পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՊՋԱՆ আমরা ১৯১০ সালে মডার্ণ রিভিয়ু পত্রিকায় পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর রচিত পরমহংসদেব সম্বন্ধীয় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত করি । গত বৎসর রামকৃষ্ণজয়ন্তীর সূত্রপাত হওয়ায় আমরা চৈত্র সংখ্যায় সেই প্রবন্ধের অধিকাংশ অনুবাদ করিয়া দিয়াছিলাম, এবং চেকোস্লোভাকিয়ার চিত্রকর ফ্রান্‌জ, ডোরাক কর্তৃক অঙ্কিত রামকৃষ্ণের চিত্র হইতে প্রস্তুত একটি ছবি ছাপিয়াছিলাম। ঐ প্রবন্ধে শাস্ত্রী মহাশয় অন্য অনেক কথার মধ্যে রামকৃষ্ণকে সিদ্ধপুরুষ বলিয়াছিলেন। বর্তমান সংখ্যায় আমরা তাহার সম্বন্ধে দুটি ছোট প্রবন্ধ ছাপিলাম। একটি ঐযুক্ত কামাখ্যানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবং অপরটি শ্রযুক্ত কৃষ্ণকুমার মিত্রের লেখা । বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের বয়স এখন ৭৭, মিত্র মহাশয়ের বয়স ৮৫ বৎসরে চলিতেছে। ইহঁরা উভয়েই রামকৃষ্ণকে দেখিয়াছিলেন । আমি যখন কলিকাতায় কলেজে পড়িতে আসিয়াছিলাম ও পরে অধ্যাপকের কাজ করিতাম, তখন রামকৃষ্ণ জীবিত ছিলেন। কিন্তু আমার তাহাকে দেখিবার ও তাহার কথা শুনিবার সৌভাগ্য হয় নাই । আমার যত দূর মনে পড়িতেছে, তাহার একটি সাধনার কথা আমি প্রথম শুনি বাকুড়া জেলা স্কুলের শিক্ষক স্বগীয় কেদারনাথ কুলভী মহাশয়ের মুখে। আমি ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। কুলভী মহাশয় বলিয়াছিলেন, রামকৃষ্ণ এক হাতে টাকা বা সোনা ও অল্প হাতে মাটি লইয়া গঙ্গার ধারে বসিয়া জিনিষ দুটি দুই হাতে অদল বদল করিতে করিতে বার বার বলিতেন, মাটি সোনা, সোনা মাটি । তার পর উভয়ের সমানত্ব উপলব্ধি হইলে দুই-ই জলে ফেলিয়া দিতেন। পরমহংসদেব সম্বন্ধে আর একটি কথাও কুলভী মহাশয়ের মুখে শুনিয়াছিলাম বলিয়৷ অস্পষ্ট স্মৃতি আছে। তাহা এই— একবার কোন দুশ্চরিত্র হাশ্রয়পরায়ণ ব্যক্তি রামকৃষ্ণের নিকট উপদেশ লইতে আসে। তিনি তাহাকে তিরস্কার করেন নাই, নিবৃত্তিমূলক কোন উপদেশ দেন নাই। কেবল বলিয়াছিলেন, যখনই কোন মুখ অমুভব করিবে, তখনই স্মরণ করিবে, যে, মুখ অনুভবের শক্তি ভগবানের দান। ফলে ঐ ব্যক্তির হৃদয়ের পরিবর্তন হয় । আমি কুলভী মহাশয়ের নিকট এইরূপ কথা শুনিয়াছিলাম কি না, তাহ নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারি না ; কারণ ইহা ৫০ বৎসরেরও আগেকার প্রবাসী SN98之 কথা, এবং ইহা আমি কোথাও লিখিয়া রাখি নাই। যদি এরূপ কথা শুনিয়া থাকি, তাহ হইলেও পরমহংসদেব যেসকল শব্দ ব্যবহার করিয়াছিলেন, আমি তাহার পুনরাবৃত্তি করিতে পারিলাম না--কেবল তাৎপৰ্য্য দিলাম । রামকৃষ্ণের মত মানুষ যে এখনও ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেন, তাহা ভারতবর্ষ যে নিকৃষ্ট দেশ নহে এবং ভারতীয়ের যে নিরুষ্ট জাতি নহে, তাহার অন্যতম প্রমাণ । পুস্তকলব্ধ বিদ্য র্যাহার ছিল না, এরূপ এক জন মানুষ যে-দেশে জন্মিয়া . তাহার মত সিদ্ধি লাভ করেন এবং তাহার মত জ্ঞান ভক্তি ও কৰ্ম্ম মার্গের উপদেশ দিতে পারেন, সে-দেশ সামান্ত নয়, সেই দেশের অধিবাসী জাতিও সামান্য নয়। সামান্ত হইলে সে-দেশের মানসিক ও আত্মিক পরিবেষ্টনে এরূপ মাতুয গড়িয়া উঠিতে পারিতেন না। প্রয়াগে অৰ্দ্ধকুম্ভ মেলা প্রয়াগ হিন্দুদের তীর্থরাজ । প্রতি বৎসরই এখানে মাধ মাসে বহু লক্ষ তীর্থমাত্রী গঙ্গাঘমুনাসঙ্গমে স্নান করে এবং এখানে মেলা হয়। ইহাকে মাঘমেলা বলে । বার বৎসর অন্তর এখানে মাঘ মাসে কুম্ভমেলা হয় । তাহাকে পূর্ণকুম্ভ বলা হয় । মধ্যে ছয় বৎসর অন্তর অৰ্দ্ধকুম্ভ হয়। এ বৎসর গত মাসে অৰ্দ্ধকুম্ভ মেলা হইয়া গিয়াছে। এই উপলক্ষ্যে প্রধান ও অপ্রধান স্বানের দিনগুলিতে মোট প্রায় ৫০ লক্ষ লোক স্বান করিয়াছে। মাঘ মাসে এই যে স্নান-উৎসব ও মেলা হয়, ইহার আরম্ভ কত হাজার বৎসর আগে হইয়াছিল, তাহার কোন ইতিহাস নাই। এই মেলায় নানাবিধ পণ্যদ্রব্য বিক্রীর জন্য বণিকের দোকান খুলে এবং যাত্রীরা অনেকে তাহা ক্রয় করে। তীর্থক্ষেত্রের এই সব মেলা পূৰ্ব্বে বাণিজ্যের আরও ব: কেন্দ্র ছিল, এবং তাহ শতাধিক বৎসর পূৰ্ব্বেকার বড় বঃ সরকারী ইংরেজ কৰ্ম্মচারীরা লক্ষ্য করিয়াছিলেন । ঈ” ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমলে ১৮১৩ সালে বিলাতী পালেমেণে, কেমন করিয়া ভারতবর্ষে ইংলণ্ডের ব্যবসা বাড়ান যায়, তাহ. উপায় আলোচিত হয়। ইংরেজ জাতির একটা রীতি এ* আছে, যে, তাহারা যখন ভারতবর্ষে নিজেদের কোণ স্বার্থসিদ্ধি করিতে চায় ও তাহার উপায় অবলম্বন কধ্যে