনের পর তিনি একটি ভিজান ( vision ) দেখিলেন, ষে, মুসলমানী বেশ ও মুসলমানী পরিচ্ছদ ধারণ করিয়া এক মূৰ্ত্তি র্তাহার নিকট আবির্ভূত হইল। ইহাতে তাহার সাধনা বিপথে যাইতেছে অনুভব করিয়া তাহা পরিত্যাগ করেন। আরও এইরূপ অদ্ভুত ও উৎকট সাধন তিনি করিয়াছেন। আচাৰ্য্য কেশবচন্দ্র যে র্তাহার সহসাধক ছিলেন জামরা তাহা নিঃসন্দেহে বলিতে পারি। বেলঘরিয়ায় দেখা হইবার পর মাঘোৎসবের সময় তিনি কীৰ্ত্তনের দিবস প্রায়ই কমলকুটীরে জালিয়া যোগদান করিতেন এবং প্রকেশবের হাত ধরিয়া নাচিতেন । কেশবচন্দ্রও তাহাকে পাইলে অতিশয় আনন্দিত হইতেন। একদিন কেশবচন্দ্ৰ নাচিতে নাচিতে তাহার হাত ধরিয়া বলিলেন, যে, “তুমি শুম আমি রাধা, আমনি পরমহংসবেও বলিলেন, যে ‘তুমি গম, আমি রাধা। তিনি যদিও জীবনের প্রথম ও মধ্য অবস্থায় এক জন হিন্দু সাধক ছিলেন, কিন্তু শেষ অবস্থায় তাহার বিশ্বাস পরিবর্তিত হইয়াছিল। এক দিন কমলকুটীরে আসিয়া ঐকেশবচন্দ্রকে বলিলেন, “দেখ কেশব তোমার কাছে এলে আমার চৌদ্ধপোয় কালী হুনের পুতুলের মত গলে যায়, আমি নিরাকারবাদী হই । তিনি ব্রাহ্মদের শ্রদ্ধা করিতেন। কেশবচন্দ্রের উপর পরমহংসের কোন কোন বিষয়ে প্রভাব যেমন পড়িয়াছিল, সেইরূপ পরমহংসদেবের উপর ঐকেশবের ব্ৰহ্মজ্ঞান ও ব্রহ্মদর্শনের প্রভাব বিশেষ ভাবে পড়িয়াছিল। দু-তিন বার পরমহংসদেবকে বলিতে শুনিয়াছি যে,"ব্রাহ্মদের ভিতর কেশব এক জন বিশেষ লোক, কেশব বইয়ের কথা বলে না, নিজের ব্ৰক্ষদর্শনের ও ব্রহ্মশ্রবণের কথা বলে।" উভয়ের মধ্যে একটা প্রগাঢ় ঘনিষ্ঠতা দেখা যাইত। চুম্বক যেমন লৌহকে আকৃষ্ট করে ইহারা উভয়ে উভয়কে এইরূপে আকৃষ্ট করিতেন। শেষ বয়সে ব্ৰহ্মজ্ঞানসাধন, ব্ৰহ্মদর্শন ও ব্ৰহ্মশ্রবণ এবং ব্রাহ্ম সমাজের বিশেষ বিশেষ উৎসবে যোগদান করা তাহার" জীবনের ব্রত হইয়াছিল। শ্ৰীকেশবচন্দ্রের পীড়ার সময় একদিন আসিয়া বলিলেন, “কেশব, তুমি যদি চলে যাও, আমি কার সঙ্গে কথা কইব ?" ঐকেশবচন্দ্রের তিরোধানে তিনি বিশেষ ভাবে জাহত হইয়াছিলেন, তাহার শরীর মন ভাঙিয়া পড়িয়াছিল।