পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯২ ধস করিয়া অধিবাট খানিকটা মশলা পাথরের রেকবীত তুলিয়া দিয়া আর দুৰ্ম্ম দুৰ্ম্ম করিয়া দুই ঘড়া জল মেঝেয় বসাইয়া দিয়াই সে খালাস। কটা মাছ কুটিয়া দিতে বলিলে বলিব, “আজ ষাপু, সব বাড়িতেই রোববারের হ্যাঙ্গাম, আমার অবসর কোথায় ?” সে ত বলিবেই, মাহিন-করা ঝি, কেন বাদী ত অীর নয় । পরের জষ্ঠ ভাবিতে যাইবে কেন ? তুমি মর না তোমার হেঁসেলের ভিতর পচিয়া, তাহার কি গরজ পড়িয়াছে তোমার পিছনে ঘুরিতে ? মেয়েটা দশ বছরের হইয়াছে, কাজকৰ্ম্ম করাইলেই কিছু কিছু করিতে পারিত ; তা গৌরীর একটু মুখ যাহাঁতে হয়, সংসারের কাহারও কি তাহীতে সহে ? আমনি চোথ টাট,ইতে থাকে বাপ-কাকীতে পরামর্শ করিয়া বিবি মেয়কে ইস্কুলে ভৰ্ত্তি করা হইল—পড়িয়া মেয়ে টোল খুলিবেন কি না ? মাষ্টারণীর রবিবারে যত অঙ্ক আর লেখার গাদা করিতে হুকুম করিয়া দেন, মেয়ে সারাদিনই খাতাকলম লইয়। তাই করিতেছেন ৷ শ্বশুরবাড়ি হইলে থfতা কলম সবই ত উনানে ফেলিয়া দিতে হইবে, তবু সে-কথা বাবুসাহেবদের সামনে উচ্চারণ করিবার জো নাই । য’ক, ওঁ-সব কথা বেণী না ভাবাই ভাল ; যাহাঁদের মেয়ে তাহারা যাহা ভাল বুঝিবে তাঁহাই করিবে। মা ত ছেলেমেয়ের কেহই নয়, কেবল দশ মাস গর্ভে ধরিত আর বুকের দুধ দিয়া মানুষ করিতে তাহার প্রয়োজন । ভাত-কাপড়ের টাকা দিবীর ক্ষমতা যখন তাহার নাই, তখন ছেলেপিলের ভাল-মঙ্গর কথা বলিবার তাহার কিসের অধিকার ? মুখ বুজিয়া থাটিয়া মরিবার জন্ত স্ত্রীলোকের জন্ম, যত দিন হাত-পা আছে, থাটিয়াই মরিতে হইবে। আপনার মনে সাত-পাচ ভাবিতে ভাবিতে গৌরী আপনিই রাগিয়া উঠিতেfছল। বার মাস ত্রিশ দিন এমনি করিয়া ঘরের কোণে সংসারের ঘানিতে চোখ বাধিয়া ঘুরিয়াই তাহার কাটে, তবু ইহাকে নিৰ্ব্বিচারে মানিয়া লইতে সে পারে না । কেহ তfহার আপত্তি ও অসস্তোযের কথা কানে তুলুক বা নাই তুলুক, যাহা বলিবার সে চিরকালই বলিয়া আসি তছে । এই বে এতবড় কলিকাতা শহর, ইহারই বুকে সে SNご8ー জন্মিয় ত্ৰিশটা বৎসর কাটাইল ; কিন্তু বলিলে কেহ কি বিশ্বাস করিবে যে কলিকাতার কিছুই সে দেখে নাই ? লোকের মুখে শুনিয়াছে বট যে এখানে চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, পরেশনাথ, শিবপুরের বাগান, গড়র মাঠ আর আরও কত fক আছে । কিন্তু নিজের এই পোড়াচক্ষু দুটি দিয়া সে কিছুই দেখে নাই । মা থাকিতে একবার কালীঘাটে দর্শন করিতে গিয়াছিল বটে, কিন্তু লোকের ভীড়ে ঠেলাঠেলিতে ভয়ে সে কিছুই দেখিতে পায় নাই। মাঝে হইতে কে একটা অসভ্য লোক তাহার হাত ধরিয়া টানিয়াছিল, শ্বশুরবাড়িতে জানজানি হইবার ভয়ে মা পিসিম লোকটাকে একটা উচুগলীয় কথাও বলিলেন না। বাড়ি আসিতে বাবা রাগিয়া বলিলেন, “ইহজন্মে আর মেয়েকে তোমাদের সঙ্গ পাঠাব না কোথাও ।” সে অনেক দিনের কথা, কিন্তু বাস্তবিকই তাঁহার পরজীবন নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে কুটুমবাড়িতে ছাড়া সে আর কোথাও যায় নাই । যাহা না দেখিয়াছে তাহার জন্ত তাহার খুব দুঃখ নাই, কিন্তু যাহা অহয়হই দেখে অথচ কাছ হইতে ভাল করিয়া দেখিতে পায় না তাহীর জন্ত প্রায়ই আপশেষ হয় । ওই যে বাতাগের মুখে হাউইএর মত জোরে মোটর-গাড়ীগুলা বঁাশী বাজাইয়া ছুটিয়া যায়, গহনাকাপড়-পরা মেয়ের তাহার ভিতর হাসিয়া কথা কহিতেছে, এক মুহূর্তের মত আবছায় একটুখানি চোখে পড়ে, ওই গাড়ী গুলিতে চড়িতে গৌরীর বড় ইচ্ছা করে । স্বামীকে কত দিন একথা সে বলিয়াছেও, “হ্যাগ, খুব কি পয়সা লীগে ওই গাড়ীতে চড়তে ? আমার বড় সাধ যায় একবার অমনি গাড়ীতে হুস ক’রে সারা শহরটা বেড়িয়ে আসি।” স্বামী বলেন, "পয়সা ত লাগেই ; যাদের পয়সা আছে তারা কি আর ভাড়া ক’রে চড়ে ? গাড়ী কিনেই চড়ে । ভাড়া মোটরে যাদের দেখ, তারা ভদ্রমেয়ে নয় ।” কিন্তু কথাটা তাহার বিশ্বাস হয় না। পাড়াপড়ণীদের মুখে কি আর কোন কথাই সে শুনিতে পায় না ? এই ত সেদিনই চন্দ্রা বলিতেছিল, বড়লোকের বাড়ি নিমন্ত্রণ থাকিলে তাহার মোটরে ছাড়া কখনও বায় না । স্বামী যদি পয়সা খরচ করিতে না চান, নাই করিবেন । কিন্তু ছাদে উঠিলে বড় রাস্তায় ওই বে ট্রাম গাড়ীগুলা যাইতে দেখা যায়,