পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ বাকিটা টানিয়া ছিড়িয়া ফেলিল। তার পর পুরানো পাড় হইতে তোলা লাল স্থতা দিয়া সেই দুইটাকে সেলাই করিয়া মেয়ের ভদ্র পরিচ্ছদের সমস্যা মিটাইল । তেীয়ালে বলিয়া বাড়িতে কোন পদার্থনাই,জোলার একখানা গামছা আছে, তাহাতেই বাড়িমৃদ্ধ স্নান ও কর্তার রবিবারের বাজার করার কাজ চলিয়া যায় । রাণীদিদির ছেলেরা আবীর পরের গামছার স্নান করে না । কাজেই বিছানার চাদরের ছেড়া টুকরাটা পাশ মুড়িয়া এই সঙ্গে দিয়া দিতে হইবে । বড়মানুষের বাড়ি এক বেলা থাকিতেও এক মাসের ব্যবস্থা দরকার । ভাগ্যে গৌরীর সাবান একখানা ছিল, না হইলে সাবান কিনিতে আবার পয়সা বাহির করিতে হইত। গৌরীর নিজের ব্যবস্থাও একটু করা দরকার। স্বানের গামছাখানা একদিনের মত সে-ই লইয়া যাইবে, ছেলের ঠাকুরপোর গামছায় একদিন মাথা মুছিয়া লইলে সে নিশ্চয়ই মারিতে আসিবে না । স্নানের পর পরিবার জন্ত একখানা ভাল কাপড় ত চাই,—কত ভাল ভাল জায়গায় লোকজনের সঙ্গে ঘুরিতে হইবে ত । চৌদ্দ বৎসর আগে ম পূজার সময় একখানা হাতী ও মাছ পাড়ের মাজাজী শাড়ী দিয়াছিলেন তাহার এক দিকের পাড় বেগুনী, একদিক লাল। কাপড়খানা গৌরীর ভারী পছন্দ ছিল । কোথাও যাওয়া-আসা প্রায় নাই বলিয়া বেশী পরা হয় না । সেইখানাই গামছার মধো জড়াইয়া লইয়া যাইবে, পাচ জনের মধ্যে পরিবার মত শ্ৰী সেখানার এখনও আছে । রাত্রে গৌরীর চোখে ঘুমই প্রায় আসিল না। যত বারই ক্লাস্তিতে ঘুমাইয় পড়ে, তত বারই চমকিয়া ঘুম ভাঙিয়া যায়, কখন বুঝি ভোর হইয়া যাইবে । ভোরবেলা গোয়ালার কাল আসিবার কথা, দুধ জাল দিয়া একবার ছুটুকীকে পেট ভরিয়া খাওয়াইয়া যাইতে হইবে, তার পর দুটো মেয়েকেই একটু মাজিয়া-বলিয়া তবে ত রাণীদির বাড়ি পৌছাইরা দিবে। শীতকালের বেলা, সাড়ে সাতটা না-বাজিতে গাড়ী আসিয়া পড়িবে। সকালে সাতটার সময় গৌরী যখন মেয়েদের রাণীর বাড়ি দিয়া আসিল, তখনই তাহারা স্নানধাত্রার উদ্যোগ করিতেছে। Nరి छूर्छि మ^ তাহার। সকাল-সকাল স্নান সারিয়াই ফিরিয়া আসিবে, বেশী ভীড়ের সময় থাকিবে না, বাড়িতে একেবারে কচি মেয়ে t তাহাদের বাড়িটা বড় রাস্তার প্রায় ধারেই, গৌরী বারাও দিয়া দেখিল সারা কলিকাতার লোকই প্রায় ইতিমধ্যে পথে বাহির হইবার উপক্রম করিতেছে । অনাবৃত দেহ পুরুষ ও মলিনবস্ত্রা নারীর ভীড়ে পথ ভরিয়া গিয়াছে। হারাইয়। যাইবার ভয়ে দূর গ্রামের মেয়েরা এখন হইতেই আঁচলে আঁচলে গিরো বাধিয়া চলিয়াছে। একটা ধোড়ার গাড়ী দেখিলেই চাপা পড়িবার ভয়ে ইটুির কাপড় তুলিয়া দিগ্বিদিকে ছুটিতেছে। এক দল ছেলে লাল উদ্ধি পরিয়া গলির মুখে মুখে ঘুরিতেছে, দুই-একটা লরিতে কাহারা যেন লুচি ও বোদে বোঝাই করিয়া লইয়া চলিয়াছে, দেখিয়া মনে হয় মাড়োয়ারী। গৌরীর ধাড়াইয়া দাড়াইয়া দেখিবার আর একটু ইচ্ছা ছিল, কিন্তু কখন গাড়ী আসিয়া পড়িবে, আসল দেখাই হইবে না, এই ভাবিয়া তাড়াতাড়ি সে বাড়ি চলিয়া গেল । গৌরীকে খিড়কির দরজায় দেখিয়াই শঙ্কু বলিল, “ওগো, আজকের রবিবারে ত আর বাজার করা নেই, তোমার ত আছ অরন্ধন । কাপড়-জামাটা নিয়ে পথেই বেরোনো যাক, ভীড় দেখাও হবে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে স্নানটাও হয়ে যাবে। তুমি ছেলেগুলোকে বলে দিও তুমি যাবার পর যেন বাড়ির দরজা বন্ধু ক’রে রাখে। আজ খালি শহর পেয়ে চোর-ছ্যাচড় অনেক এদিক-ওদিক ঘুরবে ।” শঙ্কু কাপড় লইয়া বাহির হইয়া গেল। গৌরী একবার ঘর ও একবার বাহির করিতে লাগিল । র;প্লাঘরের উনানে আগুন নাই, মেঝের বসিয়া ছুটুকী কাদিতেছে না, লাৰি তাহার পিছন পিছন আঁচল ধরিয়া ঘুরিতেছে না, দিনট; যেন কেমন কিভূতকিমাকার ঠেকিতেছে । এমন একেবারে বিনা-কাজে মানুষ দিন কাটায় কি করিয়া ? আধ ঘণ্টাতেই ত গৌরী ছাপাইয়৷ উঠিতেছে। রাণীদি চন্দ্রীরাও বাড়ি নাই ষে খানিক ক্ষণ গল্প করিয়া আসিবে । ছাদে উঠিয়া ভীড় দেখিলেও চলিত, কিন্তু গাড়ী আসিয়া ফিরিয়া যাইবার ভয়ে সেখানেও যাওয়া চলিবে না । গাড়ীটা কোনো রকমে আসিয়া পড়িলে সব গোল চুকিয়া যায়। সাড়ে সাতটা