পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র দুল, আঙুলে সোনার আংটি ইত্যাদি অল্পস্বল্প গয়নাগটি আছে বটে, কিন্তু বেশীর ভাগই সম্পূর্ণরূপে নিরাভরণা। নিজেদের নিরাভরণ-নিটোল দেহকে এরা পুষ্পাভরণে সজ্জিত করেছে, বিবাহিতা নারীরা খোপায় গুজেছে বনফুল, কুমারী কিশোরী আর তরুণীরা কানে পরেছে ফুলের দুল, গলায় ছুলিয়ে দিয়েছে ফুলের মালা, হাতে তাদের এক একটি ক’রে স-মৃণাল বিকাশোম্মুখ পদ্মকোরক। সবাকারই ললাট, নাসিক এবং কপোলে শ্বেত চন্দনের পত্ৰলেখা। চলতে চলতে ক্লাস্ত হয়ে কেউ কেউ পথিপাৰ্থস্থ ছতরির তলায় ব'সে জিরুচ্ছে আর খাবার কিনে খাচ্ছে । পসারিণীর কাছে খাদ্যদ্রব্য ছাড়া আছে এক একটি পত্রপুটে পাঁচ-সাতটি ক'রে স্বগন্ধি ফুল । খেয়ে-দেয়ে, যাবার কালে মেয়ের দু-এক পয়সা খরচ ক’রে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে । এদের এই পুপপ্রীতি দেখে মনে পড়ল ফুল-কেনা সম্বন্ধে মহম্মদের উপদেশ থেকে কবি সত্যেন দত্তের অনুদিত নিম্নোক্ত কয়েকটি পংক্তি— জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিয়ে ক্ষুধার লাগি । ছুটি যদি জোটে তবে অৰ্দ্ধেকে यूल किएन निcब्र, cश् चत्रूबांगै । মহাপুরুষের এই উপদেশ এরা দেখছি একেবারে অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে । সভ্যতাভিমানী আমাদের মতন পয়সা খরচ ক’রে পুপ ক্রয় করাকে এই তথাকথিত অসভ্য মেয়েরা অনাবশ্যক অপব্যয় ব’লে মনে করতে আজও শেখে নি । বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে এদের অন্তরতম প্রকৃতির নিবিড় যোগস্বত্র আজও ছিন্ন হয়ে যায় নি। চার-পাচ মাইল এগোবার পর দেখি রাস্তার দু-ধারে ধানের ক্ষেত শরতের সোনালী রোদে ঝলমল করছে। এদেশে যে আমন চোখজুড়ানো মাঠ-ভরা সোনার ধান দেখব, তা কল্পনারও অতীত ছিল। এদেশের লোকেরাও ঠিক্ আমাদেরই মতন, “এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে," বলে গৰ্ব্ব অঙ্গভব করতে পারে। রাস্তার ডানদিকে ধানক্ষেতের শেষপ্রান্তে কোথাও চক্রবাল-ঘেষা সুদূর নীল বনরেখা, আর কোথাও বা স্বম্পষ্ট দেখা যায় একেবারে সমতল ভূপৃষ্ঠ থেকে তরজাতি পাহাড়ের মালা স্তরে স্তরে ক্রমোচ্চ ভাবে گ هد-سیاه و মণিপুর-প্রবাসে tూrరి অভ্ৰভেদ ক’রে উঠেছে। নীল সমূত্রের বিপুল তরজমালা আকাশের নীলিমা স্পর্শ করবার জষ্ঠে যেন আকুল আবেগে উচ্ছ্বসিত । বেলা চারটের সময় ‘বরে” পৌছে ছোট একটি টিলার উপর আরোহণ করলাম। একটি বড় চালাঘরের সাম্নে সু-উচ্চ সরু বাশের ডগায় কতকগুলো লাল কাপড়ের ঝালর এবং সেগুলোর নীচে একটা চওড়া লাল কাপড় পতাকার মত টাঙানো। গৃহাভ্যন্তরে আন্দাজ ত্রিশ-বত্ৰিশ জন মণিপুরী পুরুষ করতাল বাজিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে হরি-কীৰ্ত্তন করছেন, আর মাঝখানে দাড়িয়ে দু-জনে নানা প্রকার অঙ্গভঙ্গী সহকারে গোল বাজাচ্ছেন। কীৰ্ত্তনগায়ক এবং খোলবাজিয়েদের মাথায় শাদ উষ্ণৗষ, পরনে ধবধবে শাদা ক্টোচানো ধুতি, কোমরে শাদা চাদর জড়ানে, গা আছড়। গলায় তাদের উপবীত, কণ্ঠে তুলসীর মালা, ললাটে চন্দনের তিলক এবং সি দুরের ফোট, সৰ্ব্বাঙ্গে বৈষ্ণবের নিদর্শন-চিহ্ন হরিনামের ছাপ । কিছু সময় কীৰ্ত্তন গুনে, দুর্গামন্দিরে প্রবেশ করলাম। একটি কক্ষে মেঝের ওপর এক সারিতে কতকগুলো সিছুরমাখানে শিলাখণ্ডের নিকট বসে মণিপুরী পাণ্ডার দর্শনার্থীদের কাছ থেকে প্রণামী আদায় করছে। এই প্রস্তরখণ্ডগুলোর নাম “লাইফাম' অর্থাৎ দেবীর অধিষ্ঠানস্থল। এ ছাড়া এ মন্দিরে দুর্গার কোনো মূৰ্ত্তি নেই। মন্দিরের পিছন দিকে মেরাপ বেঁধে মাটিতে বিছানো ফালাও বিছানায় রাজার বসবার ঠাই করা হয়েছে। হঠাৎ অদূরে ব্যাণ্ডের বাজনা বেজে উঠল। অনতিপরেই রাজা সৈন্যদল সমভিব্যাহারে উৎসবস্থলে এসে নির্দিষ্ট স্থানে আসন গ্রহণ করলেন । রাজা ঘোর কৃষ্ণকায়, মোটা এবং বেঁটে । এমনতর মিশকালো রং মণিপুরীদের মধ্যে বড়-একটা দেখতে পাওয়া যায় না। এর চেহারায় বা পোষাক-পরিচ্ছদে রাজোচিত কোন লক্ষণই নেই। আসলে ইনি হচ্ছেন এক জন ভূক্টফোড় রাঙ্গা। এর পিতা চৌৰী জৈম ছিলেন মণিপুরের নিতান্ত নগণ্য এক প্রজা। এদিকে, থিদেয় পেট চুষ্ট চুই করছে। স্বতরাং রাজদর্শনের পরই আমরা ইম্ফলের পথে রওনা হলাম। শহরে পৌছে নেমস্তন্ন রক্ষার জন্যে কুমুদ বাবুর বাসায় গিয়ে গুনলুম যে আজ বাবুপাড়ায় মণিপুরীদের দ্বারা ‘খাম্বা আর থইবি’ নামক একটি পালা অভিনীত হবে। খাওয়া