পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেনা জামাই ঐশাস্তা দেবী রাত্রি অনেক হইয়াছে। গৃহিণী ক্রমাগতই উদ্বিগ্ন ভাবে ঘর বাহির করিতেছেন, এখনও কর্তা ফিরিলেন না কেন । শয়নকক্ষেই মেঝের উপর গালিচার আসন পাতিয়া খাবার ঢাকা দেওয়া আছে। কৰ্ত্ত থাইতে বসিলে গরম গরম লুচি ভাজিয়া দেওয়াই এ-বাড়ীর ঠাকুরের রীতি। কিন্তু সে ঠিকে বামুন, এতক্ষণ পৰ্যন্ত অপেক্ষা করিবে কেন ? কাজেই সে নিজের সময়মত কাজ সারিয়া খাবার গুছাইয়া চলিয়া গিয়াছে । দরজায় কড়া থটু খটু করিয়া বাজিয়া উঠিল। একতলার বৈঠকখানা ঘরে নিদ্রাকাতর বৈজু তাহার ছিন্ন কম্বা ছাড়িয়া উঠিয়া মুদিত চক্ষেই দরজা খুলিয়া দিল। শ্রাপ্ত গৃহকর্তা নিশেষে মুক্তির নিশ্বাস ফেলিয়া ঘরে ঢুকিলেন। গৃহিণী আসনখানাকে খুরাইয়া পাতিয়া গেলাসে নূতন জল দিয়া অসহিষ্ণুভাবে এই কয়টা মুহূৰ্ত্ত কোনো প্রকারে কাটাইতেছিলেন। কর্তা জুতা জামা ছাড়িয়া আসনে বসিতে-নাবসিতে গৃহিণী রাধারাণী বলিলেন, “কিছু করতে পারলে ? এত রাত করে যখন ফিরেছ, কিছু কি আর একটা হেস্তনেস্ত হয় নি।” কর্তা রমাপ্রসাদ জলের গেলাসে হাত ধুইতে ধুইতে বলিলেন, “দাড়াও, হাতখানা ধোওয়ারও যে অবসর দিলে না ।” রাধারাণী বলিলেন, “দাড়িয়ে বসেই ত এত কাল কেটে গেল। আর আমি দাড়াতে পারি কই ? মানুষের বয়স বাড়ে বই ত কমে না। এরি মধ্যে আমায় সব কাজ শেষ করে যেতে হবে ত? অদৃষ্ট এমন ধে ছেলেও একটা নেই যার ঘাড়ে ফেলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারি।” রমাপ্রসাদ ঠাণ্ডা লুচি ও মাছের কালিয়া মুখে পুরিতে পুরিতে বলিলেন, “চেষ্টা ত সবরকমই করলাম। তুমি যেমন বলেছ তেমনই সব কথা হ'ল। কিন্তু তারা যা ফর্ম বার করলে খরচ দিতে দিতে আমাদের প্রোণাস্ত হয়ে ষাবে।” রাধারাণী হাত উন্টাইয়া বলিলেন, “যায় যাকৃ প্রাণাগু হয়ে। চার-চারটে মেয়ের যে কিছু না দেখে বিয়ে দিলে তাতে কি তোমার খুব সাশ্রয় হয়েছে ? অনেক টাকা বেঁচেছে, না ?” কৰ্ত্ত বলিলেন, “বাচেনি বলেই ত এবার তোমার পরামর্শে চলছি। কিন্তু তাতেও স্ববিধে করতে পারছি কই ? দত্তরা বলছে যে ছেলে বিলেত থেকে এসে বিয়ে করবে কথা দিচ্ছে। লেখাপড়া চাইলে লেখাপড়া করে দিতেও রাজি । এখন খালি চার হাজার টাকা ধার বলে নিয়ে মেয়ে আশীৰ্ব্বাদ করে যাবে। আর মিত্তিররা বলে ছেলে বিয়ে করেই যাবে, কিন্তু বিয়ের রাত্তিরে তিন হাজার ছাড়া বিলেতে মাসে মাসে এক-শ খরচ দিতে হবে। এর ভিতরে কোনটায় তুমি রাজি বল ?” রাধারাণী বলিলেন, “প্রথমটাতে রাজি নিশ্চয় নয়। মেয়ের ষোল সতের বয়স হয়ে গেল এখন আশীৰ্ব্বাদ সেরে বিয়ের আশায় হাত ধুয়ে বসে থাকৃব, আমি ত আর হাব নয়। তার পর বাবাজী ফিরে এসে কোনো জজসাহেবের মেয়ে বিয়ে করে তোমার চার হাজার টাকা যদি গায়ের উপর ছুড়ে দেন তুমি ত আর নালিশ করে তাকে জামাই করতে পারবে না ?” রমাপ্রসাদ বলিলেন, “হ্য, তা ত সত্যি কথা । ত৷ ছাড়া জাহাজ থেকে যদি ভ্ৰমান গাউন-পরা বে নিয়ে নামেন তাতেই বা আমি কি করতে পারব ? আজকাল ত মেম-মা-লক্ষ্মীদের কৃপায় বাঙালীর মেয়ের বিয়ে হওয়াই দায় হয়ে উঠেছে। বাঙালীর মেয়ের সাত হাজামের উপর আবার জাত বাছতে হয়, এদের এদিকে বিলেত-ফেরত পুরুতরা শুদ্ধি করে যখন যা জাত দরকার ফরমাস মত তাই করে দেন। মুচি চাও মুচি, নৈকিস্তি কুলীন চাওঁ নৈকিন্তি কুলীন। এক মুহূৰ্ত্তে মেরী রোজীরা সব মন্দাকিনী, রাজেন্দ্রাণী হয়ে উঠেছেন । মিত্তিরের পো বিয়ে করে যেতে রাজি হয়েছে, সে আমার কপাল, কিন্তু খরচ হবে এক গাজা ।"