পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

همسوا بها প্রবাসী ১6গুই তারকার সহিত একই স্থত্রে যুক্ত, একই ছন্দে চালিত, সে রহস্ত প্রকাশিত হইয়া যায়। সুগভীর স্তব্ধতা, নিস্তরঙ্গ সুপ্ত নদীজলের মত। নিশীথাকাশের নীচে দাড়াইয়া অরুণ সে স্তন্ধত অশাস্ত অস্তরে অনুভব করিতে চায়, হৃদয়ের পাত্রে সে স্তব্ধতার স্বধারস কানায় কানায় ভরিয়া লইতে চায়। অমনি কোথায় চঞ্চলত জাগে, শুামল তৃণ হইতে আকাশের তারায় তারায় বিদ্যুতের চমকের মত প্রাণের শিহরণ ! কোথাও একটু স্তব্ধতা নাই। পৃথিবীর ধূলিকণা হইতে নক্ষত্রের অক্ষৌহিণী পৰ্য্যপ্ত কত পদধ্বনি, অবিশ্রাম ' এগিয়ে চলার শব্দ। মাটির তলে অঙ্কুরগুলি প্রকাশের কামনায় কঁাপিতেছে, গাছে গাছে ফুলগুলি প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিবার বেদনায় ছুলিতেছে, নীড়ে নীড়ে পার্থীগুলি ভোরের আশায় সচকিত হুইয়া উঠিতেছে, আকাশের তারাগুলি অন্ধকারে কাহার অভিসারে ধাবমান, এই জগদ্ব্যাপী প্রাণস্রোত অরুণের রক্তধারায় প্রবাহিত, পথিক-বিশ্বের প্রগতির ছন্দে তাহারও বক্ষের রক্ত ছলিয় ওঠে। রাত্রির অন্ধকারে দাড়াইয় অরুণ গভীর শাস্তি লাভ করে । ( هنا ) অতি পুরাতন দীর্ঘিক, এখন মজিয়া গিয়া ও পানায় ভৰ্ত্তি হইয়া ক্ষুদ্র পুষ্করিণী হইয়া গিয়াছে। প্রায় এক শত বৎসর পূৰ্ব্বে যে রাজবল্লভ চৌধুরী এই দীঘির প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, তাহার বংশধরগণ এখন কেহ আই-সি-এস, কেহ ব্যারিষ্টার, খ্যাতনামা ডাক্তার, কেহ বা গরিব কেরাণী । দীর্ঘিকাতীরে অবস্থিত র্তাহার বৃহৎ ভগ্ন প্রাসাদের সংস্কার করিবার কিন্তু কেহ নাই। যে বুদ্ধা বিধবা এই ভগ্ন অট্টালিকার এক কোণে বাস করিতেন, দুই বৎসর পূৰ্ব্বে র্তাহারও মৃত্যু হইয়াছে ; এখন ভগ্ন শিবমন্দিরে প্রতি সন্ধ্যায় আর প্রদীপও জলে না। প্রাসাদের মধ্যে সাপ, শেয়াল, বাদুড় নানা জন্তুর বাস। গ্রামের লোকেরা এই তৃণলতাবেষ্টিত ভগ্নস্তুপে প্রবেশ করিতে সাহস করে না। তবে, গ্রীষ্মকালে যখন গ্রামের পুষ্করিণীগুলিতে জলাভাব হয়, সকলে চৌধুরী-পুকুরে জল লইতে আসে। কোন সন্ন্যাসীর আশীৰ্ব্বাদের গুণে ইহার জল কখনও শুকায় না । বড় রাস্ত হইতে কিছু দূরে, গ্রাম হইতে স্থদূরে অতি নিরালা স্থানে পুষ্করিণীটি। পূৰ্ব্ব-তীরে অতি প্রাচীন এক অশ্বখ বৃক্ষ চারি দিকে শাখাপ্রশাখা মেলিয়া দাড়াইয়া, তাহার গভীর ছায়াতলে এক ভাঙা ঘাট । অশ্বখ বৃক্ষের গুড়ির তলদেশ হইতে মোট শিকড়গুলি মাটি ভেদ করিয়া তৃষিত কৃষ্ণ সর্পদলের মত জলাশয়ের দিকে আঁকিয়া-বাকিয়া নামিয়া গিয়াছে। মোটর-গাড়ীর রাগ, গুড়ির পার্থে পুষ্করিণীর তীরে বিছাইয়া দিয়া অরুণ উমাকে বলিল—ব’স । উমা মধুর হাসিয়া উঠিল। হৃদয়াবেগে তাহার অধর আরক্ত। স্কুল হইতে পলাতকা ছোট মেয়ের মত সে চঞ্চলা ; নাচের ভঙ্গীতে চলিয়। সে বলিল, বা, কি চমৎকার, রোমাণ্টিক জায়গা, বসব কি ! এত ক্ষণ ত মোটরে বসে এলুম। চল চারি দিকে ঘুরে আসি, বাড়িটায় ঢুকতে ইচ্ছে করছে, কেউ নেই নিশ্চয়। বহুক্ষণ একটানা মোটর-গাড়ী চালাইয়া অরুণ শ্রাস্ত । সে বলিল, ন, না, এসব পুরনো বাড়িতে বড় বড় সাপ আছে । উমা হাসিয়া উঠিল, কি ভয় তোমার ! কি স্থির জল দেখ, আহা কি সুন্দর ছায় পড়েছে গাছগুলোর, ওই নারিকেল গাছটার ! —মনে হয় যেন জলের তলে কোন স্বন্দর সবুজের দেশ । —ঠিক বলেছ, রূপকথার সেই পুষ্করিণীর মত ; সাপের মণি হাতে ক'রে ডুব দিলে দু-ধারে জল সরে যাবে, পৌছাব কোন অপরূপ রাজকন্যার দেশে—চল ওদিকে একটু ঘুরে আসি । উমা, ঘুরে আসি বলিল বটে, কিন্তু রাগটিতে বসিয় ঘাসের ওপর পা ছড়াইয়া দিল। অদূরে মোটর-গাড়ীর দিকে অরুণ অগ্রসর হওয়াতে উমা আবদারের স্বরে বলিয় উঠিল, বা কোথা যাচ্ছ, যেও না, ব’স । —খিদে পায় নি ? কেকগুলো নিয়ে আসি। —তুমি আবার কবি ? এমন স্বন্দর শোভা, একটু স্থির হয়ে বসে উপভোগ করবে, তা নয়, কেৰু খাব—আচ্ছ, নিয়ে এস শীগগির। প্রশান্ত পুষ্করিণী কানায় কানায় ভরা। শরৎ-মধ্যাঙ্কের স্বচ্ছ আলোক স্থির জলে দর্পণের মত কককক করিতেছে |