পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাগদত্ত৷ ঐীপ্রমথনাথ বিশী রাণুর সঙ্গে রজত রায়ের আজ তিন মাস ধরিয়া পূৰ্ব্বরাগের পালা চলিতেছে, কিন্তু কিছু সুবিধা হইতেছে না। উভয় পক্ষ ধনী, বিবাহে কোন বাধা নাই, তবুও। রজত ইতিমধ্যে তিন বার মোটর ও চার বার বাসা বদল করিয়াছে, সাধনা অদম্য উৎসাহে চলিয়াছে, সিদ্ধির দিকে এক পা-ও অগ্রসর হইতে পারে নাই । আসল কথা, প্রত্যেকের একটি করিয়া মৰ্ম্মস্থান আছে, সেখানে হাত না-পড়া পৰ্য্যস্ত সাড়া পাওয়া যায় না। কিন্তু অধিকাংশ লোকেরই মর্শ্ব এত অবারিত যে হাত দিতেই সেখানে পড়ে। দু-এক জনের মৰ্ম্ম সত্যই রহস্যময়, আমাদের রাণু সেই দলের। রজত কি ছাই এত কথা বোঝে, না তাহার ভাবিবার সময় আছে! সে নিযুত আসে যায়, রাণুর সঙ্গে গল্প করে, গান শোনে, চা খায় ; সন্ধা উত্তীর্ণ হইয়া গেলে মুখ গম্ভীর করিয়া মোটর ইকাইয়া বাড়ি ফেরে। অবশেষে উভয় পক্ষের কৰ্ত্তারা বিরক্ত হইয়া উঠিলেন। রজতের ব্যারিষ্টার পিতা তহিকে শুভবিবাহের এক মাসের নোটিশ দিলেন। শুনিয়া রজত তৃতীয়তম মোটর হাকাইয়। রাণুর বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল। রাণুর কাছে খবর গেল। রজত বসিয়া টেবিলের বই লইয়া নাড়িতে লাগিল। ই, একটা কথা অনাবশ্যক মনে করিয়া বলি নাই, বিশেষ, শুনিলে হয়ত রাণুর উপরে পাঠকের শ্রদ্ধা কমিয়া যাইতে পারে, এমন কথাও মনে হইয়াছিল । কিন্তু আর গোপন করিয়া ফল নাই, রজতের হাতে এখনই তাহা ধরা পড়িবে। রাণু মহাভারত পড়ে। পারে বাঁধা খাস কাশীদাসী গ্রন্থ । বই নাড়িতে নাড়িতে রজত একখানি কাশীদাসী মহাভারত আবিষ্কার করিয়া ফেলিল। বহু অধ্যয়নের চিহ্ন তাহার মার্জিনে । তাহাতে ছোট বয়সের মোটা অক্ষর ও বড় বয়সের ছোট অক্ষর সবই আছে। সে অন্যমনস্ক ভাবে পাতা উন্টাইতে উন্টাইতে হঠাৎ দেখিল দ্ৰৌপদীর স্বয়ম্বরের পাতায় লেখা আছে, “উ, অর্জুন কত বড় বীর। নিশ্চয় অনেক বাঘ সে মারিয়াছে।” আবার, আর এক পাতায়, ভীমের বক রাক্ষস বধের ছবির তলায়,—“ভীম না জানি কত বাঘ মারিয়া ফেলিয়াছে।” এক, দুই, তিন । এক মুহূর্জের মধ্যে রজতরঞ্জনের মনে একটা দিব্যদৃষ্টির বিদ্যুৎ চমকিয় গেল ! এমন দিব্যদৃষ্টি লাভ জীবনে কদাচিৎ ঘটিয়া থাকে। বাহিরে রাণুর পদশৰ শোনা গেল। রজত মহাভারত যথাস্থানে রাখিয়া দিয়া ভদ্রলোকের মত বসিল । রাণু প্রবেশ করিতে সে বলিয়া উঠিল—রাণু আমায় দিনপনরর ছুটি দিতে হবে! “কেন ?” “একবার স্বন্দরবনে যাব।” রাণু ঠাট্টার স্বরে বলিল, “জমিদারী দেখতে বুঝি,— নায়েবরা খুব চুরি করছে !” রজত বলিল, “হঁ, জমিদারী ত দেখা দরকারই আর ঐ সঙ্গে গোটকিয়েক বাঘও মারব ।” ‘বাঘ’ ! রাণু চমকিত হইয়া উঠিল। রজত আড়চক্ষে তাহা লক্ষ্য করিল। “আপনি বাঘ মারতে পারেন । কই, আমাকে ত বলেন নি ?” রজত তাচ্ছিল্যের স্বরে বলিল, “হামেশাই ত মারছি, কত বলব ! আমি যে দু-বেলা ভাত খাই, তা-ও ত তোমাকে বলি নি ।” রাণু বিম্বিত ভাবে বলিল, “কিন্তু আপনাকে দেখে ত মনে হয় না যে আপনি বাঘ মারেন।” রজত চেয়ার হেলান দিতে দিতে বলিল, “আমাকে দেখে কার কি মনে হবে সেজন্য কি আমি দায়ী ?”

  • আপনি কটা বাঘ মেরেছেন ?”

“হবে পঞ্চাশ-যাটটা"

  • তার মধ্যে রয়াল বেঙ্গল কণ্টা ?”