পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ஆஇ ভীষণ মূৰ্ত্তি ! হাড়ির মত প্রকাও মাথা, মাথায় ঝাকড়ঝাকড়া চুল, আলকাতরার মত কাল রং, নাকট থ্যাবড়া, চোখ দুইটা আমড়ার অাটির মত গোল এবং মোট, দুই গালের থলথলে মাংস খানিকটা করিয়া চোয়ালের নীচে ঝুলিয়া পড়িয়াছে। মুখগহ্বরের পরিধি আকর্ণ বিস্তৃত, সেই মুখগহবর মেলিয়া বড় বড় দাত বাহির করিয়া সে হাসিতেছিল—দেখিয়া পাৰ্ব্বতী সভয়ে ছুটিয়া পলাইল। ভালুক তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাড়াইয়া ডাকিল— ও খোকাবাবু-ও খোকাবাবু! পাৰ্ব্বতী একবার দাড়াইয়া ফিরিয়া চাহিল। ভয় অপেক্ষা বিস্ময়ের মাত্র তাহার অনেক গুণ অধিক হইয়া উঠিয়াছিল। এত লম্বা এত মোট। আর এত কাল লোক সে কখনও দেখে নাই ! সমস্ত গ৷ বহিয়া কাল আঠার মত কি ঝরিতেছে ! বুকও গুর গুরু করিতেছিল--ভালুক, না ভূত ! না তার চেয়েও বেশী মেলে গয়লাদের কাদামাখ। মহিষগুলার সঙ্গে ! লোকটা একখানা বাতাসাহাতে তুলিয়া তখনও তেমনি হাসিতে হাসিতে ডাকিতেছিল—পেসাদ--পেসাদ–শিবের পেসাদ । পাৰ্ব্বতী সভয়ে তাহাকে লক্ষ্য করিতেছিল—ভালুকের কথা শুনিয়া সে দুই পা পিছাইয়া গেল। ভালুক এবার কয় প৷ তাহার দিকে আগাহয়া আসিয়া আরও খানিকটা বেশী হাসিয়া বলিল—ভয় কি খোকাবাবু, এস– । পাৰ্ব্বতী নিমেষের মধ্যে পিছন ফিরিয়া ছুটিল এবং পথপাশ্বের জঙ্গলের আড়ালে অদৃগু হইয়া গেল। ভালুক হাসিতে হাসিতে ঘাটে ফিরিয়া নৈবেষ্ঠের পুটুলীটা খুলিয়া বসিল । সমস্তমৃদ্ধ গামছাট জলে ভিজাইয়া লইয়া চাল কলা ও বাতাসায় মাখিয়া প্রকাণ্ড বড় বড় গ্রাসে অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যে শেষ করিয়া ফেলিল। উচ্ছিষ্টলোভী কয়টা কাক দূরে বসিয়াছিল, শূন্ত গামছাখানা সে বার-কয়েক তাহাদের দিকে সজোরে ঝাড়িয়া দিয়া বলিল—ওই লে— ওই লে! তার পর গামছাখানা জলে কাচিয়া লইয়া ভালুকের পোষাক ঘাড়ে ফেলিয়া সে পথ ধরিল । ডোম-পাড়ায় পৌছিয়া একটা বাড়িতে ঢুকিয়া ডাকিল—ভোবন—আজ যে মজ, বুঝলি কি না । ‘ভোবন’ অর্থাৎ ভুবনমোহিনী ঘরের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া বলিল—জালাস না আমাকে আর— প্রবাসী SNご8。 আপন জালাতে বলে ম’লাম আমি । ভাতের হাড়িট নাম দেখি ! ভুবনমোহিনী ওই লোকটিরই যেন ছায়া বা দর্পণের মধ্যের নারীরূপিণী প্রতিবিম্ব । আমনি কাল, অমনি দৈর্ঘ্যে, অমনি পরিধিতে, তাহার উপর মাথায় সম্মুখেই সিখী জুড়িয় এক টাক—প্রকাও বড় মুখের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র দুইটি চোখ, লম্বা নাক, তাহার উপর উপরের ঠোঁটের এক পাশের খানিকট মাংস নাই, সেদিক দিয়া দুইটা দাত নীচের ঠোঁটেব উপর চাপিয়া বসিয়া আছে । ভালুকের পোষাকটা ঘাড় হইতে ফেলিয়া পুরুষটি ভাতের হাড়ি নামাইতে চলিল । ভূবন বলিল—আমার মাথা বলে খসে গেল। ওষুদ্র নাই পত্তর নাই আর বঁচিব না আমি । ও মা ! পুরুষটি কোন উত্তর দিল না, কোথা হইতে একটা পোড় বিড়ি বাহির করিয়া উনানের আগুনে সেটাকে ধরাইতে বসিল। ভূবন তাহার কাছে আসিয়া বসিয়া বলিল—তু ঘরে বসে থাকবি কেনে বল ? এক মেয়েমানুষ আমি কত রোজকার করব ? ভালুক নিজের কুমুইটা দেখিতে দেখিতে বলিল—তাই বলি জলছে কেনে ? মাস ছেড়ে গিয়েছে, দলকাছাড়া’ হয়ে । তার পর ভূবনের দিকে চাহিয়া বলিল—বাবুদের ওই খোট্টা চাপরাশী—বেটা আচমকা অামাকে চেপে ধরে কায়দা ক'রে ফেলিয়েছিল আর টুক্‌চে হ’লে ! ভুবন বলিল—“ত্যাল লাগা খানিক। বলিয়াই সে মাটির উপর গুইয়া পড়িল—আঃ, গা-গতর যেন টিকিতে কুটুছে! বাবা—! ভালুকের কথা তখনও শেষ হয় নাই, সে বলিতেছিল— তেমনি দিয়েছি বেটাকে ঠিক ক'রে—আমাকে পারবে কেনে বেটা—আমার ক্ষ্যামতায় আর— মুখের কথা কাড়িয়া লইয়া ভুবন বলিল—তাইত বলছি— ওই ক্ষ্যামতায় খাটলে যে রোজকার হয়! আচ্ছ, কেন খাটিস না বল দেখি ! ভালুক বলিল—উ গায়ে একটি কি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে —বুঝলি ভোবন—