পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র জন্মস্বত্ব ఆక్చా ঠাকুরের সমস্তার মীমাংসা করিয়া যামিনী ঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন মমতা কোথা হইতে একটা চরকা জোগাড় করিয়া স্বতী কাটিতে বসিয়া গিয়াছে। স্বতা কাটা কোন জন্মে তাহার অভ্যাস নাই, চরকাও বোধ হয় এই সে প্রথম চোখে দেখিল। কাজেই স্থত যা হইতেছে তাহা বুঝাই যায়। মমতার কিন্তু ধৈৰ্য্যের অবধি নাই, ছেড়া স্বতা ক্রমাগত জোড়া লাগাইয়া সে একমনে কাজ করিয়া চলিয়াছে। যামিনী একটু হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ওকি হচ্ছে, মা ? চরকা কোথায় পেলে ?” মমতা মুখ তুলিয়া চাহিল ; গালের কাছটা তাহার একটু লাল হইয়া উঠিল। বলিল, “নিধুকে দিয়ে আনিয়েছি, মা । একেবারে অকৰ্ম্ম হয়ে বসে থাকতে ভাল লাগে না, যদি একটুও স্বতে তৈরি করতে পারি, তা বেচে যা দু-এক আনা পাব, তা আমার ইচ্ছেমত ত খরচ করতে পারব ?" যামিনী একটু বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “তা অবিশুিই পারবে। কিন্তু দু-এক আনা পয়সাও কি আর তুমি ইচ্ছামত খরচ করতে পাও না ? আমি ত তোমাকে কিছু বাধা দিই না, তোমার বাবাও তোমাকে কিছু বলেন না।" মমতা বলিল, “তা জানি মা, কিন্তু টাকা ত সব বাবার, যেভাবে খরচ করলে তিনি রাগারগি করবেন, সেভাবে খরচের জন্তে র্তার টাকা নিতে ইচ্ছে করে না ।" যামিনী আন্দাজে বুঝিলেন মেয়ের ব্যথা কোন থানে, বলিলেন, “তা করে না বটে ; তবে চরকাই কাট। পাড়াগায়ে টাকা রোজগার করার আর ত কোন উপায় দেখি না।” দুপুর বেলার অনেকটাই মমতার এই চরকা লইয়া কাটিয়া গেল। স্বতা হউক বা না-হউক সময় ত কাটিল, সেইটাই বা কি কম লাভ ? বিকাল হইতে-না-হইতে সে চুল র্বাধিয়া, কাপড় বদলাইয় বেড়াইতে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া দাড়াইল। যামিনীকে বলিল, “তুমি যাবে মা ?” তিনি গেলে স্বরেশ্বর হয়ত চটিয়া উঠিবেন । কিন্তু ঘরের কোণে বসিয়া বসিয়া যামিনীরই বা দিন কাটে কিরূপে ? তিনিও একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিলেন, “তা চল। দাড়াও, আমি গা ধুয়ে আসছি চট্‌ করে।” আধ ঘণ্টা পরেই যামিনী মেয়েকে লইয়া বাহির হইয় পড়িলেন। সঙ্গে ঝি ঘরোয়ানও চলিল, যদিও কাহারও যাইবার বিন্দুমাত্রও প্রয়োজন ছিল না। পূৰ্ব্ব দিকের মাঠটা পতিত জমি, গোচারণের জন্যই কেবল ব্যবহৃত হয়। এদিকে চাষও হয় না, লোকজনের বসতিও নাই। মোটের উপর পরিষ্কার, বেড়াইবার পক্ষে ভাল । থানিক দূর আসিয়াই মমতা বলিল, “বিটি যদি আর না নামে ত বঁাচা যায়। রোজ তা হ’লে এখানে বেড়াতে আসি।” যামিনী বলিলেন, “তুমিই আসবার জন্তে সব চেয়ে ব্যস্ত হয়েছিলে মা, তোমারই এখন একেবারে ভাল লাগছে না।" মমতা আরক্ত মুখে চুপ করিয়া রহিল। কেন যে সে আসিতে চাহিয়াছিল, আর কেনই যে তাহার ভাল লাগিতেছে না, তাহা সে মাকে বুঝাইবে কিরূপে ? 娥 খানিক পরে বলিল, “সারাদিন খালি একটা ঘরে বন্ধ হয়ে থাকতে হবে তা ত মনে করি নি ?” যামিনী বলিলেন,"রোজ বেড়াতে বেরিও বিকেল বেলাটা, তাহলে অতটা খারাপ লাগবে না। এদিকে লোকজন কিছু নেই, তোমার বাবা আপত্তি কববেন না।” সঙ্গের ঝি হঠাৎ বলিয়া উঠিল, “ঐ উত্তর দিক থেকে কয়েকটি ছোক্রাবাবু আসতেছে মা । ফিরে যাবেন নাকি ?” যামিনী তাকাইয়া দেখিলেন চার-পাঁচটি যুবক জালিতেছে বটে। হাতে তাদের মস্ত মস্ত চটের থলি, এক জনের হাতে মন্ত একটা ঝুড়ি। বুঝিলেন ইহার কলিকাতার স্বেচ্ছাসেবক দলের কেহ হইবে, কোথাও কাজে গিয়াছিল, এখন নিজেদের আডডায় ফিরিয়া চলিয়াছে। মমতা কম্পিত কণ্ঠে বলিয়া উঠিল, “ফিরে গিয়ে কি হবে মা ? আমরা যেমন যাচ্ছি যাই না ?” কলিকাতায় তাহারা পর্দানলীন ভাবে থাকেন না, স্বতরাং এই কলিকাতার ছেলের দল তাহদের দেখিয়া ফেলিলে নিশ্চয়ই চণ্ডী অশুদ্ধ হইয়া যাইবে না। যামিনী বলিলেন, “না ফিরব না, ওরা যাচ্ছে যাক না। তাতে কি ?” ছেলের দল তখন বেশ খানিকটা কাছে আসিয়া পড়িয়ছে। মমতার বুকের রক্ত উদাম তালে নাচিয়া উঠিল, পা দুইটা ঠক্ ঠক্‌ করিয়া কঁাপিতে লাগিল। অমরকে সে চিনিতে পারিয়াছে। সেও কি তাহাকে চিনিতে পারিয়াছে ? মমতার কি তাহাকে না-চিনিবার ভান করিয়া চলিয়া যাওয়া