পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wow" গিয়া বসিয়াছিলেন, বারটা বাজিতে তৰে ফিরিয়া আসিয়া স্বান করিয়াছেন। যামিনী স্নান আগেই সারিয়াছিলেন, তবে খাওয়াদাওয়া করেন নাই। এখানের মানুষগুলি গিল্পীকে কৰ্ত্তার আগে খাইয়া বলিয়া থাকিতে দেখিলে এত অধিক মাত্রায় বিস্থিত হইবে যে তাহার ধাক্কা সামলান হুইবে ছুক্ষর । কিন্তু ছেলেমেয়ের ত বাবার আগে খাইতে বাধা নাই, তাহাদের আর কেন দেরি করান ? যামিনী স্বজিতের খোজ লইয়া জানিলেন সারাদিন সে ঘোড়ায় চড়িয়া মাঠে মাঠে খুরিয়া, এই সবে ফিরিয়া স্নানের ঘরে ঢুকিয়াছে। কিন্তু মমতা গেল কোথায় ? সে তাহারই পরে স্নান করিতে গিয়াছিল, স্নান ত বহুক্ষণ শেষ হইয়াছে। ঘরে ত সে নাই ? তবে কি এই দুপুর রোদে ছাদে গিয়া বসিয়া আছে ? মেয়ে র্তাহার সকল দিকেই পাগল। মেয়ের সন্ধানে যামিনীও ছাদে উঠিয়া আসিলেন। সত্যই মমতা ছাদেরই এক কোণে দাড়াইয়া আছে। যামিনী পিছন হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “এই রোদে দাড়িয়ে মাথাটার চাদি উড়ে যাবে যে ? এখানে কি করছি ?” মায়ের গলার স্বরে চকিত হইয়। মমতা ফিরিয়া দাড়াইল । ষামিনী বিস্মিত হইয়া দেখিলেন তাহার দুই চোখে জল টলটল করিতেছে, মুখ লাল হইয়া উঠিয়াছে, তাহা মনের আবেগে কি রোদের ঝাজে তাহ অবহু বোঝা যায় না। তাড়াতাড়ি মেয়ের পাশে আসিয়া দাড়াইয় তাহার পিঠে হাত রাখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হয়েছে মা ? চোখে জল কেন ?" মমতা নিজেকে সম্বরণ করিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছিল। তবু মায়ের কথার উত্তর দিতে তাহার গলা কঁাপিয়া গেল। বলিল, “বাবা কেন গরিবদের ওপর এত অত্যাচার করেন মা ? নিজে ত তাদের জন্যে কিছুই করবেন না, অন্যে যদি তাদের সাহায্য করতে আসে, তাদেরও বাধা দেবেন ?” যামিনী বলিলেন, "কেন, এখানে আবার কি হ’ল ?” মমতা অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া দেখাইল ; যে-কোণটায় তাহারা দাড়াইয়া আছে, সেখান হইতে বৈঠকখানার বারান্দার একটা অংশ দেখিতে পাওয়া যায়। বারানার উপরে বেঞ্চিতে প্রবাসী ১৩৪২ কলরবন্ধ বলিয়া আছে, সকলেরই সূত্র গম্ভীর। নীচে আর একদল গ্রজ দাড়াই আছে, কেহ বাচোখ ছিলেছ কেহ বা অপরের সঙ্গে হাত মুখ নাড়িয়া কথা বলিতেছে। মমতা বলিল, “দেখ মা, এই ছেলেগুলি কত কষ্টম করে এই সব গায়ের লোকদের সাহায্য করতে এসেছে। আর বাবা তাদের ডেকে ধমক-ধামক করছেন, এইটাই ৰি র্তার উচিত হচ্ছে ?” যামিনী বলিলেন, “উচিত ত নয়র মা ; কিন্তু আমি কি করতে পারি বল ? যা তোমার বাবা নিজে বুঝবেন না, তা তাকে কেউ বোঝাতে পারবে না, কাজেই বাধ্য হয়ে ওসব দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকি।” মমতা উত্তেজিত ভাবে বলিল, “আমি কিন্তু পারব নাম, আমি ঠিক বাবাকে বলব। তাতে তিনি আমায় যতই বকুন না কেন।” যামিনী একটু অবাক হইয়া গেলেন। দীনদুর্থীর প্রতি স্বরেশ্বরের সমবেদনা কোনদিনই নাই, মমতা তাহ বরাবর জানে। তাহাতে দুঃখ পায় বটে, লজ্জিতও হয়, কিন্তু এতখানি উত্তেজিত ত কোনদিন হয় নাই ? এখানে আসিয় হঠাৎ তাহার মনে এমন ভাবের কেন আবির্ভাব ঘটিল ? মেয়েকে শাস্ত করিবার জন্য বলিলেন, “ওঁকে ওসব বলে কিছুই লাভ নেই তা ত তুমি জানই মা ! অনৰ্থক রাগারগি ক’রে শরীরটাকে আরও বেশী ক'রে খারাপ করবেন।” মমতা বলিল, “তবে তুমি ওদের ডেকে পাঠাও মা, বল যে আমরা তাদের যথাসাধ্য সাহায্য করব। আমলাদেরও বারণ ক'রে দাও, তারা যেন ওদের উপর কোন অত্যাচার না করে।" যামিনী বিষন্নভাবে হাসিয়া বলিলেন, “আমার সাধ্যি কি মা ? তাতে মন্দই হবে, উনি চটে যা তা করতে থাকবেন। এখন নীচে চল, খাওয়াদাওয়া করবে। অনেক বেলা হয়ে গেছে।” মমতা তাহার সঙ্গে নীচে চলিল। সিড়ি দিয়া নামিতে নামিতে বলিল, “খেতেটেতে আমার কিছু ইচ্ছে করছেন: মা ।” খাবার ঘরে প্রবেশ করিতেই দেখা গেল, স্বরেশ্বর কাছারিঘর হইতে ফিরিয়া আসিতেছেন। তাঁহাকেও যথেষ্ট উত্তেজিত ও বিরক্ত দেখাইতেছে।