পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র দাদার দুরভিসন্ধি ጫማግ জগৎ বললে “ভাল কথা, ভান্টার হিসেব যে চুকিয়ে দেওয়া হয় নি। সে আজ সকালে এসেছিল।” "ওর জন্তে তোমাকে আর মাথা ঘামাতে হবে না। আমি ঠাকুরপোকে দিয়ে হিসেব করিয়ে কালই তার পাওনা চুকিয়ে দেব। হিসেবের কাজ ঠাকুরপোর মুখে মুখে।” “তবে তাই ক’রো, গরিবকে ফেরাফিরি না করা হয়।” শশী অংগ্রায় পৌছে পৰ্য্যস্ত গুয়ে গুয়ে সব লক্ষ্য করছিল, —তার ত কেবল অসুখ সারতে আসা নয়। সে দেখছিল – সাহেব ডাক্তার, ডাক্তার সাম্যাল, পেটেণ্ট ফুড, ঔষধ । পখ্য—ফ্র টু-শুস্, ডিম, স্বপ ইত্যাদি। আবার ঠাকুর চাকর দাসী, ভাইপো নরেশকে বাড়িতে পড়বার মাষ্টার। সবই ত অনাবশ্বক খরচ দেখছি ! কষ্ট আমাকে ত বাড়িতে পড়াবার জন্যে কোন দিন মাষ্টার দরকার হয় নি—তাতে কি লেখাপড় আটকেছে না কম হয়েছে ? এত বাড়াবাড়িতে আর টাকা থাকবে কি ? ওই সঙ্গে আমাকেও যে ডোবান হচ্ছে,–এক অল্পের টাকা যে! আমার জন্যে যেটা খরচ করা হচ্ছে, সেটা তো ওঁর শেয়ার থেকে যাবে, উনি ওঁর কৰ্ত্তব্য করছেন। আমি চাই নি, বলতেও যাই নি । সেরে উঠে আমি সব কাজ ফেলে ন্যায্য খরচের লিষ্ট বানাব, তা হ’লেই বাড়তিটা বেরিয়ে আসবে। সেই ধ’রে গোড়া থেকে বোঝাপড়া । হিসেবের কড়ি, বাবা বলতেন,—বাঘে হজম করতে পারে না । তার ওপর লাটসাহেবের কথা চলে না। সেরে উঠি আগে । শশী আর এখন সে শশী নেই,—চেহারা ফিরে গিয়েছে। বেলঘরের ফতুয়, দোলাই আর চটি চাকররা পেয়েছে। দাদার পরিচিত দোকানে দরাজ অর্ডার চলছে,—কামিজ, কোট, চেষ্টারফিল্ড, শূ সবই ফাষ্ট ক্লাস। দাদার কৰ্ত্তব্যে কেউ না ধুৎ ধরতে পারে! মনেও বেশ স্ফৰ্ত্তি দেখা দিয়েছে। আগ্রার বেদলী থিয়েটর ক্লাবে যায় আসে। পথ্য পূর্ববংই অাছে, কেবল লোফের পরিবর্তে দুধ রুটি চলছে। বড়বউ ছু-খানা ক'রে বাড়িয়ে সেটা ছু-ডজনের উপর তুলে দিয়েছেন। আহারের সময় নিজে কাছে ব’সে গল্প করেন আর শশীর স্বাস্থ্যের ও শরীরের উন্নতি দেখে মনে মনে আনন্দ উপভোগ করেন,—শ্বাশুড়ী দেখে নিশ্চয়ই খুশী হবেন । আজ শশীর খাওয়া প্রায় শেষ হ’য়ে এলে তিনি বললেন, “একটা কাজ ক'রে দেবে ভাই ? ওঁর সময়ও হয় না জার হিসেবের কাজে বিরক্তও হন, বলেন—সারাদিন ওই ক’রে এসে আর ভাল লাগে না।” শশী বললে, “কি বলই না, কাজটা কি ? হিসেবের কাজ কি সকলের আসে । বাবা তা বুঝেছিলেন, তাই তার নামটা বজায় থাকবে বলে আমাকে হিসেবে পাকা ক’রে গিয়েছেন। ওটা আমার সখের আর ঝোকের কাজ—ওই ত খুজি। তা না-পেঃেই ত ওই আনাড়ি ছোড়াদের ক্লবে গিয়ে বসি । সব একদম বালি পাউডার, ওরা আবার প্লে করবে ! দু-হুপ্ত চেষ্টা ক’রে কেউ জটায়ুর পাট করতে পারলে না। দেখিয়ে দিয়ে মুস্কিলে পড়েছি, এখন আমাকেই ধ'রে বসেছে। আমারই ভুল, কথায় কথায় এক দিন ব’লে ফেলি—তরণীসেনবধে তরণীর কাটামুগু সাজতে হয়। কাটামুণ্ড যখন ‘রাম রাম বলতে বলতে ষ্টেজের উপর গড়িয়ে বেড়ায়, অডিয়েন্স স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে উঠেছিল। শেষ পৰ্য্যস্ত সেই ট্রাজিক ব্যাপার সইতে না পেরে সব পালিয়ে যায়। তাকে বলে প্লে-ভারি কসরতের কাজ । জটায়ু সাজাও সোজা নয় বৌদি। শুধু ডানায় আর ঠোঁটে তিরিশ সের বইতে হয়—ইস্পাতের 'সেট' কিনা...” “না ঠাকুরপো, ও তিরিশ সের বোঝা বওয়া হবে না ভাই, কত ভাগে তোমাকে ফিরে পেয়েছি ! ও আর কেউ করুক।” “কেউ পারলে ত! আমরা কলকেতা-ঘেষা ছেলে, একটা কিছু দেখিয়ে দিয়ে যাব না ? ঠোঁট তয়ের করতে দিয়েছি ইস্পাতের, কেন জান ? রাবণকে যখন শূন্তপথে তেড়ে তেড়ে আক্রমণ করব—করতালি বাজাব ওই ঠোটেই । তবে না সব তাক মেরে যাবে –নাম করবে না, তবে আর প্লে কি ?” ঘড়বউ দেখলেন--হিসেবের গয়া হয়ে যায়। বললেন, “তবে ত দেখতেই হবে ভাই ।” "আলবৎ, তুমি দেখবে না! আমি নিজে সঙ্গে করে নিয়ে যাব,—খাতিরটে দেখে একবার ।” “এখানে কিছুই দেখতে শুনতে পাই না। ভাগ্যে যদি