পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২ প্রবাসী SN98R করিয়াছে। যদি কোনদিন সে তাহাকে বিবাহ করিতে চায়, তবেই ম-থিনের কাছে সে যাইবে, নচেৎ নয়। তাই টনঅঙ্গ, এখন একটা প্রকাও জুয়ার গহবরে প্রবেশ করিয়াছে। মৗ-খিনের খবর সে যে না রাখে, তাহা নয়। কিন্তু আক্রোশ তাহার মা-গিনের চেয়ে বেশী মং-বার উপর। যত দিন সে হাসপাতালে ছিল, তত দিন টুন্‌-অঙ্গ, বিশেষ সুবিধা করিতে পারে নাই –ভাবিয়াছিল, মং-ব বাহির হইলে তাহাকে দেখিয়া লইবে । কিন্তু এখন বাহির হওয়ার পরে যে ব্যাপারটা সে দেখিতে পাইল, তাহাতে সে কি করিবে ঠিক করিয়া উঠিতে পারিল না। একবার ভাবিল, ম-থিনের কাছে যাই ; এখন তাঁহাকে আপনার করিয়া লইতে পারিব। আবার ভাবিল,-ন, এত শীঘ্ৰ দেখা দেওয়া ভাল নয় ; কেন নিজেকে এত স্থলভ করি ? দেখিই না কিছুদিন, ওদের ব্যাপারটা শেষ পর্য্যস্ত কতদূর গড়ায়,—মং-বাই বা কি করে ? সেদিনকার অপ্রত্যাশিত ঘটনার পর সাকিনার মনের আনন্দ একেবারে উবিয়া গেল। মং-বার সহিত সে আর কথা বলে না -কেই আর তাহার মুখে হাসি দেখে না - খালি বসিয়া বসিয় ভাবে । কি করিবে সে ? তাহার বড় কান্ন পায় । যাহাকে সে এত দিন দেবতাঞ্জালে পঙ্গা করিয়াছে, যাহার উপর তাহার এত ভক্তি, এত অসীম বিশ্বাস, কেমন করিয়৷ সে এমন একটা তুচ্ছ নারীর মোহে বাধা পড়িল ? প্রথম প্রথম সাকিন মনে করিয়াছিল, হয়ত মং-ব তাহার কাছে আসিয়া সমস্ত খুলিয়া বলিয়া কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ করিবে, তাহার ক্ষমা চাহিবে । কিন্তু মং-বা যখন আসিল না, তখন সুগভীর অভিমানে তাহার অস্তর ভরিয়া গেল। মনে মনে ভাবিল – তাহার মরাই ভাল, তা হ'লে ং-বার মনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়, সে নিষ্কণ্টক হয়। কেন, রোগশয্যার মধ্যেই সে ত তাহাকে ভুলিয়া যাইতেই বলিয়াছিল—একটা আদরের, একটা সোহাগের কথাও ত তাহাকে বলে নাই ? সাকিনার মনে হইল মং-বা তাহাকে ভালবাসে না, কোনদিনই ভালবাসে নাই—সে একেবারে ভাঙিয়া পড়িল । ভালবাসে সে মা-খিনকে ; কেন সে জোর করিয়া তাহার স্নেহ-সোহাগ আদায় করিবে ? মং-বাকে সে মুক্তি দিবে, তাহাকে মুক্তি দেওয়া তাহার কৰ্ত্তব্য। নিজের প্রতি যত্ন সে একেবারে ছাড়িয়া দিল । কলের পুতুলের মত ঘুরিয়া বেড়ায় ; অযত্নে, অনিয়মে মাঝে মাঝে জরও হয় ; শরীর দিন দিন ক্ষয় হইয়া আসে ; সে তাহ গ্রাহের মধ্যেও আনে না। কিন্তু পুরাতন দাসীর চোখে তাহ ধরা পড়িল। একদিন সে সাকিনার চুল বিনাইতে বিনাইতে বলিল, “এ কি গে, দিদিমণি, অমন শুকিয়ে শুকিয়ে দড়ি হ’য়ে যাচ্ছ কেন গা ?” সাকিনা মুছ হাসিয়া বলিল, “মরণ আর কি, কোথায় রোগ হচ্ছি দেখলি ?” দাসী বলিল, “ষাটু ষাট্‌ ; তবে আমার চোখকে কি ক’রে এড়াবে, বাছ ? কেন, দাদাবাবুর সঙ্গে কি ঝগড়া হয়েছে নাকি ?” ভ্ৰভঙ্গী করিয়া সাকিম৷ বলিল, “খালি তোর দাদাবাবু, আর দাদাবাবু-আর কি তোর কথা নেই, বাছা ? তা থাকে ত বল্—তার নাম আর করিসূ নে আমার কাছে।” মুখ ঘুরাইয়া দাসী বলিল, “সে কি কথা গে ? আজ বাদে কাল তোমার বিয়ে—সে তোমায় দেখবে না ত কে দেখবে গ? সোয়ামী ছাড়া আর মেয়েমানুষের যত্ন-অক্তি করবার কে আছে, বল ?" সাকিনা মুখ ফিরাইল । দাসী করুণায় বিগলিত হইয়া বলিল, “আহ, ম-মর মেয়ের দরদ আর কে বোঝে, বাছা ?” মায়ের নামে সাকিম কাদিয়া ফেলিল, বলিল, “আমি বেশ আছি, দিদি ; আমার আর কাউকে কাজ নেই—বিয়ে আমি করব না--তাকে বলে—সে ত আমাকে চায় না ?” দাসীর মুখ হইতে ক্রমে ক্রমে শাখাপল্পবিত হইয়া কথাটা অনেকের কানে পৌছিল । সাকিনা মং-বাকে বিবাহ করিতে চায় না শুনিয়া কামাল সাহেব আশ্চৰ্য্যাম্বিত হইলেন। পুত্রকে ডাকাইয়া তিনি ইহার কারণ জিজ্ঞাগ করিলেন, কিন্তু কোন সদুত্তর পাইলেন না। তবে মং-বার মুখের ভাবে সে-ই যে ইহার জন্য দায়ী, তাহ বুঝিতেও তাহার বাকী রহিল না। অনুমানে তাহাকে তিনি অনেক ভৎসনা করিয়া বিদায় দিলেন; বলিলেন, “সে যদি সাকিনার কাছে আপন ব্যবহারের জন্য