পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দাদার দুরভিসন্ধি শ্ৰ কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নিরঞ্জন ঘোষালের বাড়ি বেলম্বরে। তিনি গ্রামের বঙ্গবিদ্যালয়ে পণ্ডিতী করতেন। অন্ধ-বিদ্যায় তার খুব নামডাক ছিল ;–শুভঙ্কর ঘোষাল বললেই সকলে তাকে বুঝে নিত। বুদ্ধি নিতে আসত। পণ্ডিতী করে আর বুদ্ধি বিতরণ করে সংসার চলত মন্দ নয়। - ছুটি ছেলে—জগৎ আর শশীকে ইংরেজী পড়িয়ে তার সঙ্গে নিজের বিদ্যা বুদ্ধি মিশিয়ে মামুষ ক'রে তোলবার তার একান্ত ইচ্ছা ছিল। জগৎ ম্যাটিক পাস করলে বটে, কিন্তু হিসেবে আর বুদ্ধিতে বাপের প্রিয় হতে না পেরে একটি চাকরি জোগাড় করে আগ্ৰায় চলে গেল । ঘোষাল-মশায় বলতেন "জগৎ কেবল একটা নিরীহ জেন্টেলম্যান হয়ে গেল, তাতে সংসার কি সমাজের কোন উপকারই হয় না,—বাজে জিনিষ হয়ে রইল।” 豪 毒 带 শশী দিন-দিন শশিকলার মত বাড়তে লাগল, সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে উৎপাত অশাস্তিও বাড়তে লাগল। পুকুরের মাছ আর বাগানের ফল শশীর দলই দখল করে রইল। ঘোষালমশাইকে কেউ কিছু জানালে, তিনি বলতেন "ভুলে গেলে চলবে কেন, ও-বয়সে সব ছেলেই ও-রকম করে থাকে। ওটা চিরকেলে নিয়ম, ওতে বুদ্ধি খেলে কত ? ও না থাকলে বিদ্যাসাগর—বিদ্যাসাগর হতেন না। যে-সব ছেলের বুদ্ধি খেলে না তারাই বাড়ি থেকে নড়ে না। ওটা দরকার, ওতে বাধা দিতে নেই। আচ্ছা, আমি বারণ ক'রে দেব, কিন্তু দেখে নিও—ও গুনবে না-•••••• ইতিমধ্যে শশী কৈশোরে পৌছে গিয়েছে, ইস্কুলেও ফোর্থ ক্লাসে উঠেছে। শশী যে-ক্লাসে ঢোকে, তা থেকে নড়তে চায় না—বিধু মাষ্টারের খুব প্রিয়, তিনি পড়া দেন–পড়া নেন না। সৰ্ব্বদা তাকে এ-কাজে ও-কাজে ইস্কুলের বাইরেই থাকতে দেন, কারণ সে ক্লাসে থাকলে অন্ত ছেলেগুলির কিছু হবে না, এই তার ধারণা। অথচ তাকে প্রমোশনও দেন ; বলেন— “ও বুদ্ধির জোরে 'মেক-আপ করে নেবে।" তার উদ্বেগু সত্বর তাকে ডগায় ঠেলে দিয়ে ইস্কুলের বার করে দেওয়া, নচেৎ নবাগত ছেলেদের কিছু হবে না। বাড়িতে বাপ তাকে গণিত শেখান, বলেন, “গণিত ঘীর জানা আছে তার কাছে আর সব ত জলবং, বুদ্ধি বাড়াতে এমন বিদ্যে আর নেই—” শশীর লেখাপড়া জলবৎ হয়ে চলল। ঘোষাল-মশাই শশীকে নাবালক রেখেই ইহলোক ত্যাগ করে গেলেন—অবশু শশীকে তার বুদ্ধিটুকু যথাসম্ভব দিয়ে এবং বড়ছেলে জগৎ যে মানুষ হয় নি—এই দুঃখ নিয়ে। জগৎ সপরিবারে আগ্রা থেকে এসে শ্রাদ্ধ-শাস্তি শেষ করলে। শশীর ইচ্ছা ছিল—পঞ্চাশের বেশী খরচ না করা হয়। জগৎ তা পারলে না, আড়াই-শ পড়ে গেল । গ্রামের সকলে বললে, “জগৎ করবে বইকি, তার সময় ভাল ; মানসন্ত্রম বজায় রেখেই করেছে।” পশুপতিবাবু জ্ঞাতিখুড়ে, তিনি বললেন, “তা করুক না, তবে শশী নাবালক, তার শেয়ার থেকে না গেলেই হ’ল।” শশী বল পেয়ে বললে, “শৰ্ম্ম পচিশের বেশী এক পয়সা দেবেন না ।” পশুপতিবাবু বললেন, “ত পার ত বলব বাপের বেট, তিনি বাজে খরচের বিপক্ষে চিরদিনই ছিলেন। এক দিন ভাগ-বাটরা হবেই, তোমাদের এক-অঙ্গ, জগতের রোজগার বলে আলাদা কিছু থাকতে পারে না। যা-ইচ্ছা খরচ সে করতে পারে না। অর্ধেকে তোমার পুরো দাবি রয়েছে। আমি স্তায্য কথাই কবা।” শশী মনে মনে দৃঢ় হয়ে রইল। আগ্রায় ফেরবার আগে জগৎ শশীকে বললে, “একটু খেটে কোন প্রকারে এণ্টে লট পাস ক'রে ফেল ভাই ! তা হলেই আমি সাহেবকে ধ’রে তোমাকে একটা কাজে বসিয়ে দিতে পারব। জগৎ চলে গেল।