পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ԵՊՆ প্রবাসী SN°8寝 ধাহারা চাহিয়াছিলেন নির্দেশ দিয়া সাহিত্যকে একটা গন্তব্য পথে পরিচালিত করিতে কিন্তু অচিরেই তাহারা প্রতিভার সমূপে মান হইয়া গিয়াছেন। স্যামুয়েল জনসন এইরূপ এক জন লোক যিনি নিজের যুগে ছিলেন সাহিত্যের ডিক্টেটর। কিন্তু তাহার প্রভাব বেশীদিন টিকে নাই, তাই রোমাটিসিজমের প্রভাবে তিনি দলবলসহ সাহিত্যক্ষেত্র হইতে সরিয়া দাড়াইলেন এবং সেই নবযুগের আদর্শই হইল সাহিত্যের মানদণ্ড । কোলরিজ, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী, কীটুস, বায়রণ প্রভৃতি প্রতিভাশালী কবিগণ নিজস্ব প্রতিভার গুণে জগতের সকল যুগে বরণীয় বলিয়া পরিচিত এবং আজও ইংরেজী সাহিত্য র্তাহাদের দ্বারা নানাভাবে প্রভাবান্বিত। স্বতরাং কোনও দেশের সাহিত্যে চিরস্থায়ী ছাপ রাখিতে গেলে, অথবা “সাহিত্য-বিজয়” করিতে গেলে, প্রতিভাবান লেখকের প্রকৃত সাহিত্য স্বষ্টি করিতে হইবে, অন্যথা তাহা সম্ভব হইবে না। আর যাহারা গায়ের জোরে অথবা অন্তায় প্রভাব বিস্তার দ্বারা সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করিতে গিয়াছে, তাহারা সকল ক্ষেত্রেই উপকার অপেক্ষা অধিকতর ক্ষতি করিয়াছে, সাহিত্যের স্বচ্ছন্দ, সাবলীল, স্বাভাবিক গতির পথে প্রধান অন্তরায় হইয়া দাড়াইয়াছে। আপনার স্বাভাবিক গতিতে চলিতে চলিতে সাহিত্য ষে স্থানে আসিয়া উপনীত হইত, এই বাধার জন্ত সেস্থান হইতে অনেক দূরে পিছাইয়া পড়িয়াছে। স্বতরাং আমরা মনে করি, ঢাকার নবাব সাহেব যে বাঙালী মুসলমানদিগকে সাহিত্য-বিজয় করিতে বলিয়াছেন, তাহা তাহার নিতান্ত অনধিকারচর্চা । আর বাস্তবিকই যদি তিনি তাহাই করিতে চান, তবে, মুসলমান সমাজকে তাহার বলা উচিত, প্রকৃত সাহিত্য স্বষ্টি কর। আর নিজের পক্ষ হইতে তাহার উচিত ছিল প্রতিভাবান লেখককে উৎসাহ দেওয়া, অথচ এই দুইটার একটাও তিনি করেন নাই। আমরা এমন অনেক মুসলমান সাহিত্যিকের সংবাদ রাখি অর্থাভাবে যাহারা প্রতিভা স্করণের স্বযোগ পাইতেছেন না, তাহদের প্রতি কি তিনি কোনও দিন দৃষ্টিপাত করিয়াছেন ? অথচ সেই সব লেখক বাংলা ভাষাকে রীতিমত ভাবে প্রভাবস্থিত করিতে পারিতেন। তিনি যদি এই ভাবে বঙ্গসাহিত্য-বিজয়ে অগ্রসর হন তবে কেহই তাঁহাকে বাধা দিবে না। রাজনীতির সাম্প্রদায়িকতাকে সাহিত্যক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করিলে তাহাতে সাহিত্য-বিজয় হয় না, তাহাতে হয় সাহিত্যের হত্যাসাধন। ষে কয়েক জন মুসলিম সাহিত্যিক আজ বাংলা দেশে শোভা পাইতেছেন, তাহারা সাম্প্রদায়িক স্ববিধার পাশ-দরজা দিয়া এস্থান অধিকার করেন নাই, নিজস্ব প্রতিভার জোরেই র্তাহারা বড় হইয়াছেন আর এই প্রতিভাই র্তাহাদিগকে বঁাচাইয়া রাখিবে। এই সাহিত্যক প্রতিভা না থাকিলে র্তাহারা কখনই বড় হইতে পারিতেন না। কারণ এই শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকগণের বাহিরে আরও অনেক লেখক আছে, আরও অনেক গ্রন্থ আছে, কে তাহদের সন্ধান রাখে ? হিন্দুরা না হয় নাই রাখিল তাদের সন্ধান। মুসলমানরাও কি তাহাদের যত্ব করে ? মোট কথা এই, প্রকৃত সাহিত্য স্বষ্টি করিতে না পারিলে, সমাজের দরদ দেখাইয়া কেইষ্ট অযোগ্য বস্তুর সমাদর করিবে না। বঙ্গসাহিত্য-বিজয়ের জন্ত ঢাকার নবাব সাহেব মুসলমানদিগকে যে পথ বাংলাইয়াছেন তাহা মারাত্মক ও আত্মহত্যাকর। তাহার বক্তব্য এই যে মুসলমানদিগকে উর্দু, শিখিতেই হইবে। কিছুদিন পূর্বে এই শ্রেণীর আপকে ওয়াস্তে নেতারা বলিতেন যে উর্দুকে বাঙালী-মুসলমানের মাতৃভাষা করিতে হইবে। এখন বোধ হয় আর সেই ধুৱা নাই। তবে উন্দুর মোহ তাহারা একেবারে পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই, তাই তাহারা এখন বায়না তুলিয়াছেন উর্দুকে অতিরিক্ত ভাষা হিসাবে অবশু অবশু শিখিতে হইবে, নহিলে “বঙ্গসাহিত্য-বিজয় কাব্য” যে অসমাপ্ত রহিয়৷ যাইবে। এই উদ্বু ব্যতীত আরবী, ইংরেজী, ফার্স ও বাংলা ভাষা ত আছেই—অর্থাৎ এগুলির সহিত সমাপ্তরাল ভাবে উদ্বুকেও আয়ত্ত করিতে হইবে। একটা কচি ছেলে যে নিজের মাতৃভাষাই ভাল করিয়া আয়ত্ত করিতে পারে না, তাহারই স্কন্ধে সাহিত্য-বিজয়ের নামে এতগুলি ভাষার বোঝা চাপাইতে হইবে। রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় লইয়া আমাদের নেতারা এতদিন বাঙালী মুসলমানদের সহিত ছিনিমিনি খেলিতেছিলেন এইবার হইতে তাহার.তাহাদের অফুরন্ত প্রতিভাটুকু সাহিত্যবিষয়ে প্রয়োগ করিতে আরম্ভ করিলেন। সমাজ যদি তাহাদের সকল বিষয়েই এই ভাবে নিৰ্ব্বিবাদে হস্তক্ষেপ করিতে দেয়, তবে