পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র এক জোড়া ইটালীয়ান বরকনে সদ্য-বিবাহান্তে গীর্জা থেকে বেরিয়ে এল। দরজার সামনে বরযাত্রী ও কস্তাযাত্রীর ভিড় হয়েছে। কনেটি দেখতে বেশ, সতের-আঠার বছরের হবে। বরের বয়স হয়েছে, তার ওপর দেখতেও বেঁটে মোটা। আমরা নিজের মধ্যে মন্তব্য প্রকাশ করলুম বর বোধ হয় দোজবরে। সন্ধ্যার একটু আগে আবার জাহাজে উঠে এলুম। রাত্রে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়েছি, অর্ধেক রাত্রে দেখি জাহাজ চলতে স্বরু করেছে। যাবার সময় ভিক্টোরিয়া জাহাজে শরীর খারাপ হওয়ায় জাহাজের ইঞ্জিন-রুমটি দেখা হয় নি। এবারে কন্টিভার্ডে জাহাজে একদিন ক্যাপ্টেনকে ব'লে-কয়ে জাহাজের সব নীচের তলায় ইঞ্জিন-রুম দেখতে গেলুম। ইঞ্জিন-ঘরের টেম্পারেচার সব সময়ে এক-শ দশ ডিগ্রী । বারটি বয়লার দাউ-দাউ ক’রে জলছে। ভিক্টোরিয়া জাহাজ মোটর-ইঞ্জিনে চলে। কণ্টিভার্ডে সেই সাবেক ধরণের ষ্টীমে চলে । আমরা উপর-তলায় যাত্রীরা আরাম ক'রে চলেছি, আর নীচে এই গরমে খালাসী বেচারীরা সমানে আগুনে কয়লা দিচ্ছে । চটের থলের ভেতর দিয়ে উপর থেকে শীতল বায়ু নীচের তলায় প্রবাহিত করবার ব্যবস্থা আছে। তা সত্ত্বেও আমরা নীচে এসেই গলদঘৰ্ম্ম হয়ে উঠলুম। ক্যাপ্টেন এ-রকম একটি থলের নীচে আমাকে দাড় করিয়ে দিলে। নীচে নামবার সময় লোহার মই দিয়ে নামতে হয়। এই মই সব সময় এত উত্তপ্ত যে শুধু হাতে ধ’রে নামলে, হাতে ফোস্ক পড়ার সম্ভাবনা আছে। পশ্চিমষাত্রিকী ԳՆՏ সেজন্য আমাদের নামবার আগে ছুটি খালাসী এসে আমাদের হাতের চেটোতে পুরু ক'রে স্বাকড়া জড়িয়ে দিলে। ইঞ্জিনরুমের ঘরের সামনে একটি বড় লোহার অটোমেটিক দরজা আছে। জাহাজ-ডুবি হ'লে যাতে ইঞ্জিনের বয়লারের মধ্যে জল না ঢুকতে পায়, তার জন্ত এ-রকম দরজা তৈরি। জল একটু নীচের তলায় পৌছলেই এই দরজ আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। জাহাজ ডুবির পরে যদি আবার এই ডুবো জাহাজ উদ্ধার করা সম্ভব হয় তা হ’লে বয়লারগুলিকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যেতে পারে । তারই জন্য এত বন্দোবস্ত । বোম্বাই পৌছবার আগে ভেবেছিলুম ডেকে গিয়ে দাড়িয়ে দেখব ভারতবর্ষকে দূর থেকে কেমন দেখায়। কিন্তু মনের ইচ্ছা মনেই রইল, পৌছবার মাত্র এক দিন আগে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে শয্যাশায়ী হতে হ’ল । জাহাজ বোম্বাইয়ের কাছাকাছি এসে গেছে। আমি বিছানায় শুয়ে-গুয়ে কিছু বুঝতে পারি নি। হঠাৎ যেন বহুকাল পরে কানে এল “আওর থোড়া আগে লেও,” আমি তড়াক ক’রে উঠে বসলুম, এ যে আমাদের দেশের কথা। পোর্টহোল দিয়ে দেখলুম জাহাজ বন্দরের কাছেই এসে পড়েছে। জাহাজ বোম্বাই বন্দরে পৌছলে আমরা নেমে এখানে দু-রাত্রি বিশ্রাম করলুম। শরীর একটু স্বস্থ হ’লে ২১শে অক্টোবর তারিখে বিকেলবেলার ট্রেনে রওনা হয়ে ২৩শে সকালবেলা হাওড়া ষ্টেশনে এসে পৌছলুম। সমাপ্ত