পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*g。 প্রবাসী @N罗8守_ ষে যার নিদিষ্ট স্থানে বসেছে। অনতিদূরে উদ্ধে উত্তোলত বিরাট ধ্বজাসমূহ বাতাসে পতপত করে উড়ছে। খানিক বাদে রঙীন বস্ত্রপরিহিত জনকতক সৈন্ত উংসবপ্রাঙ্গণের মধ্যস্থলে দাড়িয়ে স্বরু করলে বর্শামৃত্য। এক হাতে তাদের পগুলোমে শোভিত সুদীর্ঘ স্বতীয়ু বর্শা, অন্ত হাতে মজবুত ঢাল। পায়ে চামড়ায় তৈরি তুলোভরা পাদচ্ছদ, নৃত্যঅস্তে এর উপুড় হয়ে মাটিতে সটান গুয়ে পড়ে বাহুগুলো স্বমুখের পানে প্রসারিত ক’রে রাজাকে প্ৰণতি জানালে । তার পর এল বছর-নয়েকের একটি উজ্জল গৌরবর্ণ স্বকুমার শিশু, দু-হাতে দুখানা শাণিত তরবারি ক্ষিপ্রগতিতে এবং অপূৰ্ব্ব কৌশলে ঘুরিয়ে এই বীরশিশু অসি-ক্রীড়ার নৈপুণ্যে সবাইকার তাক লাগিয়ে দিলে। এই সময় আজামুলম্বিত কালে কোর্তা পরিহিত কয়েক জন যুক্তকরে দাড়িয়ে রাজপ্রশস্তি আবৃত্তি করলে আর কোটপ্যাট-পরা সৈন্যেরা রাজাকে প্ৰণাম করবার জন্যে ভূয়ে লুটোবামাত্র এর তাদের সর্বাঙ্গ লম্বা চাদরে ঢেকে দিলে। অকস্মাং গম্ভীর নির্ঘোষে যুগপৎ বেজে উঠল কতকগুলো শাখ, সঙ্গে সঙ্গেই রাজা গাত্রোথান করে ঠিক সাম্ন-সামূনি অবস্থিত আর একটি পর্দা-ঘেরা ছোট ঘরের ভিতর ঢুক্লেন। সেখানকার কৃত্য অন্তে রাজা পুনরায় পূৰ্ব্ব স্থানে এসে আসন গ্রহণ করবার পর, তারই নির্দেশমত সমাগত সর্দারদের মধ্যে ধারা এ বছর কোননা-কোন বিষয়ে কৃতিত্ব দেখাতে সমর্থ হয়েছে, তাদের সম্মানিত করবার উদ্দেশ্যে নানা প্রকার পরিচ্ছদ, পার্থীর পালক এবং এমনি ধংণের আরও নানা জিনিষ বিতরণ করা হ'ল। অতঃপর শোভাযাত্রাটি পুনর্গঠিত হয়ে এগিয়ে চলল রাজপুরীর দিকে । পুরস্কারের নিকট এসে দেখি মহাৰ্ঘ পরিচ্ছদে ভূষিত অপূৰ্ব্ব স্বন্দরী রাজান্তঃপুরিকার চিত্রাপিতবং প্রাসাদের অলিন্দে দাড়িয়ে শোভাযাত্রার সমারোহ অবলোকন করছেন। রাজবাটীর স্বমুখের ফাক ময়দানে পৌছেই মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। আমিও তখন আমার আস্তানার পথ ধরলাম। মইরাঙের পথে—লোগতাক হ্রদ ৮ই সেপ্টেম্বর । ক্ষান্ত-উৎসব ইম্ফল নগরী আজ ভোরবেলা থেকেই একেবারে নিঝুম। এই কয় দিনের অনিয়ম জার ঘোরাঘুরির দরুন আজ আর নড়তে চড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু মনে পড়ল যে, ছুটিও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে এবং মণিপুরের স্বপ্রসিদ্ধ লোগতাক হ্রদ এখনও দেখা হয় নি। চটপট শরীরটাকে চানকে নিয়ে মাইলথানেক রাস্ত হেঁটে এসে মইরাংগামী মোটর ধরলাম। মইরাং ইম্ফল থেকে ২৭ মাইল দূরবর্তী একটি ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থান, এখান থেকেই নৌকা ক'রে হ্রদ দেখতে যেতে হয়। ডাঃ লৈরেন সিংহের নিকট থেকে মইরাংএর খাইদ্রাকৃপা বা প্রধান রাজকৰ্ম্মচারীর নিকট লিখিত একখানা পরিচয়-পত্ৰ পূৰ্ব্বেই যোগাড় করা ছিল। মোটরটা মণিপুরী মেয়েতে ভৰ্ত্তি। এদেশে পুরুষদের চাইতে মেয়েদের সংখ্যা যে ঢের বেশী, তা হাটে-ঘাটে, রাস্তায়, মোটরে সর্বত্রই নজরে পড়ে। এদেশে এসে অবধি একটা জিনিষ লক্ষ্য ক’রে দেখেছি যে, এখানকার বিবাহিত স্ত্রীলোকেরা কুমারীদের মতন লাবণ্যময়ী নয়। এর হেতুট বোধ করি এই যে, বিয়ের পর মেয়েদের হাট-বাজার করা থেকে স্বরু করে সব রকম খাটুনি অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় অনতিকাল মধ্যেই তাদের চেহারার লাবণ্যটুকু নিঃশেষে উবে যায়। সে যাই হোক, মোটরে ঠিক আমার পাশেই ষে তরুণী কুমারীটি বসেছেন, তিনি কিন্তু অনুপম রূপলাবণ্যবতী। গরমের চোটে শ্ৰীমতী আসমানী রঙের গাত্রাবরণ (ইনাফি ) খুলে কোমরে জড়ালেন। অনাবৃত স্বগেীর মুক্তামস্থশ অংস দেশ, গ্রীব। আর স্বডৌল বাহুদুটি যেন কোন মুনিপুণ রূপকার পাথর কুঁদে বহু আয়াসে গড়েছে। অৰ্দ্ধবৃত্তাকারে কাটা ঘনকৃষ্ণ কেশপাশ বেষ্টিত গোল মুখখান যেন মেঘে-ঢাকা পূর্ণিমার চাদের মত রহস্যবৃত ৷ টানা টানা স্বন্দর চোখ দুটিতে বনহরিণীর মত চৰিত দৃষ্টি। ডান গালে, ছোট একটি কালো তিলও নজরে পড়ল। মণিপুরে যদি তেমন সৌন্দৰ্য্য-পিয়াসী কবি কেউ থাকেন, তা হ’লে এই তিলটির বদলে তিনি যে অকাতরে ইম্ফলের রাজসিংহাসন দিয়ে দিতে রাজী হবেন, তাতে তিলমাত্ৰও সংশয় নেই। তরুণীর সৌন্দৰ্য্য নিরীক্ষণ সমাপন করে অবশেষে পথদৃশ্বের প্রতি মনোনিবেশ করা গেল। দু-ধারে দিকচক্রবাল পৰ্য্যন্ত প্রসারিত, কোথাও হিরণবরণ কোথাও বা মরকতহরিৎ ধানের ক্ষেতে শরতের সোনালী রোদের ঝলমলানি ।