পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামকৃষ্ণ পরমহংস শ্ৰীকৃষ্ণকুমার মিত্র ১৮৭১ সনে আমি প্রথম কলিকাতায় আসি। তখন রামকৃষ্ণ পরমহংস মহাশয়ের নাম শুনি নাই। ইহার কয়েক বৎসর পরে পরমহংসদেবের নাম শুনিতে পাই। ১৮৮১ খ্ৰীষ্টাব্দে প্রথমে তাহার দর্শন পাইয়াছিলাম কলিকাতার অন্তর্গত সিলুরিয়াপটির ঐযুক্ত নেপালচন্দ্র ও ' গোপালচন্দ্র মল্লিকের বাড়িতে। সে বাড়িতে ব্ৰাহ্মসমাজ ছিল। প্রতি সপ্তাহে তথায় ব্রহ্মোপাসনা এবং বৎসরান্তে একবার ত্রহ্মোৎসব হইত। ব্রহ্মোৎসবের সময় বহু লোক নিমন্ত্রিত হইতেন। আমিও একবার নিমন্ত্রিত হইয়া সেখানে গিয়াছিলাম। সেখানেই সৰ্ব্বপ্রথমে পরমহংসদেবকে দর্শন করি। তিনি নেপালবাবু ও গোপালবাবুকে বড় ভালবাসিতেন এবং মাঝে মাঝে ব্রহ্মোপাসনার সময় উপস্থিত থাকিতেন। ব্রহ্মোপাসনার সময় পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী উপাসনা করিয়াছিলেন এবং পণ্ডিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী উপদেশ দিয়াছিলেন। অবশেষে “কত ভালবাস গো মা মানবসস্তানে, মনে হ'লে প্রেমধারা ঝরে নয়নে” এই গান আরম্ভ হইয়াছিল। “কত ভালবাস গো মা মানবসন্তানে” শুনিবা মাত্র পরমহংসদেব চঞ্চল হইয় উঠলেন। ইহার পূৰ্ব্বে তিনি স্থিরভাবে বসিয়াছিলেন কিন্তু ঐ গানের প্রথম ছত্র শুনিবামাত্র তিনি কঁাপিতে লাগিলেন। অল্প ক্ষণ পরেই সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িয়া গেলেন। তাহার ভাগিনেয় সৰ্ব্বার্তাহার সঙ্গে থাকিতেন। তিনি তাহার কর্ণে চীৎকার করিয়া "ওঁ, ওঁ,” ধ্বনি করিতে লাগিলেন। পরমহংসদেব বহু ক্ষণ পর সংজ্ঞা লাভ করিয়া উঠিয়া বসিলেন এবং বলিলেন “আমাকে ক্ষমা করিবেন। আমি আপনাদের উপাসনায় বিঘ্ন করিয়াছি।” তাহার এই ভাবাবেশ দেখিয়া আমরা সকলেই চমৎকৃত হইয়াছিলাম। ইহার পর এক দিন তিনি সাধারণ-ব্রাহ্মসমাজ-উপাসনালয়ে অকস্মাৎ উপস্থিত হন। সঙ্গে ছিলেন র্তাহার ভাগিনেয়। সেদিন উপাসনা করিতেছিলেন পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী। সঙ্গীত করিতেছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত ( বিবেকানন্দ ) । কি গান তাহা আমার মনে নাই। সেদিনও গান শুনিতে শুনিতে র্তাহার সংজ্ঞ লোপ হয়। র্তাহার ভাগিনেয় তাহার কর্ণে পুনঃ পুনঃ ওঁ ধ্বনি করাতে তিনি উঠিয়া বসেন। তৃতীয় বার তাহাকে দেখিয়াছিলাম কলিকাতার উত্তর দিকে পাইকপাড়ার নিকটবর্তী সিথির এক উদ্যানে। উষ্ঠানের মালিক ছিলেন ত্রযুক্ত বেণীমাধব পাল। রাধাবাজারে তাহার এক দোকান ছিল। প্রতি বৎসর তাহার উষ্ঠানে ব্রহ্মোৎসব হইত। এখানে মহাসমারোহে উৎসব ও cछांछन श्ऊ । উপাসনা হইতেছে, কে উপাসনা করিতেছিলেন তাহ মনে নাই। পরমহংসদেব প্রতি বৎসরই এই উৎসবে আসিতেন এবং আনন্দের সঙ্গে উপাসনায় যোগ দিতেন। এই উদ্যানে আমি তাহাকে তিন-চার বার দেখিয়াছি। তিনি সকালে আসিতেন এবং সন্ধ্যা পর্য্যস্ত তথায় থাকিতেন। অন্যান্য স্থানে যেমন, তেমন এখানেও উপাসনার সময়ে অচেতন হইতেন। এই উদ্যানে মধ্যাহ্নকালে ভূরিভোজনের আয়োজন হইত। পরমহংসদেব নানা গল্প করিতে করিতে ভোজন করিতেন। আমাদের অনেকের অপেক্ষা তিনি অনেক বেশী থাইতে পারিতেন। জাহারান্তে ধৰ্ম্মপ্রসঙ্গ হইত। একবার এই প্রসঙ্গ হইয়াছিল, “মানুষ অনন্ত ঈশ্বরকে জানিতে পারে কি না।” তিনি বলিয়াছিলেন, “বাতাস যেমন গায়ে ঠেকে, ঈশ্বরও তেমনি আমার গায়ে ঠেকেন।” এই কথাটা এখনও আমার মনে আছে। আরও অনেক কথা হইয়াছিল, কিন্তু তাহ আমার মনে নাই।