পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাত্তন এই বারো জুতের জামদানি হয়েছে। তাকে কেউ ডাকছে না किमां ?” কবিরাজ-মহাশয়ের একটি দূর-সম্পর্কের ভগিনী বসিয়াছিলেন, তিনি একটু চটিয়া বলিলেন, “তা বাছা বলবেই ত ? এই সময় যা একটু দু-চার পয়সা পায়, তাও লোকে বাদ সাধলে मृष्ट्रि क्षम्न !' - মমতা অবাক হইয়৷ এই অপরূপ ঝগড়া শুনিতেছিল। এত ক্ষণ পৰ্য্যস্ত লে একটাও কথা বলে নাই। হঠাৎ বলিল, “যারা পরের উপকার করতে এসেছে তাদের এরকম ক’রে বলা উচিত নয়। নিজের স্বার্থের জন্তে ত আর তার কারও ভাত মারছে না ?” মেয়ের উত্তেজনায় যামিনী একটু বিস্মিত হইলেন। নায়েবের ভাজ বলিলেন “তা ত ঠিক মা, তবে ছোটলোকদের এরা বড় আম্পৰ্দ্ধা বাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা ভাল কাজ না । এমনিতেই আজকাল নানা রকম কথা শুনে তারা নিজেদের বামুন কায়েত সবার সমান মনে করে।” যামিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে ছেলেগুলি আছে কোথায় ?” একটি আট-ন বছরের মেয়ে চীৎকার করিয়া বলিল, “সব ত পছিমের মাঠে তাৰু পেতেছে, ঘর বেঁধেছে, সেই হাড়িপাড়ার কাছে। মেজ খুড়ী বলে ওরা ভদ্ধরনোক না, তাহলে হাড়িদের কাছে থাকবে কেন ?” মেজ খুড়ী উপস্থিত ছিলেন, তিনি ভাস্করঝির কথায় অপ্রস্তুত হইয়া মুখের উপর ঘোমটা টানিয়া দিলেন। মমতার মন ক্রমেই ইহাদের উপর বিরূপ হইয়া আসিতেছিল । এই নাকি পল্লীগ্রামের বিখ্যাত সরলতা আর মানবপ্রীতি ? ইহার চেয়ে দেখি শহরের লোকও ভাল, তাহারা তবু একটু বুদ্ধিগুদ্ধি ধরে। ইহাদের উপকার করিতে আসাও বাকমারির কাজ । a... যামিনী বলিলেন, “এ-সব দিকে বানে খুব ক্ষতি করেছে, না ততটা নয় ?” মহিলারা বুঝিলেন জমিদার-গৃহিণী এইবার কাজের թՑ-> - - هوائيا কথায় নামিলেন, প্রজাদের আসল অবস্থা জামাই ইহার উদ্দেশু। নায়েব-মশায়ের ভাজ বলিলেন, “তা ক্ষেতি হয়েছে বইকি মা, খুবই হয়েছে, ঘরদোর পড়েছে, গরু-বাছুর ভেসে গেছে । ধান ত একেবারে গেল, কি যে এবার মানুষে খাবে তার ঠিকঠকানা নেই।” একটি কিশোরী বলিল, “জলট ত প্রায় আমাদের কোঠার কাছাকাছি এসেছিল, আর একটু এগুলে, আমাদের ঘরও পড়ে যেত ।” সেই বধুটি বলিল, “নামোপাড়ায় যা কাও হ’ল। ঘরদোর ডুবে গেল, মান্বযে গিয়ে চালে উঠল। কলকাতার ছেলেগুলো শেষে নৌকো করে এসে মই দিয়ে তবে তাদের নামায় । সে যা মুস্কিল।" একটি বালিক খিলখিল করিয়া হাসিয়া বলিল, “মুটুকীপিসী কেমন কুমড়ে-গড়াগড়ি গেল মা ?” যামিনী ঝিদের পানমশলা লইয়া আসিতে বলিলেন । কলিকাতার মানুষ হইলে চা খাওয়াইবার ব্যবস্থা করিতেন, কিন্তু এখানে সেটা চলিবে কিনা ঠিক বুঝিতে পারিলেন না। তাহা ছাড়া তাহার কায়স্থ, ইহাদের ভিতর ব্রাহ্মণকস্তাও কেহ থাকিলে থাকিতে পারে। মমতা জিজ্ঞাসা করিল, “আমি ছেলেমেয়েদের হাতে চকোলেটু দেব মা ? কলকাতা থেকে অনেক নিয়ে এসেছি।” ঘামিনী বলিলেন, “দাও।” মমতা চকোলেট আনিতে অন্ত ঘরে চলিয়া গেল । কলিকাতার স্বেচ্ছাসেবকের দল কোথায় আছে তাহা ত জানা গেল, কিন্তু কোনদিন অমরের সঙ্গে তাহার দেখা হইবে কি ? হইলেও বা কি চক্ষে সে মমতাকে দেখিবে কে জানে ? মমতার বাবা ত খোলাখুলি এখন তাহাদের শত্রুপক্ষে দাড়াইয়াছেন, যথাসাধ্য তাহদের কাজে বাধা দিবার চেষ্টা করিতেছেন। মমতাকেও অমর শক্রই মনে করিবে নাকি ? মমতার দুই চোখ এই কথা ভাবিতেই জলে ভরিয়া উঠিল। ( ক্রমশঃ )