পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মস্বত্ব স্ত্রীসীতা দেবী ર૩ নোৰাযাত্রা যখন শেষ হইল, তখন স্বৰ্য অন্ত যাইতে বসিয়াছে। সন্ধ্যাহুর্ধ্যালোকপ্লাবিত চারি দিকের পল্লীদৃশু মমতার চোখে যেন স্বপ্নলোকেরই মত অপূৰ্ব্ব স্বন্দর লাগিল। মস্ত বড় বঁধাঘাটে নৌকা আসিয়া থামিয়াছে। তীরে বহু লোক সমবেত হইয়াছে ইহাদের অভ্যর্থনার জন্য। সঙ্গে তাহাদের পান্ধী, ডুলি, ঘোড়, হাতী কত কি। দেশের অবস্থা নিতান্ত খারাপ, জনসাধারণ বন্যাপীড়িত, বুভূক্ষ, না হইলে বাদ্যভাও, আতসবাজি কিছুরই অভাব হইত না । কাছারীর নায়েব গোমস্ত সকলে নৌকায় উঠিয়া স্বরেশ্বরকে প্রণাম করিয়া সম্বৰ্দ্ধনা করিল। যামিনী মমতাকে লইয়া আড়ালেই রহিলেন, কারণ এখানে তাহাদের খানিকটা পর্দানসীনভাবে থাকিতে হয়, না হইলে স্বরেশ্বরের মধ্যাদার হানি হয়। মমতা এখন তরুণী, তাহাকেও এখন কিছু কিছু পর্দা মানিতে হইবে । নৌকা হইতে দুই ধারে পর্দা ঝুলাইয়া তবে মহিলারা নামিয়া গিয়া পান্ধীতে উঠিলেন। দাসীদের জন্য ডুলি আসিয়াছিল, তাহারা তাহাতেই চড়িয়া চলিল। স্বরেশ্বর হাতীতে উঠিলেন অনেক কষ্টে, ভয় যে কিছু না হইল তাহা নয়, তবে ডাক্তারবাবু সঙ্গে চলিলেন, ইহাই যা ভরসা। স্বজিত ঘোড়াটির রূপ দেখিয়া সন্তুষ্ট হইল, তবে কাদায়-ভরা রাস্ত দেখিয়া সে-সন্তোষ তাহার মুহূৰ্ত্তমধ্যে উবিয়া গেল । সঙ্গের লোকজন কতক হাটিয়া, কতক ঘোড়ায় তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে চলিতে লাগিল । মমতার এমন স্বন্দর জায়গায় বদ্ধকরা ঘেরাটোপ দেওয়া পান্ধীতে যাইভে অত্যন্ত কষ্টবোধ হইতে লাগিল। পিতার রাগের সম্ভাবনা উপেক্ষা করিয়া সে পান্ধীর দরজা ফাক করিয়া চারি দিকের দৃপ্ত দেখিতে দেখিতে চলিল। ঘামিনীরও অবশু কষ্ট হইতেছিল, কিন্তু এই লইয়া আবার স্বামীর সঙ্গে একটা হট্টগোল বাধিয়া যায়, ইহা তাহার ইচ্ছা ছিল না, কাজেই তিনি পর্দা বজায় রাখিয়াই চলিলেন । ঘণ্ট-দেড়েক এই ভাবে চলিয়া তাহার কাছারি-বাড়িতে আসিয়া পৌছিলেন। চারিদিক লোকে ভরিয়া উঠিয়াছে। সকলেরই একটু যেন ভীতসন্ত্রস্ত ভাব, স্বরেশ্বর যে বিশেষ থোশ মেজাজে মহাল তদারক করিতে আসেন নাই, তাহা সকলেরই জানা ছিল । কাছারি-বাড়িথানি মন্ত বড় দু-মহলা। আগে আগে কৰ্ত্তারা প্রায়ই এ সব দিকে আসিতেন, অনেক সময় সপরিবারেও আসিতেন, কাজেই অন্দরমহল একটা প্রস্তুত করা হইয়াছিল। এতকাল উহা বন্ধই পড়িয়া ছিল, অব্যবহার এবং মধ্যে মধ্যে অপব্যবহারে খানিকটা নষ্টও হইয়া গিয়াছিল। যামিনীদের আসিবার সংবাদ পাইয়া নায়েব-মহাশয় কয়েক দিনের মধ্যে ঘরগুলি যথাসাধ্য মেরামত ও পরিষ্কার করাইয়াছেন। তবু কলিকাতায় আজহ্মপালিতা জমিদারগৃহিণী এবং তাহার পুত্র-কন্যার হয়ত অত্যন্ত অন্ধবিধা হইবে মনে করিয়া তিনি অতিশয় সঙ্কুচিত হইয়াছিলেন। যামিনী পান্ধী হইতে নামিয়া একবার সমস্ত বাড়িখান ঘুরিয়া দেখিলেন। ঘর তিন-চারখানা আছে, এবং আসবাবপত্রও কাজচলা-গোছের রহিয়াছে। প্রজার দল এবং কৰ্ম্মচারীর দল এখন ঘণ্টা দুই স্বরেশ্বরকে বাহিরেই আটক করিয়া রাখিবে, স্বজিতও অন্ততঃ তামাশা দেখার খাতিরে সেইখানেই থাকিবে। ইহারই মধ্যে ঝি চাকর ও কন্যার সাহায্যে তাহাকে ঘরদোর গুছাইয়া এবং রাত্রির আহারের ব্যবস্থা করিয়া রাখিতে হইবে, না হইলে স্বরেশ্বর আর রক্ষ রাখিবেন না । সঙ্গের বড় বড় পেট্রোম্যাক্স, লণ্ঠনগুলি জালাইবার আদেশ দিয়া তিনি মমতাকে লইয়া কে কোন ঘরে থাকিবে তাহা ঠিক করিয়া ফেলিলেন, এবং বিছানার পোটলা-পুটলি খোলাইয়া প্রথমেই শয়নের ব্যবস্থা ঠিক করিয়া ফেলিলেন ।