পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b=RU প্রবাসী 상\eg স্ববিধা এখানে আছে, যা কলিকাতায়ও নাই। এখানে যত ঘণ্ট খুলী বসিয়া মাছ ধরা যায়। একটা ঘোড়া বেশ ভালই পাওয়া গিয়াছে, সকাল সদ্ধা খুব দৌড় করান যায়। ভীত সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী দুই ধারে দাড়াইয়া আভূমি নত হইয় নমস্কার করে, তাহাও দেখিতে বেশ লাগে । মাইল দুইতিন দূরে একটা বড় বিল আছে, সেখানে পাখী যথেষ্ট । একদিন গিয়া খানিকট শিকার করিয়া আসা যায় কিনা, সে ভাবনাও স্বজিত ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে । ভাবী জমিদার রূপে এখানে যতটা সম্মান সে পায়, কলিকাতায় তাহার দশ ভাগের এক ভাগও সে পাইত না। স্বতরাং এখানে আসিয়া আর যেই ঠফুক সে ঠকে নাই । তৃতীয় দিন সকাল হইতে আকাশটা একেবারে স্বন্দর পরিষ্কার হইয়া গেল। কোথাও মেঘের লেশমাত্র নাই। বর্ষা শেষ হইয়া এবার শরৎ যে দেখা দিবে, কলিকাতায় তাহা এত স্পষ্ট করিয়া বুঝা যায় না। ঘন নীল আকাশের দিকে সমালোচকের দৃষ্টিতে চাহিয়া স্বরেশ্বর বলিলেন, “এই রকম দিন থাকলে কালই বেরিয়ে পড়া যায়। আমি বাদলার ভয়েই দেরি করছিলাম।” যামিনী বলিলেন, “এর পর আর বিষ্টি থাকবে না বোধ হয়, আশ্বিন মাস পড়ে গেল।” স্বজিত বলিল, “কাদাটা ভাল করে শুকিয়ে গেলে ঐ কাগমারী বিলটায় একদিন শুটিঙে যেতাম। খুব পার্থী আছে নাকি ওখানে ৷” স্বরেশ্বর গম্ভীরভাবে বলিলেন, “বড় সাপখোপ জায়গাটায়, গেলেও খুব সাবধানে যাবে।” মমতা বলিল, “বাপ রে বাপ, এই একটা ঘরের মধ্যে বসে ইপিয়ে মরবার জো হয়েছে আমার। বিকেল অবধি এই রকম পরিষ্কার থাকলে আমি ঠিক একটু বেড়িয়ে আসব।” এই প্রস্তাবই যদি যামিনীর মুখ দিয়া বাহির হইত, তাহ হইলে সুরেশ্বর একেবারে হা হা করিয়া উঠিতেন । কিন্তু মমতার কোনো অনুরোধ আজ পর্ষ্যস্ত তিনি ঠেলিতে পারেন নাই। বলিলেন, “ত খেও ঐ পূব দিকের মাঠটায়। বেশ পরিষ্কার, ঝোপঝাপ বেশী নেই, আর লোকজনের বসতিও তত নেই। এক জন কি আর এক জন দরোয়ান সঙ্গে নিও।” কথাবাৰ্ত্ত হইতেছিল সকালে চায়ের টেবিলে। মমতা আর যামিনী সকাল হইতেই চা থাইতেন, স্বজিত আর সুরেশ্বরের অনেকটাই দেরি হইত। যামিনী দ্বিতীয় বার আসিয়া আবার চায়ের টেবিলে হাজির দিতেন, মমতা কোন দিন আসিত, কোন দিন আসিত না। মমতা বেড়াইতে যাইবার অল্পমতি লাভ করিয়াই উঠিয় গেল। এক জায়গায় কিছুতেই সে বেশী ক্ষণ বসিয়া থাকিতে পারিত না । সুজিতেরও বাপমায়ের সান্নিধ্য বেশী প্রিয় ছিল না, সে দ্বিতীয় চায়ের পেয়ালাটা শেষ করিয়াই উঠিয় নিজের ঘরে প্রস্থান করল । যামিনীও উঠিবেন উঠিবেন করিতেছেন এমন সময় স্বরেশ্বর বলিলেন, "খুকীর এখনও বিয়ে হয়নি দেখে প্রজার বড় অবাক হয়েছে । এ রকম প্রথা পাড়াগায়ে এখনও চলে নি কি না ।" ইহার উত্তরে কি বলিলে সুরেশ্বর চটিয়া উঠিবেন না, তাহা ভাব দরকার । কাজেই যামিনী চটু করিয়া কিছু উত্তর দিলেন না। স্বরেশ্বর নিজেই বলিয়া চলিলেন, “মেয়ের বিয়ে এই রকম জায়গায় দিতে পারলে স্ববিধে হয় অনেক । দুষ্ট প্রজা বশে আসে, দু-পয়সা বেশী তাদের কাছ থেকে পাওয়াও যায়। আমার বাবা গল্প করতেন যে মেয়ের বিয়েতে কখনও তাদের ঘর থেকে টাকা বার করতে হয় নি, প্রজারাই চালিয়ে দিয়েছে। অবিশুি কলকাতায় যে রেটে খরচ, এখানে সে রেটে খরচ হয় না।” যামিনী বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “যা না তোমার প্রজাদের অবস্থা, তার আবার তোমার মেয়ের বিয়ের খরচ দেবে । খেতে না পেয়ে সব শুকিয়ে মরছে।” স্বরেশ্বর সৌভাগ্যক্রমে একেবারেই চটিয়া আগুন হইয় উঠিলেন না। বলিলেন, “ই: ওসব মামুলি বাধিগৎ। আমার চতুর্দশ পুরুষ প্রজা চরিয়ে খেয়েছে, ওদের আমরা খুব চিনি । যে-বছর মাঠে সোনা ফলে সে-বছরেও ওদের মুখে ঐ বুলি শুনবে। চোখে গামছা না দিয়ে ওরা জমিদারের সামনে আসেই না।” ঠাকুর আসিয়া কি একটা জিজ্ঞাসা করায় যামিনী বাচিয়া গেলেন । প্রতিবাদ স্বরেশ্বর সহ করিতে পারেন না, আর এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করা ছাড়া উপায়ও ছিল না।