পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ --বাবা, এখানে এসেও গান গাইতে হবে । —গাও না প্রতিমা । উমা ও অরুণ নদীর জলের কাছাকাছি পৌছিল । তীরে এক বৃহৎ বৃক্ষ । উমা গাছের তলায় গুড়িতে ঠেস দিয়া বসিল । অরুণ কিছু দূরে দাড়াইয়া রহিল । —ব’সো না অরুণ । অরুণ একটু দূরে বসিল । —ওই ধুলোর বসে না, না-হয় এখানেই বসলে, ক্ষয়ে যাবে না—কি সুন্দর, গঙ্গা যে এত সুন্দর আমি জানতুম না । —তুমি ত আসতে চাইছিলে না। --আচ্ছা, বেশ ; মেনি থ্যাঙ্কস, আমার কি ইচ্ছা করে জান, গঙ্গার ধারে এমনি একটি ছোট বাংলো ক’রে থাকতে । ওপারে আবছায়াময় তীরে ঘননীল মেঘের স্নিগ্ধ যবনিক সরাইয়া দীপ্ত স্বৰ্য্য প্রকাশিত হইল, নদীর জলধারা আলোকরশ্মিতে ঝলমল করিয়া উঠিল, মৃদু বাতাস বহিতেছে, চারিদিকে মায়াময় অfলো । উমার কিশোরী মুখের ডৌল অপরূপ লাবণ্যে উদ্ভাসিত, চক্ষে অপুৰ্ব্ব দীপ্তি নিষ্কাষিত আসিলতার মত, কণ্ঠে কি আবেগময় মুর আসিল, প্রতিদিনের জানা উমার চারিদিক হইতে কোন স্বপ্ন-ধবনিকা খসিয়া পড়িয়া গেল, এ আনন্দস্পন্দিত জ্যোভিঃলতা যেন কোন অপরিচিত । সৌহার্দোর কণ্ঠে উমা ডাকিল, অরুণ ! —বেশ ভাল লাগছে ? —কি জানে, মনে হচ্ছে এই সুন্দর দৃশু আমি যেন কোন স্বপ্নে দেখেছি, এ যেন আমার জীবনের স্বপ্ন, এমনি গাছের স্নিগ্ধ ছায়া, নদীর নিৰ্ম্মল ধারা, তার তীরে একটি ੋੜ মেহের নীড়ের মত, তার ওপর তরুরেখা-ঘেরা উদার আকাশ, সুৰ্য্যালোকে ভর উজ্জ্বল দিন, তারাভর শীতল রাতি, প্রেমময় শাস্ত জীবনধারা এই গঙ্গার সুনিৰ্ম্মল স্নিগ্ধ স্রোতের মত, স্বপ্নের মত বহিয়া যাবেদুই জনে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। নদীর বক্রিম রেখার মত রেশমের শাড়ীর লাল পাড় কালে চুলে লুটাইয়া পড়িয়াছে, কয়েকটি চূর্ণকুন্তল চোখে-মুখে উড়িয়া আসিতেছে ; ওপারের তীরভূমির প্রতি উমা উদাস দৃষ্টিতে চাহিয়া । >8 জীবনায়ন e(7 অরুণের মনে হইল এই শরৎ অপরাহ্লের সোনার আলোয় বঙ্গমাতা এক কিশোরীর রূপ ধরিয়া গঙ্গার নির্জন তীরে বৃক্ষচ্ছায়ার মধুর উদাসিনী বসিয়া কোন ভাৰী মুখশাস্তিপুর্ণ সোনার যুগের স্বপ্ন দেখিতেছে। উমা যেন বাংলা দেশের প্রতিরূপ । উমা হাসিয়া বলিয়া উঠিল, বড় কবিত্ব হয়ে যাচ্ছে—নয় —তুমি ত কবিতা লেখ । অরুণ চমকিয়া বলিল, কে বললে ? —আমি জানি, আজকে, এই সন্ধ্যাটি বর্ণনা ক’রে একটি কবিতা লিখে । –এ যে অবর্ণনীয়, কথায় আমরা কতটুকু প্রকাশ করতে পারি, আমাদের হৃদয়ের গভীর আশা বলতে পারি কি ? —ঠিক বলেছ, আমাদের হৃদয়ের গভীর আনন্দের বেদনার বুঝি ভাষা নেই । পশ্চিমাকাশের কাঞ্চনবর্ণ মেঘপুঞ্জের আড়ালে স্বৰ্য্য অস্ত গেল। নদীর জল রাঙিয়া উঠিয়াছে । উমা লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, চল, ওঠ, খুব কবিত্ব করা গেল । ওরা বোধ হয় ভাবছে, আমরা কোথার হারিয়ে গেলুম। o, অরুণ বলিল, সত্যি তুমি এমনি নদীর তীরে একটি কুটীরে থাকতে চাও ? হাসিয়া উমা বলিল, কি পাগল, সাধে কি তোমায় কবি বলে, জীবনটা স্বপ্ন নয় বুঝলে ! আবার সেই প্রতিদিনের জানা উমা । অরুণ ভাবিল উমা তোমায় কোনদিন বোধ হয় বুঝিতে পারিব না । সে নীরবে চলিল । R স্বপ্নের মত ছুটি শেষ হইয়া গেল। আবার স্কুল, একটানা পড়া, কেবল পড়া, একঘেয়ে জীবন । নাকু অমুখ হইতে সারিয়া আসিলেন ; তাহার স্বভাৰ আরও রুক্ষ, তাহার দৃষ্টি আরও তীক্ষ হইয়াছে। বৃন্দাবনও দীর্ঘদিন অসুখে ভুগিয়া আসিল । সে রোগ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু ক্লাসের ছেলেরা তাহাকে ভুদো’ বলা ছাড়িল না ।