পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরতের মেঘ ীিপুষ্প দেবী ভাল লাগছিল না। সেতারের সমস্ত তার ঢিলে হয়ে গেলে যেমন লাগে, কোন স্বরই বাজে না, আমারও তেমনই মনে হচ্ছিল । নিজেকে অসুস্থ মনে হচ্ছিল। দেহে না মনে সেটাই ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। কাছারি থেকে ফিরে কাপড় ছেড়ে একেবারে বিছানায় গুয়ে পড়লাম। একটা ক্লাস্ত অবসাদ । মন যেন একটা অবলম্বন চাইছিল। আজ হঠাৎ মনে হ’ল, জীবনটাকাটালাম একটা রুক্ষ শূন্যতার মধ্যে। মধুর অসহায়তায় কারুর সবল প্রেমের শরণও পেলাম না, কেউ ভীরু নির্ভরে আশ্রয়ও চাইলে না। সব সময় সতর্ক স্বাধিকার নিয়ে খুশী থাকা যায় না, অন্ততঃ এক জনের কাছে দুৰ্ব্বল হ'তে সাধ হয়। শাসন-দও সব সময় হাতে নেওয়ার চেয়ে কারুর কাছ থেকে দও মাথায় নিতে ইচ্ছে করে। জীবনটা ত আর আড়ষ্ট কঠিন নিয়মানুবর্তিতার জের টানা নয়, প্রথার বন্ধন থেকে মুক্তি না পেলে ষে বাচা অসম্ভব । ছদ্মবেশে যে জীবন দুঃসহ হয়ে ওঠে । স্বভাব মাঝে মাঝে ছুটি চায়। তাই আজ সমস্ত মন চাইছিল—বিশৃঙ্খল, অনিয়ম, অকৃত্রিমতা ; সমাজের দেওয়া খোলসটা প্রাণের ওপর থেকে টেনে খুলে, ছুটে মুক্ত নীলাকাশের তলায় যেতে। এত দিন ত বাধাধরা নিয়মের দাসত্ব ক'রে অর্ধেক জীবনীশক্তি ক্ষয় করলাম, আজ না-হয় একটু বিশৃঙ্খলার মধ্যে বঁাচার খোরাক জোগাড় করি। চোখ বুজে শুনতে পেলাম।একটা দ্রুত কঠিন খটু খটু শম্ব। বুঝলাম শ্ৰীমতীর আগমন। এদের আবির্ভাবের বার্তা এর বহু দূর হতেই জানিয়ে আসেন।---স্বপ্নের পাপড়ির ওপর সঙ্কুণ্ঠ সতর্কতায় পা ফেলে মানসী আসে চুপে চুপে, দেহে-মনে একটা মোহাবেশ জাগিয়ে, পায়ের শব্দ শোনা যায় না, কিন্তু সে পদধ্বনি শকের অতীত হয়ে অনুভূতি জাগায় প্রাণে .এর সশব্দচারিণী, মোহ ভাঙিয়ে আসেন। যা-কিছু স্বকোমল, মুকুমার এরা পায়ের তলায় পিষ্ট করে আসেন। শুনতে পেলাম শব্দ আমার দিকেই আসছে। তাহলে আমারই কাছে আসছেন দেখছি। বড়-একটা আসেন না ত, অবশ্ব প্রয়োজন ছাড়া। আসবার সময়ই বা কই ? যাকৃ— উঃ হেঁটে আসছেন তাও যেন ছুটে। ওই হাই-হিল প'রে ওঁরা যে কি ক’রে অত ছোটেন, ভাবলেও আমার মাথা ঘুরে যায়। এ যুগের প্রগতি-জীবন যেমন দ্রুত, এদের চলার গতিও তেমনই। এ যুগের মতই সশব্দ, বাধাহীন ও রূঢ় । চলার পথে কত কি যে দ’লে, চূর্ণ করে, নষ্ট করে গেলেন তাও পিছন ফিরে দেখবার অবসর এদের নেই। গতিই ওঁদের বিলাস, গতিই ওঁদের আনন্দ । তিনি দ্রুতপদে এসে স্ক্রত হন্তে পর্দাঠেলে ঘরে ঢুকেই যেন ঈষৎ আশ্চৰ্য্য হয়ে ফিরছিলেন। বুঝলাম গতির দ্রুততায় এরা গতিহীনদের চোখে দেখতে পান না। সুউচ্চ ও সূক্ষ্ম কণ্ঠ শোনা গেল—“বেয়—রাঃ ” “श्छू-ब्र-ब्र !” “সাব কাহ ?”

  • আপনা কাম্রামে, হুজুর ”

“কভি নেহি—* বেয়ার প্রতিবাদ না করাতে তিনি কি ভেবে ঘরে ঢুকে একটু ভাল ক'রে দেখেই বিরক্ত বিস্ময়ে বলে উঠলেন— *এ কি ? এমন সময় গুয়ে ? এত কিসে মগ্ন যে আমি ঘরে ঢুকলাম সাড়া দিলে না ? সামান্ত ভদ্রতাও কি ভুলেছ ?” হায় রে, নিজের স্ত্রীর কাছেও ভজতার বুলি আওড়াতে হবে ? আচ্ছা, দিনরাত কি এরা ইপিয়ে ওঠে না ? না, বাধ গৎগুলো ওদের অস্থিমজায় মিশে গেছে, কষ্ট করতে হয় না, আপনিই বেরিয়ে আসে। সোসাইটির শাশ্যন্ত্রে এরা পালিশ হয়ে চক্চক্ করে। ভুলচুক ওদের হয় না। অকৃত্রিম অনাড়ম্বরের মাঝে ওরা বঁাচে না, দম বন্ধ হয়ে আসে। এই নিখুঁত নিভুলতার চাপে এদের মনটা গেছে পিষে—ম'রে । কিন্তু সেটা তারা জানে না এবং এইটাই আমার সব চেয়ে