পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कोस्छब्द রমাপ্রসাদের পাচ কন্ঠ, পুত্র একটিও হয় নাই। রাধারাণীর সখ ছিল মেয়েদের বিবাহ দিয়া এমন সব সভা-উজ্জল জামাই আনিবেন যে পুত্রের অভাববোধ চিরদিনের মত মন হইতে মুছিয়া যাইবে । কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কন্যাদের রূপ শশীকলার মত বৃদ্ধি না পাইয়া যখন শশীকলার মত ক্ষয় পাইয়া ক্রমে অমাবস্তার মূৰ্ত্তি ধরিল, তখন রাধারাণীর সকল আশা ঘুচিয়া গেল। বিবাহ হিন্দুর মেয়েদের দিতেই হইল, কিন্তু কোনও দিক দিয়াই মনের মত হইল না। বড় ঘরে ফুটুম্বিত হয় নাই, অথচ মেয়েরা সম্পন্ন ঘরের মেয়ে, অল্প টাকায় নানা অভাব তাঁহাদের পিছন পিছন অষ্টপ্রহর যেন ই করিয়া ঘুরিতেছে। স্বামীরা কেহ সামান্ত বেতনের চাকর, কেহ একদিন আনে ত পাচ দিন আনে না, কেহ বা একেবারেই বেকার। স্বতরাং বাপমা-ই তাহাদের একমাত্র ভরসা। বাপের বাড়ি দুই দিনের জন্য আসিলে স্বামীরা লইয়া যাইবার কথা যেন বার মাসের মত ভুলিয়া যায়, বাপমাও কি করিয়া আর আপনা হইতে পাঠাইয়া দেন ? ফলে চার কন্যা গল হইতে নামাইয়া রমাপ্রসাদকে চারিটি পরিবার পৃষ্ঠে বহন করিতে হইতেছে। কনিষ্ঠা কন্যার নাম মা সাবধান হইয়া রাখিয়াছিলেন কৃষ্ণা। কিন্তু দেখা গেল তাঁহারই নবদুৰ্ব্বাদলগুমে রূপে বসন্তী দিনে দিনে ফুটিয়া উঠিতেছে। রাধারাণী যখনতখন কৃষ্ণার মুখখানি ধরিয়া নাড়িয়া চড়িয়া বলিতেন, “এ মেয়েকে আমি গেয়ে জামাইয়ের হাতে দেব না, বিলেত-ফেরত জামাই আনব।” রাধারাণী বাড়ীর অনেক কালের নিয়মভঙ্গ করিয়া মেয়েকে ইস্কুলে দিলেন, গানবাজনার জন্ত মাষ্টার রাখিলেন, পাড়ার নবীনাদের সঙ্গে ভাব করিয়া মেয়ের জন্ত আধুনিক সাজপোষাকের ব্যবস্থা করিলেন । কেহ যদি কৃষ্ণার রূপের প্রশংসা করিত ত রাধারাণী গর্বভরে স্বামীকে আসিয়া বলিতেন, “হ্যাগা, তুমি বল চারপাশে চারটি রক্ষাকালী দেখে দেখে আমার চোখের দৃষ্টি কালো হয়ে গেছে, কৃষ্ণা নাকি ওদের পাশেই কেবল স্বন্দর, কিন্তু পাড়ার লোকের চোখেও কি দোষ হয়েছে ? বললে তুমি বিশ্বাস করবে না কৃষ্ণাকে ষে দেখে সেই ছদও স্থির হয়ে দাড়িয়ে যায়।” রাধারাণী পণ করিয়াছিলেন এমন কস্তার উপযুক্ত কেনা জগমাই قلاوقافقا রোজগারী জামাই না করিয়া ছাড়িবেন না। চার-চারিট মেয়ের বিবাহ দিয়া তাহার স্থখ যা হইয়াছে বলিবার নয়। মেয়েরা নিত্যনৈমিত্তিক সকল কাজে আসিয়া মা'র কাছে হাত পাতে। কিন্তু রমাপ্রসাদ ত মাসের শেষে হিসাব কড়াক্রাস্তি না বুঝিয়া লইয়া স্ত্রীকে একটি টাকা দেন না, স্বতরাং তিনি অন্নপূর্ণার মত চারি হাতে বিলাইবেন কোথা হইতে ? অগত্যা বুড়া বয়সে পাপপুণ্যের হিসাব ভুলিয়া স্বামীর কাছে অগুস্তি মিথ্যা কথা বলিয়া তাহাকে টাকা আদায় করিতে হয়। সস্তানের ক্ষুধা মিটাইতে জগতে কত মা ত ইহা অপেক্ষ কত বড় পাপই অনায়াসে করিয়াছে। বিধাতা কি আর রাধারাণীর এই সামান্ত পাপগুলা ক্ষমা করিবেন না ? তাহার জন্য নয়, বিধাতাকে তাহার ভয় নাই, পরপারের জবাব তাহার সব তৈয়ারী আছে, রাধারাণীর ভয় ইহলোকের এই স্বামীটিকে। মাসে পাঁচবার সাতবার কাঠগড়ার আসামীর মত স্বামীর জেরার তলায় যে নির্দোবী হইয়াও র্তাহাকে দুর্গানাম জপ করিয়া কঁাপিতে হয় ইহা আর র্তাহার সহ হয় না। মেয়েদের অশ্রুসিক্ত শুক মুখ আর স্বামীর ক্রুদ্ধ রক্তচক্ষু চিরজীবন দেখিবেন এই কি তাহার অদৃষ্টে খোদাই করিয়া লেখা আছে ? কৃষ্ণার মুখের হাসি চির-উজ্জল করিয়া দিয়া যদি যাইতে পারেন তবু তাহার এত কালের দুঃখকে না-হয় তিনি সার্থক বলিয়া মানিবেন। স্বামীর কাছে অনেক সত্য মিথ্যা বলিয়া সংসারের খরচ ইহার পর অৰ্দ্ধেক করিয়া দিবার প্রতিশ্রুতি দিয়া রাধারাণী মিত্রদের এম্-এ পাস ছেলেটিকেই কৃষ্ণার জন্য মনোনীত করিলেন । বিবাহের পর আড়াই বছর কি তিন বছর মাসে এক শত করিয়া টাকা জামাইকে বিলাতে পাঠাইতে হইবে, বিবাহরাত্রির সব দেনা-পাওনার পর ইহা লেখা-পড়া হইয়া গেল। রাধারাণীর মুখে হাসি ফুটিল, কিন্তু তাহার চারি কষ্ঠ আধার মুখে গবেষণা করিয়া খোজ আরম্ভ করিলেন কোন বস্তার জল তাঁহাদের ভাসাইয়া রাধারাণীর ক্রেগড়ে আনিয়া ফেলিয়াছে। রাধারাণীর শেষ প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করিয়াছিলেন। কৃষ্ণার বিবাহের পর সংসারের খরচ অর্ধেক কেন সিকি