পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাকি—সময় সময় ওগো প্রিয়ও বলি। তোমরা কি ‘ওগো" বল ?" আমার স্বামী এ-রকম প্রশ্নে মজা পেয়ে বললেন, “আমাদের দেশে সচরাচর বয়স্ক স্ত্রীলোকেরাই ওগো" ব’লে ডাকেন। অল্পবয়সীরা অন্ত সম্বোধন করেন।” চা খাবার পর ল্যাগুলেডী তার মোটরে আমাদের খানিকট বেড়িয়ে নিয়ে আসবার প্রস্তাব করলেন। আমরা রাজী হলুম। ধীরেন বাবু বলতে লাগলেন—যে-কোন বাঙালীর সঙ্গে রোমে তার আলাপ হয় তাকেই তিনি তার বাসাতে নিয়ে আসেন। বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য, এটনী ঐযুক্ত যতীন্দ্রনাথ বন্ধ যখন রোমে এসেছিলেন তখন তিনি ধীরেন বাবুর সঙ্গে এ-বাড়িতে এসেছিলেন। ধীরেন বাৰু যতীন বাবুকে নিয়ে তাদের যে ফোটো তোলা হয়েছিল তা আমাদের দেখালেন। আমরা মোটরে অনেকখানি বেড়িয়ে আবার ট্রামে ক’রে আমাদের জাৰ্ম্মান-হোমে চলে এলুম। রোমে থাকৃতে থাকতেই এক নূতন ব্যাপার নজরে পড়ল । জাৰ্ম্মান-হোমে যে সিষ্টার আমাদের খাওয়া-দাওয়ার তদারক করত, সে রাত্রে শোবার আগে আমাদের ঘরে একটি ছোট বাতি ও দেশলাই দিয়ে ব’লে গেল “নো লাইট, বোম্বার্ড"। এর বেশী আর ইংরেজী কথা এর মুখ দিয়ে কিছুতেই বেরল না। বেচারী অপ্রস্তুত হয়ে হেসে বার-বার আমাদের জার্মান ভাষায় কি বলতে লাগল, তা বুঝতেই পারলুম না। আমাদের ঘরের পাশে এক জন জাৰ্ম্মান মহিলাবোর্ডার ছিলেন। ইনি সামান্ত ইংরেজী বলতে পারতেন। এর সাহায্যে জানতে পারলুম যে আজ রাত থেকে তিন দিন পৰ্য্যস্ত রোম শহরে আকাশপথে যুদ্ধের রিহাসেল চলবে। এর জন্ত আকাশে অনেক এয়ারোপ্লেন উড়বে ও তা থেকে রোম শহরে কৃত্রিম গোলাবর্ষণও হবে। মহামান্ত মুসোলিনীর হুকুম এই যে গোলাবর্ষণেব বা বোম্বার্ডমেন্টের সময় যেন কেউ ঘরে আলো না-জালে ও রাস্তায় না-বেরয় । এর অন্যথা কেউ করলে তাকে দু-শ পঞ্চাশ লীর বা পঞ্চাশ টাকা জরিমান দিতে হবে। বোম্বার্ডমেন্ট আরম্ভ হবার পাচ মিনিট পূৰ্ব্বে এক রকম বংশীধ্বনি দ্বারা সঙ্কেত করে শহরবাসীকে সতর্ক করা হবে এবং শেষ হবার পূৰ্ব্বেও এ রকম বঁাশী বা সাইরেন দ্বারা জানানো হবে । আমরা গুনে নিয়ে গুয়ে পড়লুম। লিটারও বাবার সন্তু আমার আর বানানা ه-سوهع পশ্চিমষান্ত্রিকী ጫጩፃ কালো রঙের মোট পর্দা লাগিয়ে দিয়ে গেল। যদি রাত্রে বাতি জালি, বাইরে পাছে আলো দেখা যায় সেই জন্ত এই ব্যবস্থা। বিছানায় গুয়ে গুয়ে ভাবছি কখন বোম্বার্ড মুরু হবে গুনব। হঠাৎ তীব্রস্বরে সাইরেন বা সক্ষেত-বাণী বেজে উঠল। অমনি রাস্তায় রাস্তায় পুলিস-প্রহরীর মোটর-বাইক বেরল শহর পরিদর্শন করবার জন্য। পাচ মিনিটের মধ্যেই শহর যেন ঘুমস্ত পুরীর আকার ধারণ করলে। তার পরেই দ্বমদাম পটুপটু শব্দে আকাশপথে গোলাবর্ষণ স্বরু হয়ে গেল। আমরা মহা উৎসাহে বিছানা ছেড়ে জানালার ধারে দাড়িয়ে গোলাফাট দেখতে এলুম। সমস্ত শহর ঘুটফুটে অন্ধকার, কিছু দেখা যায় না। আকাশের দিকে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎচমকের মত কৃত্রিম গোলার আলো দেখতে পেলুম ও এয়ারোপ্লেনের ঘর্ঘর শব্দ শুনতে পাওয়া গেল। সারারাত্রি এই ব্যাপার চলল। আমরা গুয়ে পড়লুম। সকালে উঠে দেখি আবার সেই সহজ ভাব, সবাই রাস্তায় চলাফেরা করছে। গুনলুম বেলা চারটার পর আবার বোম্বার্ড হবে । আমরা খেয়ে দেয়ে রাস্তায় বেড়াতে বেরলুম। খানিকট বেড়িয়ে ফিরছি এমন সময় আবার সেই বিকট সাইরেন বেজে উঠল। মোটর বাস ট্রাম সব মাঝ-রাস্তাতেই থেমে গেল। গাড়ীর আরোহী ও পথের পথিক সকলেই এক-ছুটে যে যেখানে পারলে লুকিয়ে পড়ল। আমরাও এক দল লোকের সঙ্গে একটি দোকানে ঢুকে বসলুম। আমাদের শুনতে একটু ভুল হয়য়েছিল। বেলা চারটার সময় বোম্বার্ড শেষ হবার কথা ছিল । যখন মুরু হ’ল তখন বেলা দুটা । এই দুটা থেকে চারটা পৰ্য্যন্ত আমরা দোকানে বন্দী হয়ে রইলুম। শ্ৰীযুক্ত ধীরেন্দ্রনাথ দাসের কাছে এ গল্প করতে তিনি বললেন যদি এই কৃত্রিম গোলার একটি পঢ়ক বাজি কোন বাড়ির ছাদে পড়ে, তাতে কারুর ক্ষতি হোক, বা না-হোক, পুলিসের লোক জানতে পারলেই বাড়িম্বন্ধ সকলকেই এ্যাম্বুলেন্স-কারে চড়িয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নাম লিখিয়ে আনবে। অর্থাৎ আসল যুদ্ধের সময় যা করা হয়, এখনও তার ঠিক নকল করা, নিয়ম রক্ষা চাই। আমরা একদিন একটি ফিটন গাড়ী ভাড়া করে বিকেলবেলা বেড়াতে যাই। রোমের সমস্ত গাড়ীতেই ক্যাব-মিটার লাগানো আছে। মিটারে যা ওঠে, গাড়োয়ানকে সে-রকম ভাড়া দিতে হয়। বেড়াবার সময় একটু এদিক